07/07/2025
আজ_শনিবার
ক্লাস সিক্সের একটা মেয়ের অভিভাবক বিকাল ৪ টার দিকে ফোন দিয়ে বললেন তার মেয়ে বাসায় ফিরে নি এখনো! আকাশ থেকে পড়লাম না, আকাশে ঝুলে রইলাম কথাটা শুনে! শনিবারে কিসের ক্লাস? কোন মেয়ের কথা বলছে? চিন্তায় পড়ে গেলাম!
কথা বলছি না দেখে ঐ অভিভাবক আবার বললেন,
“স্যার, আমার মেয়ে নাকি ৫ টা পর্যন্ত ক্লাস করে। আজও নাকি ক্লাস ছিল, এখনো ফিরে নি।”
এবার আকাশ থেকে পড়লাম। ধপাশ করে। আমার জানামতে আমাদের কোন অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা নেই৷ প্রতিদিন নিয়ম করে দুপুর ১.১০ এ ছুটি। এই অভারটাইম স্টুডেন্ট কোত্থেকে এলো?
“আস্তে করে বললাম, আমাদের কোন ক্লাস ছিল না। আজ শনিবার, সারাদিন ছুটি ছিল!”
অভিভাবক মোটামুটি একটু রাগ দেখিয়ে বললেন, মেয়ে বলেছে ক্লাস আছে, দেখেন কোন স্যার পড়ায়। খোঁজ নেন। আমি ফোন কেটে দিলাম।
উনার ধারণা, মেয়ে ক্লাসের কথা বলেছে মানে ক্লাসেই আছে। উনার মেয়ের চারদিকে শুধু নেকির ফেরেশতা ফেরেশতা আর কেউ নাই। কারন মিথ্যা বলেতেই পারে না। পাপের ফেরেশতারা বেকার বসে থাকতে থাকতে রিজাইন দিয়ে চলে গেছেন।
মেয়ের ক্লাসমেটদের ফোন করলাম। কার সাথে সম্পর্ক, কার বাসায় যাওয়া আসা করতে পারে এটা তার ক্লাসমেটরাই জানে। জিজ্ঞাসাবাদে যা বের হলো,
এই ক্লাস সিক্সের মেয়েটা প্রায়ই বাসা থেকে বের হয় ইউনিফর্ম পরে, বাসায় বলে আসে “এক্সট্রা ক্লাস আছে।”কিন্তু কোন ক্লাসই করে না। এমনকি নিয়মিত ক্লাসের উপস্থিতিরও বেহাল দশা। একটা কলজের ডিগ্রির স্টুডেন্টও মনে হয় তার চেয়ে বেশি ক্লাস করে। সিক্সের ক্লাস টিচার জানালেন মেয়েটার অভিভাবককে অনুপস্থিতির কথা জানানো হয়েছে অনেকবার। কিন্তু তারা কোন সহযোগিতা করে নি।
তদন্ত করতে গিয়ে সবচেয়ে ভয়াবহ যে তথ্য জানা গেল, মেয়েটি আজ ক্লাসের নাম করে, পার্কে গিয়েছিল। যেটা আজ নতুন না। প্রায়ই যায়। সাথে থাকে তার দুইটা ছেলে বন্ধু।
নিশ্চিত হয়ে তার অভিভাবকে কল দিয়ে বললাম, “আপনার মেয়ে ওভারটাইম ক্লাস করছে অমুক পার্কে”।
অভিভাবকের এক কথা তার মেয়ে এমন না। না বলে কোথাও যায় না৷ আমি বললাম,
“ আপনার মেয়ে না বলে যায় নাই তো? আপনাকে বলে তারপর গেছে ক্লাসে। তবে সেই ক্লাসটা নিচ্ছেন তার দুইজন ছেলে বন্ধু কাম ক্লাসমেট৷ অমুক পার্কে। যান, ছুটির সময় হয়ে যাচ্ছে নিয়ে আসেন গিয়ে”
এটুকু বয়স। কত হবে? ১২/১৩ অথবা ১৪!
ইউটিউব শর্টসের ‘ডেটিং ডে’ আর টিকটকের 'হাফ সে # # ক্সি ট্রেন্ড' এই প্রজন্মের মাথা নষ্ট করে দিয়েছে।
বাবা-মা ভাবছেন,
মেয়ে তো ক্লাসেই যায়, ঠিক আছে! আর যদি ইউটিউব দেখে দেখে শিখা ইংরেজি দিয়ে বলে, "আই এম গো ক্লাস মম" বাবা-মা ভাববে ইংরেজিতে যেহেতু বলছে তাইলে ঠিকই বলছে।
এটা কোন গল্প ছিল না। পঁচে যাওয়া এক প্রজন্মের হালকা দুর্ঘন্ধ ছিল। ক্লাস সিক্স, সেভেন, এইটে পড়া মেয়েরা এখন খোলার দিনে কিংবা বন্ধের দিনেও ক্লাসের নাম করে অথবা কোচিং এর নাম করে ছেলেদের সাথে পার্কের কোনায়, হুড তোলা রিকশায়, পর্দা দেওয়া সিএনজিতে, ডার্ক রেস্টুরেন্টের সোফায় সময় কাটায়। গায়ে জড়াজড়ি, টেপাটেপি খুবই কমন। ডাল ভাতের মত সহজ। রুম ডেটিংও মোটামুটি সবারই হাতের নাগালে। সর্বত্র এই প্রজন্মের পঁচা দুর্ঘন্ধ বিকট আকার ধারণ করেছে।
আপাতত একটা জিজ্ঞাসা সবার কাছে—“প্রজন্মের এই অবস্থার পেছনে দায় কার?”
Saydul Islam