06/12/2025
অসুখ হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে কিন্তু কোন ধরনের সমস্যায় কোন বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে, তা নিয়ে দ্বিধায়ও পড়েন কেউ কেউ।
একজন মানুষের নানান রকম শারীরিক সমস্যা হতে পারে, আবার একই সময়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় সমস্যা হতে পারে। আপনি জানেন না, আপনার কি রোগ হয়েছে, আপনি আপনার শারীরিক কষটগুলো চিকিৎসককে জানানোর পর আপনার রোগ নির্ণয় হবে। বুঝে উঠতে পারছেন না, কোন সমস্যা নিয়ে কার কাছে গেলে সমাধান পাবেন?
কারও মাথা ঘোরানোর কারণ হলো রক্তচাপ, কারও রক্তশূন্যতা আবার কানের সমস্যায়ও মাথা ঘোরায়। আপনি তাহলে যাবেন কার কাছে? মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ না কি নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ? আবার একজন রোগীর যে কেবল একটি উপসর্গই থাকে, তা–ও নয়। একাধিক উপসর্গের প্রতিটির জন্য কি তাহলে আলাদা আলাদা চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?
ঘাবড়াবেন না। সমস্যায় না পড়ে যেন সহজে বুঝতে পারেন, কোন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, তার জন্যই এই লেখা।
১| হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক : যদি হঠাৎ করে প্রচণ্ড পেট ব্যথা, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি, হঠাৎ জ্ঞান হারানো, কোনও অঙ্গ অবশ হয়ে পড়া, মুখ বেঁকে যাওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া, প্রস্রাব-পায়খানার নিয়ন্ত্রণ হারানো, প্রস্রাব আটকে যাওয়া, প্রচুর বমি বা ডায়রিয়া, আঘাত পাওয়া বা শরীরের হাড় ভাঙা, অস্বাভাবিক রক্তপাত,
রক্তবমি কিংবা আকস্মিক দুর্ঘটনা, বিষক্রিয়া ইত্যাদি হয়, তাহলে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে হবে শুরুতেই। এসব পরিস্থিতিতে দ্রুত হাসপাতালের জরুরি বিভাগের শরণাপন্ন হতে হবে। গভীর রাত কিংবা ছুটির দিনেও জরুরি সেবা অব্যাহত রাখেন চিকিৎসকেরা। পরবর্তীতে চেকআপের প্রয়োজন হলে নির্দিষ্ট বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাওয়া যেতে পারে।
২| মেডিসিন বিশেষজ্ঞ- মেডিসিন বিশেষজ্ঞ দেহের প্রতিটি অংশের চিকিৎসা দিতে পারেন (সার্জারি বা অপারেশন বিষয়াদি বাদে)। জ্বর, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, কাশি, পেটব্যথা ইত্যাদি নানাবিধ উপসর্গ নিয়েই তাঁদের কাছে যাওয়া যেতে পারে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হলেন একজন ডাক্তার যিনি যেকোনো রোগের প্রাথমিক অবস্থা নির্ণয় ও চিকিৎসা করে থাকেন। তবে প্রয়োজনে তাঁরা আপনাকে নির্দিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠিয়েও দিতে পারেন।
২| গ্যাস্ট্রোলজি, হেপাটোলজি বা লিভার বা যকৃৎ বিশেষজ্ঞ- জন্ডিস, গ্যাসের সমস্যা, পেট ফোলা, হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস, লিভার সিরোসিস, খাদ্যনালি/ পাকস্থলীতে ক্ষত বা ঘা, ক্ষুধামন্দা বা খাবারের অরুচি, লিভারে চর্বি ও পেটের সকল ধরনের পীড়াদায়ক রোগে যেমন- পেটব্যথা, অ্যাসিডিটি, বমি, পাতলা পায়খানা, রক্তবমি, পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া কিংবা কালো পায়খানা হলে এই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন। কোনো কারণ না থাকা সত্ত্বেও যদি অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে, তাহলে এন্ডোস্কপি এবং কোলনস্কপি পরীক্ষার জন্যও আপনাকে পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হতে পারে।
৩| বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ- অ্যাজমা বা হাঁপানি, শ্বাসকষ্টজনিত বুকে ব্যথা, নিউমোনিয়া ও দীর্ঘদিন যাবত কাশি, ফুসফুসে পানি জমা ইত্যাদি ছাড়াও ফুসফুসের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য রোগের জন্য এই ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য যাওয়া যেতে পারে।
কেবল ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাতেই শ্বাসকষ্ট হয় না। হৃৎপিণ্ডের সমস্যা বা রক্তশূন্যতার রোগীও একপর্যায়ে শ্বাসকষ্টে ভুগতে পারেন। তাই বক্ষব্যাধি চিকিৎসক আপনাকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর প্রয়োজনে হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ কিংবা রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের কাছেও যেতে বলতে পারেন।
৪| কার্ডিওলজিস্ট বা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ- হার্ট বা হৃৎপিণ্ডের যেকোনো সমস্যার জন্য হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে হবে। যেমন হার্ট অ্যাটাক, বুকে ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন), হার্ট ফেইলিওর, বুক ধড়ফড় করা ইত্যাদি।
হৃদ্রোগের জন্য হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ (কার্ডিওলজিস্ট) যেমন রয়েছেন, তেমনি হৃৎপিণ্ডের অস্ত্রোপচারের জন্য কার্ডিয়াক সার্জনও রয়েছেন।
৫| নিউরোলজিস্ট বা নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ- স্ট্রোক, মাথা ব্যথা ও মাথা ঘোরা, মাইগ্রেন, মুখ বেঁকে যাওয়া, হাত-পা ঝিন ঝিন করা ও অবশ হয়ে যাওয়া, হাত-পা কাঁপা, ঘাড়, কোমর ও মেরুদণ্ডের ব্যথা, হাত ও পায়ের শক্তি কমে যাওয়া, খিঁচুনি/ মৃগী রোগ, হাত ও পা এর মাংসপেশী শুকিয়ে যাওয়া এবং শরীরের যেকোনো অঙ্গের প্যারালাইসিস ইত্যাদি সমস্যার জন্য এই ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন।
৬| এন্ডোক্রিনোলজিস্ট- যদি কারোর ডায়াবেটিস, হরমোন সংক্রান্ত সমস্যা, মাসিক অনিয়মিত হলে, থাইরয়েড রোগ থাকে তবে একজন এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ডাক্তারকে দেখাতে পারেন।
৭| হেমাটোলজিস্ট বা রক্ত বিশেষজ্ঞ- রক্ত ও অস্থিমজ্জা সম্পর্কিত রোগের জন্য এই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন।
৮| পেডিয়াট্রিশিয়ান বা শিশু বিশেষজ্ঞ- শিশুদের যেকোনো রোগের ক্ষেত্রে শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে আপনার শিশুকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে পারেন। শিশুদের কিডনির রোগ, স্নায়ুরোগ, রক্তরোগ, সার্জারি প্রভৃতির জন্যও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন।
৯| নিওনেটলজিস্ট- একজন বাচ্চার বয়স যদি ৪ সপ্তাহ অর্থাৎ ১ মাসের কম হয় তবে তাকে নবজাতক বলা হয়ে থাকে। এই অবস্থায় কোনো সমস্যা দেখা দিলে নবজাতক বিশেষজ্ঞের কাছে বাচ্চাকে নিয়ে যেতে পারেন।
১০| চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ- যাকে মেডিক্যালের ভাষায় বলা হয় ডার্মাটোলজিস্ট। মূলত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা ত্বক, নখ এবং চুলের সমস্যার রোগীদের দেখে থাকেন। যেমন চুলকানি এক্সিমা, ব্রণ, মেসতাসহ ত্বকের কালো দাগ, সকল ধরনের অ্যালার্জি সমস্যা, মহিলাদের ত্বকে অস্বাভাবিক ছাপ (যেমন মুখে অবাঞ্ছিত লোম, দাগ)। এই সমস্যাগুলো ছাড়াও যদি চামড়া সম্পর্কিত কোন রোগ হয় অথবা যৌনাঙ্গে কোন রোগ হয়, তাহলে চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন।
১১| সাইকিয়াট্রিস্ট বা সাইকোলজিস্ট বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ- বিভিন্ন মানসিক সমস্যার চিকিৎসা ও পরামর্শ নেওয়্যার ক্ষেত্রে এই চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেন।
১২| সার্জারি বিশেষজ্ঞ- যিনি অপারেশনের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করেন তাকে সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বলা হয়। যেমন পিত্তথলির অপারেশন, অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশন, পাইলস ও ফিস্টুলা অপারেশন, কিডনিতে পাথর এমন সকল সমস্যার জন্য সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে হয়।পাঁজরে আঘাতের জন্য প্রয়োজন থোরাসিক সার্জন।
১৩| রিউমেটোলজিসট, অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ- হাড় সম্পর্কিত রোগের জন্য যেমন পা ভাঙা, হাড় জোড়া, হাড় ক্ষয়, হাড় মচকানো, হাড়ে টিউমার, হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা এছাড়াও হাঁটুতে ব্যথা, পঙ্গুত্ব, বাত ব্যথাসহ শরীরের হাড়ের সব ধরনের চিকিৎসার জন্য এই ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে যেতে পারেন। জয়েন্ট আক্রান্ত হয়, এমন নির্দিষ্ট কিছু রোগের জন্য রিউমাটোলজিস্টের কাছেও যেতে হতে পারে।
১৪| ইউরোলজি ও কিডনি বিশেষজ্ঞ- একজন ইউরোলজি ও কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মানুষের মূত্র সংবহনতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করে থাকেন। যেমন- প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে বা বেড়ে গেলে, মুখ ফুলে গেলে, মূত্রনালীর রোগ, প্রসাবে ইনফেকশন, মূত্রথলি বা কিডনিতে পাথর, মূত্রনালী ও মূত্রথলিতে প্রদাহ, প্রসাবে জ্বালাপোড়া ইত্যাদি। এ সকল রোগের জন্য নেফ্রোলজিসট এবং ইউরোলজি বিশেষজ্ঞের কাছে চিকিৎসার জন্য যাওয়া যেতে পারে।
১৫| নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ- নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞকে মেডিক্যালের ভাষায় ইএনটি স্পেশালিস্ট ডাক্তার বলা হয়। নাকের পলিপাস, নাকের মাংস বৃদ্ধি হওয়া, কানে কম শোনা, কান দিয়ে পানি পড়া, গলা ও মুখে ঘা ইত্যাদি অর্থাৎ নাক, কান ও গলা সম্পর্কিত রোগের জন্য এই বিভাগের ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন।
১৬| স্ত্রী রোগ বা প্রসূতি বিশেষজ্ঞ- যাকে মেডিক্যালের ভাষায় গাইনোকোলজিস্ট বলা হয়ে থাকে। মেয়েদের সকল প্রকার রোগের চিকিৎসায় এ ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন। যেমন অনিয়মিত ঋতুস্রাব, জরায়ু সমস্যা ও জরায়ু টিউমার, স্তনে সমস্যা, বন্ধ্যাত্ব ও বাচ্চা ধারণে অক্ষমতা, গর্ভবতী অবস্থায় সেবা ও ডেলিভারি, সিজারিয়ান সেকশন ইত্যাদির জন্য।
১৭| অনকোলজিস্ট- কারোর ক্যানসার ধরা পড়লে তাদের জন্য আলাদা বিশেষজ্ঞ রয়েছেন যাদের বলা হয়ে থাকে অনকোলজিস্ট বা ক্যানসার বিশেষজ্ঞ।
১৮| ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ- শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথার জন্য যেতে পারেন ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞের কাছে (ফিজিওথেরাপিস্ট নয়)।
কোন বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন, তা বুঝতে না পারলে আপনার নিকটস্থ এমবিবিএস চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনি আপনাকে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দিয়ে বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠিয়ে দেবেন।
#স্বাস্থ্যটিপস