05/11/2025
‘বড় আপা জানেন আজকে আমার বিয়ে?’
হ্যাঁ জানি, এই নিয়ে চারবার বলেছিস। আর কয়বার বলবি বল?
এক কাজ কর, রাস্তার ওইপাশ থেকে একটা মাইক ভাড়া করে পুরো এলাকায় মাইকিং করে জানিয়ে দে আজকে তোর বিয়ে।।
কোকিলা মুচকি বলে আপা এই কাজটা করলে কিন্তু খারাপ হয়না। তবে নিজের মুখে নিজের বিয়ের কথা মাইকিং করা যায় বলেন?
আর একটা মাইক ভাড়া করতে কয়টাকা লাগবে আমি সেসব জানি না।
আপনি জানেন?
রুবির রাগ উঠে যায়, ইচ্ছে করছে কোকিলার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিতে।
বিয়ে নিয়ে নাচ শুরু করছে। ঘরের সবাইকে যেয়ে বলছ আজকে ওর বিয়ে, রুবির ঘরে এই নিয়ে চারবার এসে বলেছে। ভোরে ঘুম থেকে ডেকে তুলেছে।
রুবি গতরাতে এই বাড়িতে এসেছে, অবশ্য এখানে আসবার একটা কারণ আছে।
শওকতের সাথে ঝগড়া করেই এসেছে। কই এখানে এসে একটু শান্তিতে থাকবে কিন্তু কোকিলা নামের এই মেয়েটার জন্যে কিছুতেই পারছে না। একটু পর পর এসে যন্ত্রণা দিচ্ছে।
রুবি কিছু বলতেও পারছে না, আজকে মেয়েটার বিয়ে। কঠিন কথা বলে শুভ দিনে মন খারাপ করে দিতে ইচ্ছে করছে না।
কোকিলার বয়স যখন তেরো বছর তখন থেকে এই বাড়িতে কাজ করে, রুবির বাবাই কোকিলার বিয়ে ঠিক করেছে। ছেলের একটা মুদি দোকান আছে, সাথে চারটা রিক্সা ভাড়া দেয়। এসব কথা কোকিলার থেকেই রুবি শুনেছে।
রুবি এবার দরজা আটকে দেয়, কোকিলা যেনো আর না এসে বিরক্ত করতে পারে।
আপার ঘর থেকে বের হয়ে কোকিলা খালাম্মার পাশে ঘুরঘুর করে। কাজ করতে গেলে খালাম্মা বলে, কোকিলা আজকে তোর বিয়ের দিন কোনো কাজ করতে হবে না। খালাম্মার মুখে বিয়ের কথা শুনে কোকিলা লজ্জ পায়।
আছমা বেগম বলে, এতো লজ্জা পাইলে হবে কোকিলা? তুই না সাহসী মেয়ে।
কোকিলা এক দৌড়ে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে খালুর কাছে যায়।..........
বলে, খালুজান গাড়ি কখন আসবে?
কথাটা বলতেই কোকিলা ভীষণ লজ্জা পায়। জমিরউদ্দীন বলে, কিসের গাড়ি?
কোকিলা মুখ চেপে বলে, বিয়ের গাড়ি।
জমিরউদ্দীন বলে, দুপুরের ভিতরে চলে আসবে। আচ্ছা খালুজান ঠিক আছে আমি যাই তাহলে।
জমিরউদ্দীন মেয়েটাকে দেখে, বিয়ের কথা শুনে মেয়েটা কেমন প্রজাপতির মতো পুরো ঘরে উড়ছে।
কোকিলার বিয়ে ঠিক হবার পরেই জমিরউদ্দীনের সাথে বলে, খালুজান আমার একটা ইচ্ছে আছে। জমিরউদ্দীন বলে, কি ইচ্ছে?
কোকিলা বলে, খালুজান আমার ইচ্ছে একটা গাড়িতে করে বউ হয়ে যাবো। যেমন আপার বিয়ের সময় গাড়ি ছিলো।
জমিরউদ্দীন হেসে বলে, ঠিক আছে আমি একটা গাড়ির ব্যাবস্থা করবো। গাড়িতে চড়েই তোর জামাইকে নিয়ে যাবি। কোকিলা মুখ টিপে তখন হাসে।
দুপুর হয়ে যায় তবে বাড়িতে কোনো গাড়ি আসে না, কোকিলার মন রয়েছে বিয়ের গাড়ির দিকে। কখন ফুল দিয়ে সাজানো বিয়ের গাড়ি আসবে।
কোকিলার বিয়ে সন্ধ্যায়, ছেলেপক্ষ থেকে দশজন আসবে। সন্ধ্যায় বিয়ে হবে, রাতের খাবার খেয়ে বউ নিয়ে তারা চলে যাবে।
কোকিলা রুবি আপার দরজায় ধাক্কা দেয়, রুবি বলে কি দরকার? কোকিলা বলে, আপা একটু জরুরী দরকার দরজা খুলেন।
রুবি দরজা খুলতেই কোকিলা বিছানার উপর বসে কাঁদতে থাকে।
রুবি বলে, কি হয়েছে আবার তোর?
কোকিলা কোনো কথা না বলে কেঁদে যায়। রুবি পাশে বসে বলে, দেখ কোকিলা মন মেজাজ এমনিতেই খারাপ। কি হয়েছে বল, কান্নাকাটি বাদ দিয়ে।
‘আপা খালুজান তো বলছিলো আমাকে যখন ওদের বাসায় নিয়ে যাবে, একটা ফুল দিয়ে সাজানো বিয়ের গাড়িতেই নিয়ে যাবে। খালুজান গাড়ি ঠিক করেছে। তবে সেই গাড়ি আসেনি। মাঝপথেই নষ্ট হয়ে গেছে গাড়িটা। এদিকে এখন কোনো গাড়ি খুঁজে পায়নি আর।’
রুবি বলে, গাড়িতেই যেতে হবে কেন? কান্নাকাটি করিস নাতো এখন যা আমার ঘর থেকে।
কোকিলা চোখ মুছে বের হয়ে যায়।
রুবি কিছুসময় চুপচাপ বসে থাকে, তারপর বাবার কাছ যায়। গাড়ির বিষয়টা জানতে চাইলে বাবা বলে, দেখতো রুবি আমি তো গাড়ি ঠিক করেছি তবে সেই গাড়ি যদি নষ্ট হয় আমি কি করবো বল? এখন তো গাড়ি পাওয়া যাবে না হুট করে।
রুবি বাবার থেকে সব শুনে নিজের ঘরে আসে। রুবি ঠিক করে শওকতকে একটা কল দিবে। কিন্তু শওকতের সাথে এখন ঝগড়া চলছে, কল দিতে ইচ্ছে করছে না। রুবির মনে হয় শওকতের সাথেই এক জীবন চলে যাবে, তবে কোকিলা মেয়েটার বিয়ের এই দিন বারবার আসবে না। রুবি শওকতকে কল দেয়।
‘হ্যালো রুবি? আমি জানতাম তুমি বেশি সময় রাগ করে থাকতে পারবে না।’
‘তুমি অধিকাংশ সময়ই ভুল জানো। একটা দরকারে তোমাকে কল দিছি। তাই বলে রাগ কমে গেছে এমনটা ভেবোনা।'
‘কি দরকার বলো। আমি জানি আমার জন্যে তোমার হৃদয়ে একটা কোমল জায়গা আছে, যতো রাগ করো না কেন তুমি তো আমাকে ভালোবাসো।’
‘কচুর ভালোবাসা। শুনো আমাদের বাসায় যে মেয়েটা কাজ করে কোকিলা? চিনো তো তুমি তাই না? কোকিলার আজকে সন্ধ্যায় বিয়ে। ওর ইচ্ছে ছিলো বউ হয়ে একটা ফুল দিয়ে সাজানো গাড়িতেই যাবে। বাবা অবশ্য গাড়ি ঠিক করেছিলো, তবে একটা ঝামেলার কারণে সেই গাড়ি আসতে পারবে না। আমি চাই তুমি তোমার গাড়ি ফুল দিয়ে সাজিয়ে বিকালে নিয়ে আসবে।’
‘আমার গাড়ি?’
‘হ্যাঁ তোমার গাড়ি। কিছুসময় তোমার গাড়ি কেউ ব্যাবহার করলে ক্ষয়ে যাবে নাতো?’
‘রুবি আমি তো সেসব বলি নাই। তুমি বলতে পারতে আমাদের গাড়িটা নিয়ে আসবে।’
‘এতো মন ভুলানো কথা বলতে হবে না।’
‘শুনো আমি ড্রাইভারকে এখনি গাড়ি নিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি ফুল দিয়ে সাজাতে। কোকিলা গাড়িতে চড়েই জামাই নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাবে।’
রুবির ইচ্ছে করছে শওকতকে বলবে তুমিও এসো না। তবে কি ভেবে কিছুই বলে না। শওকত যদি আসে রুবি তাহলে রাগ করে থাকবে না ঠিক করে রাখে।
কোকিলা মন খারাপ করে চুপচাপ এক কোনায় বসে আছে, বিয়ের গাড়ি হবে না তাই একটু বেশিই মন খারাপ। বিয়ে নিয়ে মেয়েটার যে উচ্ছ্বাস ছিলো এখন সব শান্ত হয়ে আছে।
রুবি ঠিক করে গাড়ির বিষয়ে কিছুই জানাবে না, যখন দেখবে ফুল দিয়ে সাজানো বিয়ের গাড়ি এসেছে তখন খুশি হবে।
শওকত গাড়ি নিয়ে সন্ধ্যায় চলে আসে। রুবি তখন কোকিলাকে সাজিয়ে দিচ্ছে। শওকত রুবিকে ডেকে বলে, গাড়ি নিয়ে এসেছি একবার দেখে আসো।
রুবি কোকিলাকে জানালা দিয়ে বিয়ের গাড়ি দেখায়, ফুল দিয়ে সাজানো একটা সাদা গাড়ি। কোকিলা মুচকি হাসে গাড়িটা দেখে, রুবি আপাকে জড়িয়ে ধরে, কিছুক্ষণ ফুপিয়ে কাঁদে। রুবি বলে কাঁদতে হবে না সাজ নষ্ট হয়ে যাবে, চুপচাপ একটু বসে থাকে। কোকিলা বসে থাকে।
কোকিলার ইচ্ছে পূর্ণ হয় ফুল দিয়ে সাজানো বিয়ের গাড়িতেই বরের সাথে যায়।
কোকিলা যাবার পরে শওকত রুবির কাছে এসে বলে, চলো আমরা বাসায় যাই। রুবি বলে রিক্সা ডেকে নিয়ে আসো আমি বের হচ্ছি।
শওকত গলির মুখে যেয়ে গেটের কাছে রিক্সা নিয়ে আসে। রুবি সব রাগ কমিয়ে শওকতের সাথে রিক্সায় বসে। শওকত রুবির হাত ধরে বলে, তুমি কি জানো তুমি অনেক ভালো একটা মানুষ? রুবি বলে, তুমি কি জানো তুমিও একটা ভালো মানুষ? শওকত বলে, আমি যে তোমার সাথে ঝগড়া করি, তাইতো ছেড়ে চলে আসলে। রুবি বলে, যদি ঝগড়া না হতো এমন সুন্দর মুহুর্ত তৈরি হতো বলো? ভালোবাসায় ঝগড়া দরকার, আরো গভীরভাবে প্রিয় মানুষকে অনুভব করা যায়। ভালোবাসা দিয়ে সবকিছু মিটিয়ে ফেলবে পারবে না? শওকত বলে, পারবো।
বিয়ের গাড়ি
মুস্তাকিম বিল্লাহ