14/09/2015
পবিত্র হজ্বের যে ভাবে গোড়া পত্তন হল
=========================
ইব্রাহীম (আঃ) এর জন্ম প্রাচীন কলদেশীয় রাজ্যের উরে (বর্তমানে ইরাকের দজলা নদীর পাড়ে) তিনি আল্লাহ কতৃক আদিষ্ট হয়ে উর থেকে কনানে(বর্তমান ফিলিস্থিন) হিজরত করেন। আমৃত্যু তিনি ফিলিস্থিনেই বসবাস করেন। তিনি কনানের মকপেলো গুহায় বর্তমানে শায়ীত সাথে স্ত্রী সারাহ, পুত্র ইসহাক,নাতি ইয়াকুবের সাথে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ইব্রাহীম (আঃ) এর নাতি হযরত ইয়াকুব(আঃ) এর অপর নাম ইসরাঈল বনী ইসরাঈর বলতে ইয়কুব(আঃ) এর বংশধরকে বুঝায়।
ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহ কতৃক কাবাঘর নির্মাণের আদিষ্ট হয়ে ফিলিস্থিন থেকে বাক্কায়(বর্তমান মক্কা) আগমন করেন একদা এই জণমানবহীন তপ্ত পাস্তুরীত মরুভুমিতে শিশুপুত্র ইসমাঈল এবং বিবি হাজেরাকে নির্বাসনে রেখে গেছিলেন আল্লাহর আদেশে। তিনি মক্কায় এসে স্ত্রী পুত্রকে জীবিত দেখতে পেয়ে আর্লাহর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এবং পুত্র ঈসমাঈলকে সাথে নিয়ে কাবাঘর নির্মাণে প্রস্তুতি গ্রহন করলেন।
আল্লাহ কাবা (বায়তুল্লাহর) স্থান নির্দিষ্ট করে দিলেন। তিনি জানালেন,
‘তুমি তোমার দাঁড়ানোর জায়গাকেই (স্ত্রী-পুত্রকে নির্বাসনে দিতে এসে যেস্থানে তিনি দাঁড়িয়ে শেষবারের মত হাজেরার সাথে কথোপকথন করেছিলেন) নামাযের জায়গারূপে গ্রহণ কর। ‘আমার সাথে কাউকে শরীক কোরও না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রাখ তাওয়াফকারীদের জন্যে, নামাজে দন্ডায়মান কারীদের জন্যে এবং রুকু ও সিজদাকারীদের জন্যে এবং মানুষের মাধ্যে হজ্জ্বের জন্যে ঘোষনা প্রচার কর। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দূর-দুরান্ত থেকে। যাতে তারা তাদের কল্যানের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে (যিলহজ্জ্ব মাসের ১০,১১ ও ১২ তারিখ) আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেয়া চতুষ্পদ জন্তু জবেহ করার সময়। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুস্থ ও অভাবগ্রস্থকে আহার করাও। এরপর তারা যেন দৈহিক ময়লা দূর করে দেয়, তাদের মানত পূর্ণ করে এবং এ সুসংরক্ষিত গৃহের তাওয়াফ করে। এটা শ্রবণযোগ্য। আর কেউ আল্লাহর সম্মান যোগ্য বিধানাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শণ করলে পালনকর্তার কাছে তা তার জন্যে উত্তম। উল্লেখিত ব্যাতিক্রমগুলো ছাড়া তোমাদের জন্যে চতুষ্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা মূর্ত্তিদের অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাক এবং মিথ্যে কথন থেকে দূরে সরে থাক।’-(২২:২৬-৩০)
আল্লাহর আদেশ অনুসারে পিতাপুত্র নির্দিষ্ট স্থানে উপাসনালয়ের ভিত্তি স্থাপন করা শুরু করলেন। এই স্থানেই আদমের অনুরোধে ফেরেস্তাগণ প্রথম উপাসনালয় কা’বা (Kaba) নির্মাণ করে দিয়েছিলেন যার ভিত্তি তখনও বালুর নীচে বিদ্যমান ছিল। ফলে স্থানটি আশেপাশের ভূমি থেকে কিছুটা উঁচু ছিল।
কা’বাগৃহ নির্মিত হল। ইতিপূর্বে আল্লাহ কাবাগৃহের স্থান সনাক্ত করে দেবার সময় ইব্রাহিম(আ:)কে নির্দেশ দিয়েছিলেন মানুষের মধ্যে হজ্জ্বের ঘোষণা প্রচার করার জন্যে। সুতরাং তিনি আল্লাহর ঐ আদেশ পালন করার জন্যে তৎপর হলেন। কিন্তু তিনি যখন ঘোষণা প্রচার করবেন, সেইসময় তার মনে হল এই জনমানবহীন প্রান্তরে তার এই ঘোষণা মানুষের কানে পৌঁছুবে না। তাই তিনি এ ব্যপারটা আল্লাহর কাছে তুলে ধরলেন। তিনি বিনীতভাবে আরজ করলেন, ‘হে আল্লাহ! এটা তো জনমানবহীন বন্যপ্রান্তর ঘোষণা শোনার মত কেউই নেই। দূরে যেখানে জনবসতি আছে সেখানে আমার আওয়াজ কিভাবে পৌঁছিবে?’
তিনি বললেন, ‘তোমার দায়িত্ব শুধু ঘোষণা করা, বিশ্বে পৌঁছানোর দায়িত্ব আমার।’
অতঃপর আল্লাহর নির্দেশ মত ইব্রাহিম ‘মকামে ইব্রাহিম’-এ দাঁড়িয়ে দু‘কর্ণে অঙ্গুলি রেখে দক্ষিণে-উত্তরে এবং পূর্ব-পশ্চিমে মুখ করে বললেন, ‘হে মানবজাতি! তোমাদের পালনকর্তা নিজের গৃহ নির্মাণ করেছেন এবং তোমাদের উপর এই গৃহের হজ্জ্ব ফরজ করেছেন। তোমরা সকলে তাঁর আদেশ পালন কর।’
ইব্রাহিম(আ:) এই আওয়াজ আল্লাহ বিশ্বের কোনে কোনে পৌঁছে দেন। শুধু তাই নয় তিনি তা কেয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী মানুষের কান পর্যন্ত পৌঁছে দেন। যার যার ভাগ্যে আল্লাহ হজ্জ্ব লিখে দিয়েছেন তাদের প্রত্যেকেই এই আওয়াজের জবাবে বলেছে, ‘লাব্বায়েক, আল্লাহুমা লাব্বায়েক।’ অর্থাৎ ইব্রাহিমী আহ্বানের জবাবই হচ্ছে হজ্জ্বে ‘লাব্বায়েক’ বলার আসল ভিত্তি।
আল্লাহ ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলেন, 'তোমরা আমার গৃহকে পবিত্র রাখবে তাদের জন্যে যারা এ প্রদক্ষিণ করবে, এখানে বসে এতেকাফ করবে এবং এখানে রুকু ও সিজদা করবে।..’
কা’বা এবং ‘মকামে ইব্রাহিম’ সংক্রান্ত কোরআনের আয়াতসমূহ-
নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম গৃহ যা মানুষের জন্যে নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ গৃহ, যা বাক্কায় অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্যে হেদায়েত ও বরকতময়। এতে রয়েছে ‘মকামে ইব্রাহিম’এর মত প্রকৃষ্ট নিদর্শণ। আর যে লোক এর ভিতরে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। আর এ গৃহের হজ্জ্ব করা হল মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ রয়েছে এ পর্যন্ত পৌঁছার।-(৩:৯৬-৯৭)
সমাপ্ত।