28/10/2025
রোগী মোঃ আব্দুল করিম, বয়স ৫৮, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছেন। কয়েক সপ্তাহ আগে পায়ে ছোট্ট কাঁটা লেগেছিল, তিনি গুরুত্ব দেননি। কয়েকদিন পর দেখা গেল ঘা শুকাচ্ছে না, বরং পুঁজ হচ্ছে, ফুলে গেছে, ব্যথা বাড়ছে — শেষে চেম্বারে আসতেই দেখে বুঝলাম “Diabetic Foot Ulcer”
চলুন আজ আপনাদের জানাবো - ডায়াবেটিক ফুট আলসার (Diabetic Foot ulcer) এর কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে।
⚠️ ডায়াবেটিক ফুট কী?
ডায়াবেটিক ফুট হলো এমন এক অবস্থা, যেখানে ডায়াবেটিসের কারণে পায়ের রক্ত সঞ্চালন ও স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে ছোট্ট ক্ষতও বড় সংক্রমণে রূপ নেয়। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে টিস্যু নষ্ট হয়ে গ্যাংগ্রিন হতে পারে।
🦶 কেনো হয়/কারণ:
1. রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়া (Peripheral Artery Disease):
রক্তে গ্লুকোজ বেশি থাকলে ধমনী সরু হয়ে যায়, ফলে পায়ে পর্যাপ্ত রক্ত পৌঁছায় না।
2. স্নায়ু ক্ষতি (Diabetic Neuropathy):
ব্যথা বা জ্বালাপোড়া অনুভব না করায় রোগী ছোট ঘা বা কাঁটা টের পান না।
3. সংক্রমণ:
উচ্চ শর্করার কারণে ক্ষতস্থানে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
4. অতিরিক্ত চাপ বা ঘর্ষণ:
শক্ত জুতা, ছোট কাটা, বা পায়ের গঠনগত সমস্যা থেকেও ঘা হতে পারে।
⚙ লক্ষণ:
🔹 পায়ের আঙুল বা তলায় ঘা।
🔹 ঘা শুকায় না, পুঁজ বা দুর্গন্ধ হয়।
🔹 ফোলা, ব্যথা, লালচে ভাব।
🔹 পায়ের চামড়া কালচে হয়ে যাওয়া (gangrene-এর শুরু)।
🔹 পায়ে জ্বালাপোড়া, অসাড়তা বা “পিনচোখানো” অনুভূতি।
🔹 নখ কালো বা ইনফেক্টেড হওয়া।
💊 চিকিৎসা:
চিকিৎসা অবশ্যই ডায়াবেটিক বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে করতে হবে।
1️⃣ ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ:
— অ্যান্টিবায়োটিক (oral বা IV)।
— ক্ষত পরিষ্কার (Debridement) — মৃত টিস্যু অপসারণ।
— স্যালাইন বা অ্যান্টিসেপটিক ড্রেসিং।
2️⃣ রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ:
— ইনসুলিন বা ওষুধের মাধ্যমে ব্লাড সুগার স্বাভাবিক রাখা।
— নিয়মিত গ্লুকোমিটার দিয়ে পরীক্ষা।
3️⃣ ক্ষত ব্যবস্থাপনা:
— নিয়মিত ড্রেসিং।
— প্রেসার রিলিভিং সোল বা স্পেশাল জুতা।
— কিছু ক্ষেত্রে স্কিন গ্রাফট বা সার্জারি।
4️⃣ উন্নত চিকিৎসা:
— VAC Therapy (Negative Pressure Wound Therapy).
— Hyperbaric Oxygen Therapy.
— Bypass surgery বা angioplasty (রক্তপ্রবাহ ঠিক করতে)।
🏡 ঘরোয়া যত্ন ও প্রতিকার:
⚠️ এগুলো মূল চিকিৎসা নয়, বরং প্রতিরোধ ও সহায়ক ব্যবস্থা।
1️⃣ পা প্রতিদিন পরীক্ষা করুন: ছোট কাটা, ফোস্কা বা কালো দাগ দেখলেই চিকিৎসকের কাছে যান।
2️⃣ নরম জুতা পরুন: পায়ে চাপ কমায়।
3️⃣ পা পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন।
4️⃣ নখ সাবধানে কাটুন: কাটা লেগে সংক্রমণ হতে পারে।
5️⃣ চিনি নিয়ন্ত্রণে রাখুন: সঠিক ডায়েট, ইনসুলিন ও ওষুধ নিয়মিত নিন।
6️⃣ ধূমপান সম্পূর্ণ বন্ধ করুন: রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়।
🚫 যা কখনোই করবেন না:
🔹 ঘা বা ফোসকা নিজে ফাটাবেন না।
🔹 ব্যথা না থাকলেও অবহেলা করবেন না।
🔹 লোকজ বা দেশি ঔষুধে চিকিৎসা করবেন না (গাছান্ত,ইউনানি,হারবাল) এগুলো থেকে বিরত থাকুন।
💬 সচেতনতা বার্তা:
ডায়াবেটিক ফুট মানেই পা কেটে ফেলতে হবে – এটা ভুল ধারণা।
শুরুতেই চিকিৎসা ও রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করলে ঘা সম্পূর্ণ সেরে ওঠা সম্ভব।
নিজে সর্তক থাকুন এবং অন্যকে সর্তক করতে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
#সংগৃহীত @