26/04/2019
উচ্চ স্বপ্ন এবং সেটাকে বাস্তবায়ন করার আত্মবিশ্বাস, চেষ্টা ও মনোবল থাকলে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও যে সফলতার দ্বার প্রান্তে পৌছানো সম্ভব তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত গাইবান্ধার সন্তান প্রফেসর শাহ জাহান মিয়া। গ্রামের সাধারণ এক ছেলে স্কুল জীবনে যার লেখা পড়ায় মনোযোগই ছিলো না আজ তথ্য-প্রযুক্তির আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনিই দ্যুতি ছড়াচ্ছেন বাংলাদেশের হয়ে। অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে তার সৃষ্ট থিওরি বা সিস্টেমে দিব্যি সুফল পাচ্ছেন সেখানকার মানুষ। গাইবান্ধার গর্বের সন্তান প্রফেসর শাহ জাহান মিয়া ১৯৭৪ সালে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি বাজার সংলগ্ন এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।তার বাবার নাম আবুল খায়ের মিয়া।তার স্কুল জীবন শুরু হয়েছিল ফুলছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।এর পর উচ্চমাধ্যমিক জীবন কেটেছে ফুলছড়ি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে।গাইবান্ধা সরকারি কলেজে থেকে এইচ,এস, সি পাস করে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এপ্লাইড ফিজিক্স এন্ড ইলেকট্রনিক ইন্জিনিয়ারিংএ। সেখান থেকে অনার্স মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে ২০০০ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়ার সাউথ এন্ড কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি বিজনেস স্কুলের ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে কর্মরত আছেন। দেশটির শীর্ষস্থানীয় আইটি গবেষক বলতেই তাঁর নামটি চলে আসে। এর আগে ইউনিভার্সিটি অব দ্য সানশাইন কোস্টে অধ্যাপনা শুরু করেন ২০০৩ সালে। এ ছাড়া গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটি এবং জেমস কুক ইউনিভার্সিটিতেও শিক্ষকতা করেছেন। ২০০০ সালে দেশ ছাড়ার পর আর থেমে থাকেননি। নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন তথ্য-প্রযুক্তি জগতে।
তিনি লিখেছেন গবেষণা বই, জার্নাল আর্টিক্যাল, বিভিন্ন পাঠ্যবইয়ের অধ্যায় এবং বড়সড় কনফারেন্স আর্টিক্যাল। ড. শাহ মিয়ার ১২০টির মতো গবেষণা সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা দুনিয়াজুড়ে সুনাম কুড়িয়েছে। তাঁর লেখনি বিশ্বের নামকরা সব প্রকাশনায় স্থান করে নিয়েছে। এর মধ্যে আছে জার্নাল অব দ্য অ্যাসোসিয়েশন ফর ইনফরমেশন সিস্টেমস, ইনফরমেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, নলেজ-বেজড সিস্টেমস কিংবা ইনফরমেশন টেকনলজি অ্যান্ড পিপল'র মতো প্রকাশনায়। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব বিজনেস ইন্টেলিজেন্স রিসার্চ, দ্য জার্নাল অব এডুকেশন অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনলজিস এবং অস্ট্রেলিয়ান জার্নাল অব ইনফরমেশন সিস্টেমস এর সম্পাদকীয় বোর্ডেও স্থান করে নিয়েছেন তিনি। অতি সম্প্রতি আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব বিজনেস ইন্টেলিজেন্স রিসার্চ (আইজেবিআইআর) এর এডিটর-ইন-চিফ পদে আসীন হয়েছেন। বাংলাদেশি হিসেবে এটি একটি বড় অর্জন।
কর্মজীবনে পুরস্কারের ঝাঁপি বেশ স্ফীত তাঁর। বেস্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড, বেস্ট পার্টিসিপেন্ট অ্যাওয়ার্ড এবং আউটস্ট্যান্ডিং লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সম্মানসূচক পদে আছেন। ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটির অ্যাকাডেমিক বোর্ডের সদস্য তিনি। ইউনিভার্সিটি আব ফিজি'র ইনফরমেশন টেকনলজি বিভাগের অ্যাডজাঙ্কট প্রফেসর। বাংলাদেশের বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়েরও অ্যাডজাঙ্কট প্রফেসর তিনি। আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট আর্থ-সামাজিক ইস্যু নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। অ্যাসোসিয়েশন অব ইনফরমেশন সিস্টেমস (এআইএস), অস্ট্রেলিয়ান কম্পিউটার সোসাইটি (এসিএস) এবং আইইইই এর সম্মানিত সদস্য তিনি।
ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি শিক্ষার্থীদের একজন সুপারভাইজর ড. শাহ জাহান মিয়া। গবেষণাও চালিয়ে যাচ্ছেন নিরন্তর। তাঁর আগ্রহের বিষয়গুলোর মধ্যে আছে ডিসিশান সাপোর্ট অ্যাপ্লিকেশন্স ডিজাইন ফর বিজনেস; সোশিও-টেকনিক্যাল ডিজাইন থিওরি; বিগ ডেটা, লোকেশনাল অ্যানালিটিক্স/ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ডিসিশান সাপোর্ট; ই-সার্ভিসেস অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশন্স ফর কনজ্যুমার্স, হেলথকেয়ার, পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ওয়েল-বিয়িং ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি। তাঁর 'অন ক্লাউড মেটার্নিটি ক্লিনিক বা অন ক্লাউড হেলথ ক্লিনিক এর প্রায়োগিক সুফল মিলেছে। আমাদের দেশে মা হতে চলেছেন এমন কোনো দরিদ্র নারীকে পরিপূর্ণ এবং জরুরি চিকিৎসাসেবা দেখা সম্ভব, এসবের মাধ্যমে স্বাস্থ্যগত নানা তথ্যও সরবরাহ করা যায়। এসব অ্যাপের মাধ্যমে কৃষক থেকে শুরু করে একজন শিক্ষার্থীও অনায়াসে উপকার পেতে পারেন'।তার অধীনে অনেকে শিক্ষার্থী পিএইচডি করছেন। প্রফেসর শাহ জাহান মিয়া আমাদের তরুণ সমাজের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস ও একজন জীবন্ত উদাহরণ। তিনি শুধু গাইবান্ধার গর্ব নন তিনি বাংলাদেশের গর্ব।তিনি আরও সামনে এগিয়ে যান তার প্রতি রইল অনেক অনেক শুভ কামনা।গাইবান্ধার এ কৃতি সন্তান সম্পর্কে অনেকে হয়তো জানেন না তাই সকলে শেয়ার করে জানিয়ে দিন।
(কালেক্টেড)