04/09/2025
Causes and management of low back pain in Bangla.
কোমরের ব্যথা বা 'লো ব্যাক পেইন' (Low Back Pain) একটি খুব সাধারণ সমস্যা, যা পৃথিবীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময় অনুভব করে। সাধারণত ৯০% ক্ষেত্রে এই ব্যথা যান্ত্রিক কারণে হয় এবং সহজে নিরাময়যোগ্য।
কারণসমূহ:
কোমরের ব্যথার অনেক কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো:
পেশী এবং লিগামেন্টে আঘাত (Muscle and Ligament Strain): ভারী জিনিস তোলা বা ভুল ভঙ্গিতে কাজ করার কারণে পেশী ও লিগামেন্টে টান বা মোচড় লাগতে পারে, যা ব্যথার সবচেয়ে সাধারণ কারণ।
ভুল অঙ্গবিন্যাস (Poor Posture): দীর্ঘ সময় ধরে একই ভঙ্গিতে বসে বা দাঁড়িয়ে কাজ করা, ঝুঁকে বসা, বা ভুল ভঙ্গিতে ঘুমানোর কারণে মেরুদণ্ডে অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং ব্যথা সৃষ্টি হয়।
ডিস্কের সমস্যা (Disk Problems): মেরুদণ্ডের হাড়গুলোর মধ্যে নরম কুশন বা ডিস্ক থাকে, যা স্পাইনাল কর্ডকে রক্ষা করে। এই ডিস্কগুলো স্থানচ্যুত হতে পারে (Herniated disk), ফুলে যেতে পারে, বা বয়সের কারণে ক্ষয় হয়ে যেতে পারে, যা স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং তীব্র ব্যথা ঘটায়।
মেরুদণ্ডের অস্বাভাবিকতা (Structural Issues): মেরুদণ্ডের অস্বাভাবিক বক্রতা (Scoliosis), মেরুদণ্ডের নালিকা সরু হয়ে যাওয়া (Spinal Stenosis), বা হাড় সরে যাওয়া (Spondylolisthesis) ইত্যাদি কারণেও কোমর ব্যথা হতে পারে।
ব্যায়ামের অভাব এবং স্থূলতা (Lack of Exercise and Obesity): দুর্বল পেশী, বিশেষ করে পিঠ ও পেটের পেশীর দুর্বলতা কোমরের ব্যথার ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়াও, অতিরিক্ত ওজন মেরুদণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে।
অন্যান্য কারণ: কঙ্কালের অনিয়ম, সাইটিকা (Sciatica), আর্থ্রাইটিস (Arthritis), এবং কিছু ক্ষেত্রে বংশগত কারণেও কোমর ব্যথা হতে পারে।
ব্যবস্থাপনা ও প্রতিকার:
কোমরের ব্যথা হলে শুরুতেই আতঙ্কিত না হয়ে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক ব্যথার কারণ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করবেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, কিছু সহজ পদক্ষেপ এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমেই এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
বিশ্রাম ও কার্যকলাপের পরিবর্তন: স্বল্প সময়ের জন্য বিশ্রাম সহায়ক হতে পারে, তবে দীর্ঘ সময় বিছানায় শুয়ে থাকা এড়িয়ে চলতে হবে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করা ভালো, এতে পেশী দুর্বল হয় না।
তাপ বা বরফ থেরাপি (Heat or Ice Therapy): আঘাতের পরপরই বরফ প্রয়োগ করলে প্রদাহ কমে এবং ব্যথা কমে যায়। তাপ প্রয়োগ করলে পেশী শিথিল হয় এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।
ব্যায়াম এবং ফিজিওথেরাপি (Exercise and Physiotherapy): সঠিক ব্যায়াম, যেমন সাঁতার, হাঁটা, পাইলেটস বা যোগব্যায়াম, পিঠ ও পেটের পেশী শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, একজন ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে কিছু নির্দিষ্ট থেরাপি ও ব্যায়াম ব্যথা কমাতে এবং মেরুদণ্ডের নমনীয়তা বাড়াতে খুব কার্যকর হতে পারে।
সঠিক অঙ্গবিন্যাস (Good Posture): বসার সময় মেরুদণ্ড সোজা রাখুন, এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে মাঝে মাঝে বিরতি নিন। ভারী জিনিস তোলার সময় ঝুঁকে না থেকে হাঁটু বাঁকিয়ে জিনিস তুলুন।
ওষুধ (Medication): চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ বা মাসল রিল্যাক্সান্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
অন্যান্য চিকিৎসা: যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং উপরের পদ্ধতিগুলোতে কাজ না করে, তবে চিকিৎসক ইনজেকশন, আকুপাংচার বা অন্যান্য আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির পরামর্শ দিতে পারেন। খুব গুরুতর ক্ষেত্রে সার্জারিরও প্রয়োজন হতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
ব্যথা নির্দিষ্ট কোনো রোগ নয়, এটি রোগের উপসর্গ। তাই ব্যথার কারণ জানা এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করা জরুরি।
কোনো প্রকার ব্যায়াম বা চিকিৎসার আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
যদি ব্যথার সাথে জ্বর, দুর্বলতা বা মূত্রত্যাগের সমস্যা দেখা দেয়, তবে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
Dr.Nazmul Hasan Bhuiyan
Pain medicine specialist
Consultant
250 Bed general Hospital, Kishorganj