25/10/2025
নিশ্চয়ই! এলার্জি একটি অতি পরিচিত এবং প্রায়ই বিরক্তিকর স্বাস্থ্য সমস্যা। আসুন এলার্জি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
এলার্জি কী? (What is Allergy?)
এলার্জি হল আমাদের ইমিউন সিস্টেমের (রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার) একটি অতিসংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া। সাধারণত ক্ষতিকর নয় এমন বহিরাগত কোনো পদার্থ (যেমন: ধুলা, পরাগরেণু, কিছু খাবার) শরীরে প্রবেশ করলে আমাদের ইমিউন সিস্টেম সেটিকে ক্ষতিকর ভেবে অতিমাত্রায় যে প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেটিই এলার্জি।
এই ক্ষতিকর ভাবা পদার্থটিকে বলা হয় অ্যালার্জেন (Allergen)।
এলার্জির সাধারণ লক্ষণগুলি কী কী? (Common Symptoms of Allergy)
এলার্জির লক্ষণ হালকা থেকে তীব্র甚至 জীবন-threatening পর্যন্ত হতে পারে। এটি শরীরের কোথায় এবং কীভাবে প্রতিক্রিয়া করছে তার উপর নির্ভর করে।
শ্বাসতন্ত্রে (Respiratory):
· হাঁচি
· নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া বা সর্দি পড়া
· নাক, তালু, গলা চুলকানো
· কাশি
· শ্বাস নিতে কষ্ট বা বাঁশির মতো শব্দ (হাঁপানি)
চর্মে (Skin):
· চামড়ায় চুলকানি
· উঁচু ফুসকুড়ি বা দাদ (হাইভস/Urticaria)
· একজিমা
· লাল লাল দাগ
চোখে (Eyes):
· চোখ লাল হওয়া
· চোখ চুলকানো
· চোখ দিয়ে পানি পড়া
· চোখ ফুলে যাওয়া
পাচনতন্ত্রে (Digestive):
· পেটে ব্যথা
· বমি বমি ভাব বা বমি
· ডায়রিয়া
সারা শরীরজুড়ে (Severe - Anaphylaxis):
এটিএকটি জরুরি অবস্থা। লক্ষণগুলি দ্রুত দেখা দেয়:
· শ্বাসনালী ফুলে শ্বাস বন্ধ হওয়া
· জিভ বা গলা ফুলে যাওয়া
· রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া
· মাথা ঘোরা, দুর্বল বোধ করা
· হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
সাধারণ অ্যালার্জেনগুলি কী কী? (Common Allergens)
১. পরাগরেণু (Pollen): বিভিন্ন গাছ, ঘাস ও আগাছার পরাগ। এটি ঋতুভিত্তিক (হে-জ্বর)।
২.ধুলো-মাইট (Dust Mites): ঘরের ধুলোর মধ্যে থাকা ক্ষুদ্র কীট।
৩.পশুর লোম বা খুশকি (Pet Dander): বিড়াল, কুকুর বা অন্য পোষা প্রাণীর লোম/খুশকি।
৪.পোকামাকড়ের হুল (Insect Stings): মৌমাছি, বোলতার হুল।
৫.খাবার (Foods): বাদাম, চিনাবাদাম, গম, সয়াবিন, সামুদ্রিক মাছ/চিংড়ি, গরুর মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি।
৬.ওষুধ (Medications): পেনিসিলিন, অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ।
৭.ছত্রাক (Mold): স্যাঁতসেঁতে জায়গায় জন্মানো ছত্রাকের বীজ।
৮.লেটেক্স (Latex) ও রাসায়নিক দ্রব্য: রাবার, কিছু রাসায়নিক বা প্রসাধনী।
এলার্জি নির্ণয় ও চিকিৎসা (Diagnosis and Treatment)
নির্ণয় (Diagnosis):
· রক্ত পরীক্ষা (Blood Test/RAST): রক্তে নির্দিষ্ট অ্যালার্জেনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি (IgE) এর মাত্রা দেখা।
· স্কিন প্রিক টেস্ট (Skin Prick Test): ত্বকে সামান্য চিরে বিভিন্ন অ্যালার্জেন প্রয়োগ করে প্রতিক্রিয়া দেখা।
চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা (Treatment and Management):
১. অ্যালার্জেন এড়িয়ে চলা (Avoidance): এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী পদ্ধতি। কীতে আপনার এলার্জি হয়, সেটি চিহ্নিত করে তা এড়িয়ে চলুন।
২. ওষুধ (Medications): লক্ষণ কমাতে ডাক্তার বিভিন্ন ওষুধ দিতে পারেন:
- অ্যান্টিহিস্টামিন (Antihistamines): হাঁচি-চুলকানি-সর্দি কমায়।
- ডিকঞ্জেস্ট্যান্ট (Decongestants): নাকের ভিতরের ফোলা কমায়।
- নাকের স্প্রে (Nasal Sprays): স্টেরয়েড জাতীয় স্প্রে দীর্ঘমেয়াদী ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- চোখের ড্রপ (Eye Drops): চোখের এলার্জির জন্য।
- অ্যাসথমার ইনহেলার (Asthma Inhalers): শ্বাসকষ্টের জন্য।
৩. ইমিউনোথেরাপি (Immunotherapy): দীর্ঘমেয়াদী সমাধান। ধীরে ধীরে শরীরে অ্যালার্জেনের খুব অল্প মাত্রা দেওয়া হয়, যাতে শরীরের ইমিউন সিস্টেম সেটার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে শেখে। এটি অনেক বছর ধরে চলতে পারে।
৪. জরুরি অবস্থায় এপিনেফ্রিন (Epinephrine for Emergency): যাদের অ্যানাফিল্যাক্সিসের ঝুঁকি আছে, তাদের সর্বদা একটি এপি-পেন (Epinephrine auto-injector) সঙ্গে রাখা উচিত।
কিছু সহজ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা (Some Simple Preventive Measures)
· বিছানার চাদর, বালিশের কভার নিয়মিত গরম পানি দিয়ে ধুতে হবে।
· কার্পেট ব্যবহার না করা ভালো।
· ঘর নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন এবং ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করুন।
· ধূমপান ও ধোঁয়া এড়িয়ে চলুন।
· জানালা বন্ধ রেখে এসি চালানো (পরাগ মৌসুমে)।
· বাইরে থেকে এসে গা ধুয়ে ফেলা ও জামাকাপড় বদলানো।
· কোনও নতুন খাবার বা ওষুধ খাওয়ার前に সতর্কতা অবলম্বন করুন।
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
এলার্জি সাধারণ সমস্যা মনে হলেও এটি জীবনের মান কমিয়ে দিতে পারে এবং মারাত্মকও হয়ে উঠতে পারে। তাই:
· নিজে নিজে ওষুধ খাবেন না।
· লক্ষণগুলি গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
· আপনার কীসে এলার্জি সেটি নির্ণয় করান এবং সে অনুযায়ী জীবনযাপন করুন।
এলার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সচেতনতা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই আপনি একটি স্বস্তিদায়ক জীবনযাপন করতে পারবেন।