21/07/2025
কোনো অনাকাঙ্খিত ভয়াবহ ঘটনার ( দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, সহিংসতা) অভিজ্ঞতার পরে ব্যক্তির মনে যে তীব্র মনোদৈহিক চাপ তৈরী হয়, তাকেই ট্রমা বলে। এই ট্রমা যেমন: প্রত্যেক্ষদর্শীর হতে পারে,আবার কোন দুর্ঘটনা বা দুর্যোগ হতে যারা উদ্ধার করতে যায় তাঁদেরও হতে পারে এমনকি করো কারো টিভি বা সোশ্যাল মিডিয়া তে দেখেই ট্রমায় আক্রান্ত হতে পারে।
তবে এটাও সত্যি যে
ভয়াবহ ঘটনার সম্মুখীন হলেই সকল ব্যক্তি র মধ্যে ট্রমা সৃষ্টি হবে তা কিন্তু নয়। সাধারণত, কোন ব্যক্তি যদি খুব বেশি বিপদজনক ঘটনার সম্মুখীন হয়, ঘটনার ফলে শারীরিক
আঘাত প্রাপ্ত হয়, অথবা
অন্য কাউকে আঘাতপ্রাপ্ত হতে বা মারা যেতে দেখলে,
অনেক বেশি মানসিক ভাবে আতংকিত হলে, দুর্ঘটনা র সাথে সাথে তাৎক্ষণিক সহায়তা না পেলে, কোন
মানসিক অসুস্থতা র ইতিহাস থাকলে, বা কোন
নেশাদ্রব্য ব্যবহার করার অভ্যাস থাকলে ব্যক্তি ট্রমাটাইসড হবার ঝুঁকি তে থাকে।
কিভাবে বুঝতে পারবো আমরা যে ট্রমাটাইসড?
* দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
* তীব্র আতঙ্ক ও অসহায় লাগা । আবারভয়, আতঙ্ক, দুঃখবোধ, অস্থিরতা, উৎকণ্ঠা, অশান্তি, চমকে ওঠা, বিচ্ছিন্নতা, অসহায়ত্ব, অপরাধবোধ, রাগ ও ক্লান্তিবোধ হওয়া।
* দুর্ঘটনা দৃশ্য গুলো বারবার মনের মাঝে ভেসে উঠা।
* দুঃস্বপ্ন দেখা।
* ভীষণ দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস করা।
* নিরাপত্তাহীন বোধ।
* যেকোনো সময় উক্ত ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট কোন গন্ধ অনুভব ও শব্দ শোনা।
* বিশ্বাসের জায়গায় কোন পরিবর্তন আসা।
* কোন কিছু তে মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হওয়া।
* ঘুম কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া।
* খাওয়া বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া।
* তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
* অনুভূতি গুলো অসার হয়ে যাওয়া।
কি করতে পারি নিজেকে ট্রমা হতে বের করতে?
* যে ঘটনা বা খবরগুলো মনের ভেতর স্ট্রেস তৈরি করে, ভয় বা আতঙ্ক তৈরি করে, সেগুলো দেখা, পড়া বা শোনা থেকে বিরত থাকা।
* নিজের প্রতি জাজমেন্টাল না হয়ে বরং নিজের মানসিক ও শারীরিক অবস্থা র প্রতি সমানুভূতি প্রকাশ করে উক্ত ঘটনার সাথে তার যোগসূত্র বিশ্লেষণ করা।
* মনের মধ্যকার যেকোনো অনুভূতি কে সম্মান দেয়া এবং সেটা একসেপ্ট করা।
* ভালো লাগে বা অস্থিরতা দূর করতে সহায়তা করে এমন কাজ বা অভ্যাস তৈরী করা।
* দৈনন্দিন একঘেয়ে রুটিন থাকলে সাধ্য অনুযায়ী বৈচিত্র যুক্ত করা।
* ইচ্ছে র বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তি যদি উক্ত ঘটনা সম্পর্কে চাপাচাপি করে তবে শান্ত ভাবে তা প্রত্যাখ্যান করা
* বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন কারো সাথে বর্তমান অনুভূতি শেয়ার করা, যদি আশেপাশে তেমন মানুষ না থাকে তবে ডাইরি তে নিজের অনুভূতি শেয়ার করা।
* সুষমখাদ্যাভাস ও ঘুমের ক্ষেত্রে যত্নবান হওয়া। অনেক সময় দুঃস্বপ্ন দেখার ভয়ে ব্যক্তি ঘুমাতে পারে না, সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসক এর পরামর্শ নিতে হবে।
* যদি উক্ত ঘটনা র সাথে নিজে থেকে মোকাবেলা করা সম্ভব না হলে অবশ্যই মনোচিকিৎসক বা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট বা কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট এর পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
বরাবরের মতো দেশের যেকোনো দুর্যোগ এ বিনামূল্যে মনোসামাজিক কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করে আসছে ন্যাশনাল ও রিজিওনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার।। এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে
ঢাকার ইস্কাটনে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টারে আসতে পারেন ( রবিবার হতে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা হতে ৪টা) অথবা টেলিফোন বা অনলাইন ( হোয়াটস্যাপ / ভাইবার ) এ কাউন্সেলিং করতে পারেন।
( +৮৮o১৭১৫২৯৭৯৪৪ এবং +৮৮০১৭১২৭২৯০৭০)।
আবার রিজিওনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (+৮৮০১৬৭৫৬২০৯৯২), চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (+৮৮০১৭১৬১৩৬২০২০ ও +৮৮০১৮৪৭৪৬১৮৮৮ ) এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (+৮৮০১৯১৯১৭৩৩১)।