আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশ - Alzheimer Society of Bangladesh

  • Home
  • আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশ - Alzheimer Society of Bangladesh

আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশ একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ২০০৬ সাল থেকে ডিমেনশিয়া সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ,ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি,পরিচর্যাকারী ও তাঁদের পরিবারগুলোর জীবনমান উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

আমরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে আলঝেইমার সোসাইটি অব বংলাদেশ এর উপদেষ্টা  ডঃ নাজমুল হুসেইন, রিসার্চ ফেলো, স্কুল অফ ...
02/12/2025

আমরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে আলঝেইমার সোসাইটি অব বংলাদেশ এর উপদেষ্টা ডঃ নাজমুল হুসেইন, রিসার্চ ফেলো, স্কুল অফ হেলথ সায়েন্সেস,ইউনিভার্সিটি অফ সাউথাম্পটন, ইউকে।
আমাদের রকমারি ফুল ও ফলের বাগান , সবুজ ধান ও ফসলের ক্ষেত, কিনবা গরু মহিসের ফার্ম ইত্যাদিকে সস্যাল ফার্মে রুপান্তরিত করে এক দিকে যেভাবে ব্যবসা করা যায়, অন্যদিকে এটি হতে পারে ডিমেনশিয়া রোগীদের জন্য একটি প্রাকৃতিক থেরাপি যা তাদের মেমোরি ভাল রাখার জন্য এক মহৌষধ! এ নিয়ে আমার আরেকটা আর্টিকেল আজ "হেল এন্ড সসোসাল কেয়ার ইন দি কমিউনিটি " নামের একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে! সবার কাছে দোয়া চাই!
To read the article please click the following link:
https://onlinelibrary.wiley.com/doi/10.1155/hsc/5593382

আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশ এখন থেকে CST প্রোগ্রাম চালু করেছে।যাতে ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনের মান বৃদ্ধি পায়।...
30/11/2025

আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশ এখন থেকে CST প্রোগ্রাম চালু করেছে।
যাতে ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনের মান বৃদ্ধি পায়।

Cognitive Stimulation Therapy (CST) কী?
​সংজ্ঞা: CST হলো এক ধরনের অ-ঔষধভিত্তিক (non-drug) চিকিৎসা পদ্ধতি যা সাধারণত হালকা থেকে মাঝারি ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ব্যবহার করা হয়।
​ *লক্ষ্য* : এর প্রধান লক্ষ্য হলো বিভিন্ন উদ্দীপক এবং মজাদার কার্যকলাপের মাধ্যমে রোগীর জ্ঞানীয় ক্ষমতা (Cognitive Function), যেমন স্মৃতিশক্তি, ভাষার ব্যবহার, মনোযোগ এবং সমস্যার সমাধান করার দক্ষতা উন্নত করা।
​পদ্ধতি: এটি সাধারণত ছোট ছোট গ্রুপ সেশন (Group Sessions) বা এককভাবে (Individual CST বা iCST) পরিচালিত হয়। সেশনগুলি একটি নির্দিষ্ট থিম বা কার্যকলাপের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়।
​💡 এই থেরাপিতে কী করা হয়?
​CST সেশনগুলি সাধারণত মজাদার এবং ইতিবাচক অভিজ্ঞতা তৈরি করার জন্য ডিজাইন করা হয়। কার্যকলাপের কিছু উদাহরণ:
​স্মৃতিচারণ (Reminiscence): ছবি, গান বা বস্তুর মাধ্যমে অতীতের স্মৃতি নিয়ে আলোচনা করা।
​শব্দ এবং সংখ্যাভিত্তিক খেলা (Word and Number Games): ধাঁধা, শব্দ মেলা বা সাধারণ গাণিতিক খেলা।
​আলোচনা (Discussion): বর্তমান খবর, সাম্প্রতিক ঘটনা বা পরিচিত বিষয় নিয়ে সক্রিয়ভাবে কথা বলা।
​সৃজনশীল কার্যকলাপ (Creative Activities): গান শোনা, আঁকা বা সহজ রান্না করা।
​সামাজিক যোগাযোগ (Social Interaction): গ্রুপের অন্যান্য সদস্যদের সাথে মেলামেশা এবং সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন করা।
​✅ CST-এর উপকারিতা
​গবেষণায় দেখা গেছে, CST ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তদের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা বয়ে আনে:
​জ্ঞানীয় উন্নতি: এটি স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তা করার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে সাহায্য করে।
​জীবনের মান বৃদ্ধি (Quality of Life): এটি সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রার মান এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়তা করে।
​মানসিক উন্নতি: বিষণ্নতা (Depression) এবং উদ্বেগ (Anxiety) কমাতে সাহায্য করে।
​সামাজিক সুবিধা: গ্রুপ সেশনের মাধ্যমে একাকীত্ব দূর হয় এবং সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়।
​আপনি যদি ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিজনিত সমস্যায় ভুগছেন এমন কারো যত্ন নেন, তবে CST একটি মূল্যবান থেরাপি হতে পারে।

CST বিষয়ে আরও জানতে আপনি যোগাযোগ করতে পারেন।
​আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশ

📞 বিস্তারিত তথ্য ও যোগাযোগ:
হেল্পলাইন: 01720498197 / 01906246621
ইমেইল: info@alzheimerbd.org

অফিসের ঠিকানা:
আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ASB)
বাড়ি নং–৪২, রোড নং–৪এ, সেক্টর–১৭/ডি, উত্তরা (ই), ঢাকা–১২৩০
📍 (উত্তরা দক্ষিণ মেট্রোরেলের পূর্ব পাশে)

আলঝেইমারস রোগের নির্ণয় ঘোষণা করে রোনাল্ড রিগানের চিঠি”৫ নভেম্বর, ১৯৯৪আমার প্রিয় আমেরিকান জনগণ,সম্প্রতি আমাকে জানানো হয়...
26/11/2025

আলঝেইমারস রোগের নির্ণয় ঘোষণা করে রোনাল্ড রিগানের চিঠি”
৫ নভেম্বর, ১৯৯৪
আমার প্রিয় আমেরিকান জনগণ,
সম্প্রতি আমাকে জানানো হয়েছে যে আমি এখন সেই লাখো আমেরিকানের একজন, যারা আলঝেইমারস রোগে আক্রান্ত হবেন।
এই সংবাদ জানার পর ন্যান্সি ও আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে—ব্যক্তিগত নাগরিক হিসেবে আমরা কি এই বিষয়টি গোপন রাখব, নাকি জনগণের কাছে প্রকাশ করব।
এর আগে ন্যান্সি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং আমারও ক্যান্সারের অস্ত্রোপচার হয়েছে। তখন আমরা সবকিছু খোলামেলা জানিয়েছিলাম, যার ফলে জনসচেতনতা বেড়েছিল। অনেক মানুষ পরীক্ষা করিয়েছিলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা পেয়েছিলেন এবং সুস্থ জীবনে ফিরতে পেরেছিলেন।
সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা অনুভব করি—এই সংবাদটিও আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া জরুরি। আমাদের হৃদয় খুলে দিয়ে আমরা আশা করি এই রোগ সম্পর্কে আরও সচেতনতা সৃষ্টি হবে, এবং এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের প্রতি মানুষের বোঝাপড়া আরও গভীর হবে।
এই মুহূর্তে আমি নিজেকে বেশ ভালোই অনুভব করছি। ঈশ্বর আমাকে যতদিন এই পৃথিবীতে রাখবেন, আমি সেই দিনগুলো আগের মতোই কাটানোর ইচ্ছা রাখি। আমার প্রিয় ন্যান্সি ও পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে জীবনের পথচলা চালিয়ে যেতে চাই। প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ করব এবং বন্ধু ও সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখব।
দুঃখজনকভাবে, আলঝেইমারস রোগ যতই এগোতে থাকে, পরিবারের ওপর তত বড় বোঝা পড়ে। আমি শুধু চাইতাম—কোনোভাবে যদি ন্যান্সিকে এই কষ্ট থেকে রক্ষা করতে পারতাম। তবে সময় এলে, আপনাদের ভালোবাসা ও সহায়তার শক্তিতে তিনি বিশ্বাস ও সাহস নিয়ে সবকিছু মোকাবিলা করবেন—এ বিষয়ে আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী।
শেষে, আমাকে আপনার প্রেসিডেন্ট হিসেবে সেবা করার যে মহান সম্মান আপনি দিয়েছেন, তার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই। যখনই প্রভু আমাকে বাড়ি ডাকবেন, আমি এই দেশটির প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা এবং এর ভবিষ্যতের জন্য চিরন্তন আশাবাদ নিয়ে বিদায় নেব।
আমি এখন আমার জীবনের সূর্যাস্তের দিকে যাত্রা শুরু করছি। কিন্তু আমেরিকার জন্য সামনে সবসময়ই একটি উজ্জ্বল ভোর অপেক্ষা করছে—আমি জানি।
ধন্যবাদ, আমার প্রিয় বন্ধুরা। ঈশ্বর আপনাদের সর্বদা আশীর্বাদ করুন।
সদয়,
রোনাল্ড রিগান
Reagan’s Letter Announcing His Alzheimer’s Diagnosis
Nov. 5, 1994
My Fellow Americans,

I have recently been told that I am one of the millions of Americans who will be afflicted with Alzheimer’s Disease.

Upon learning this news, Nancy and I had to decide whether as private citizens we would keep this a private matter or whether we would make this news known in a public way.

In the past Nancy suffered from breast cancer and I had my cancer surgeries. We found through our open disclosures we were able to raise public awareness. We were happy that as a result many more people underwent testing. They were treated in early stages and able to return to normal, healthy lives.

So now, we feel it is important to share it with you. In opening our hearts, we hope this might promote greater awareness of this condition. Perhaps it will encourage a clearer understanding of the individuals and families who are affected by it.

At the moment I feel just fine. I intend to live the remainder of the years God gives me on this earth doing the things I have always done. I will continue to share life’s journey with my beloved Nancy and my family. I plan to enjoy the great outdoors and stay in touch with my friends and supporters.

Unfortunately, as Alzheimer’s Disease progresses, the family often bears a heavy burden. I only wish there was some way I could spare Nancy from this painful experience. When the time comes I am confident that with your help she will face it with faith and courage.

In closing let me thank you, the American people for giving me the great honor of allowing me to serve as your President. When the Lord calls me home, whenever that may be, I will leave with the greatest love for this country of ours and eternal optimism for its future.

I now begin the journey that will lead me into the sunset of my life. I know that for America there will always be a bright dawn ahead.

Thank you, my friends. May God always bless you.
Sincerely, Ronald Reagan

🎗️ ডিমেনশিয়া সচেতনতা: পথচলা শুরু হোক আমাকেই দিয়ে❌ সচেতনতার অভাব: এটিকে রোগ হিসেবে না দেখে বার্ধক্যের অংশ বলে ভুল করা।😔...
25/11/2025

🎗️ ডিমেনশিয়া সচেতনতা: পথচলা শুরু হোক আমাকেই দিয়ে

❌ সচেতনতার অভাব: এটিকে রোগ হিসেবে না দেখে বার্ধক্যের অংশ বলে ভুল করা।
😔 স্টিগমার অভিশাপ: আক্রান্তকে ‘পাগল’ বা ‘অভিশাপ’ মনে করে সমাজ থেকে দূরে ঠেলে দেওয়া।
💰 অর্থনৈতিক চাপ: চিকিৎসা ও যত্নের ব্যয়বহুল বোঝা পরিবারকে জর্জরিত করে।

ডিমেনশিয়া আক্রান্তদের প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়াতে আপনার অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন, আমরা সকলে মিলে এই মানবিক যাত্রায় এগিয়ে যাই।
আপনার একটি শেয়ার, একটি কথা একটি জীবনের পথ সহজ করতে পারে!
#ডিমেনশিয়া_সচেতনতা Awareness #মানবিক_যাত্রা #সহায়তা #সমাজসেবা #বাংলাদেশ

ভর্তি চলছে ৫ম ব্যাচেডিমেনশিয়া কেয়ার (লেভেল–৩) )Dementia Care level 3 প্রশিক্ষণ কোর্সবাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ডিমেনশিয়...
25/11/2025

ভর্তি চলছে ৫ম ব্যাচে
ডিমেনশিয়া কেয়ার (লেভেল–৩) )Dementia Care level 3 প্রশিক্ষণ কোর্স
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ডিমেনশিয়া কেয়ার (লেভেল–৩) প্রশিক্ষণ কোর্স শুরু হতে যাচ্ছে।
আয়োজনে: আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ASB)
যেখানে আপনি পেশাদার ডিমেনশিয়া কেয়ারগিভার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারবেন।
এই কোর্সটি অনলাইন ও অফলাইন উভয় মাধ্যমেই সম্পন্ন করা যাবে।
কোর্স শেষে পরীক্ষায় সফল প্রার্থীদের প্রদান করা হবে
👉 জাতীয় দক্ষতা সার্টিফিকেট (National Skills Certificate)
প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয় ও জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (NSDA) কর্তৃক অনুমোদিত।
🎓 ভর্তি সংক্রান্ত তথ্যাবলী
শিক্ষাগত যোগ্যতা:
এইচ.এস.সি বা তদূর্ধ্ব ডিগ্রিধারী
বয়স:২০ থেকে ৬০ বছর
অগ্রাধিকার:
ডিমেনশিয়া যত্নে অভিজ্ঞ প্রার্থীরা
কম্পিউটার বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা থাকা আবশ্যক
ইংরেজিতে কথা বলা ও লেখায় দক্ষ প্রার্থীরা
মৌখিক ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক

🕒 ক্লাসের সময়সূচি:
সপ্তাহে ৩ দিন: বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার
সময়: বিকাল ৩:০০টা থেকে ৬:০০টা পর্যন্ত

📄 ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

১️. দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
২️. এনআইডি (১ কপি ফটোকপি)
৩️. শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের ফটোকপি
৪️. অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেটের ফটোকপি (যদি থাকে)

📞 বিস্তারিত তথ্য ও যোগাযোগ:
হেল্পলাইন: 01720498197 / 01906246621
ইমেইল: info@alzheimerbd.org

অফিসের ঠিকানা:
আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ASB)
বাড়ি নং–৪২, রোড নং–৪এ, সেক্টর–১৭/ডি, উত্তরা (ই), ঢাকা–১২৩০
📍 (উত্তরা দক্ষিণ মেট্রোরেলের পূর্ব পাশে)

ঔষধবিহীন যত্নে প্রদীপ্ত জীবন: ড. ফৌজিয়া বেগমের ডিমেনশিয়া জয়ের আখ্যানডিমেনশিয়া নিরাময় নয়, যত্নেই জীবনের সৌন্দর্য।ডি...
24/11/2025

ঔষধবিহীন যত্নে প্রদীপ্ত জীবন: ড. ফৌজিয়া বেগমের ডিমেনশিয়া জয়ের আখ্যান
ডিমেনশিয়া নিরাময় নয়, যত্নেই জীবনের সৌন্দর্য।
ডিমেনশিয়া এবং আলঝেইমর সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ASB) পক্ষ থেকে, আমরা প্রবীণ বিজ্ঞানী ড. ফৌজিয়া বেগম (৭৪)-এর জীবনযাত্রার অনুপ্রেরণামূলক গল্পটি তুলে ধরছি।
যুক্তরাজ্য (UK) প্রবাসী শারমিন আপার মা, ড. ফৌজিয়া বেগম, গত ৭ বছর ধরে ডিমেনশিয়াতে ভুগছেন এবং তাঁর মধ্যে পারকিনসন্স-সংশ্লিষ্ট লক্ষণও দেখা যাচ্ছে। তবে, প্রথাগত ঔষধ ছাড়াই তাঁর জীবনযাপন প্রক্রিয়াটি আমাদের সকলের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী ড. ফৌজিয়া বেগম তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে গবেষণায়। কিন্তু ডিমেনশিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁর কন্যা শারমিন আপা, যিনি UK-তে বহু পরিচিতজনের মধ্যে এই রোগের বিস্তার দেখেছেন, একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য অনুধাবন করেন—ডিমেনশিয়া নিরাময়ের কার্যকর কোনো ঔষধ নেই।
UK-তে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি এবং গভীর বোধগম্যতার মাধ্যমে শারমিন আপা একটি ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ খুঁজে নিতে শিখেছেন। এই দৃষ্টিভঙ্গিই তাঁকে তাঁর মাকে সামগ্রিকভাবে (holistically) এবং ঔষধবিহীনভাবে যত্ন নিতে সাহায্য করছে।
২০২৩ সালের আগস্ট মাসে যখন ড. ফৌজিয়া বেগম তাঁর স্বামী ও কর্নেল ডা.মাহবুব ভাইয়ের সাথে আমাদের ডিমেনশিয়া সেন্টারে আসেন, তখন ডা.মাহবুব এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, "আপনারা মাকে কী ঔষধ খাওয়ান?" তাঁর দৃঢ় বিশ্বাসপূর্ণ উত্তর ছিল:
“যে রোগের জন্য ঔষধ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি, তাহলে কোনো ঔষধ খাওয়াবো?” ডা.মাহবুব ভাইয়ের প্রত্যয়ী উত্তরটি আমাদের চিরাচরিত ধারণাকে নাড়িয়ে দেয়।
আমরা যারা ডিমেনশিয়া আক্রান্ত মানুষের সাথে বসবাস করি, আমাদের অনেকেরই বদ্ধমূল ধারণা -রোগ হয়েছে মানেই ঔষধ আছে। এই অন্ধবিশ্বাস থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের প্রিয়জনের সঠিক যত্নের দিকে অধিক মনোযোগী হতে হবে। রোগের দিকে না তাকিয়ে, আমাদের ডিমেনশিয়া আক্রান্ত প্রিয়জনের দিকে ভালোবাসার দৃষ্টি দিতে হবে।
শারমিন আপা সম্প্রতি কগনিটিভ স্টিমুলেশন থেরাপি (CST), ফিজিওথেরাপি সহ পুনর্বাসনমূলক ব্যায়াম করাতে সক্ষম প্রশিক্ষিত কেয়ারগিভার খুঁজছিলেন। তাঁকে নিশ্চিত করা হয়, আমাদের সোসাইটিতে ডিমেনশিয়া কেয়ার লেভেল ৩ সরকারি সার্টিফিকেট প্রাপ্ত ডিমেনশিয়া কেয়ার এক্সপার্ট রয়েছে।
বর্তমানে, আমাদের দুজন কেয়ার এক্সপার্ট শারমিন আপার বাসায় তার মায়ের জন্য সপ্তাহে দু'দিন হোম-বেইসড কগনিটিভ থেরাপি সেবা প্রদান করছেন।ড. ফৌজিয়া বেগম এখনো অনেক সক্রিয় এবং ছোট ছোট কাজ নিজেই করেন।
* কেয়ার এক্সপার্টদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে শারমিন আপা তাঁদের "ডিমেনশিয়া কেয়ারের ডাক্তার" হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর সম্মান ও স্নেহে কেয়ার এক্সপার্টরা অত্যন্ত অনুপ্রাণিত ও আনন্দিত।
ড. ফৌজিয়া বেগম ডিমেনশিয়ার জন্য কোনো ঔষধ ছাড়াই খুব ভালোভাবে জীবনযাপন করছেন। তিনি রাতে ভালো ঘুমান, গান শুনতে ভালোবাসেন এবং নিয়মিত পবিত্র কুরআন থেকে সুরা পাঠ করেন। এটি প্রমাণ করে, ভালোবাসা, সম্মান এবং সঠিক থেরাপিউটিক যত্নই এই চ্যালেঞ্জিং যাত্রায় ঔষধের চেয়েও বেশি কার্যকর।
আমরা দৃঢ়ভাবে আপনাকে বলতে চাই—
আপনারা একা নন! আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ASB) সহায়তার জন্য আপনাদের পাশে সর্বদা থাকবে।
ডিমেনশিয়া যত্নে বিস্তারিত জানতে যোগযোগ করুন।
আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ASB)
বাড়ি নং-৪২, রোড নং-৪এ, সেক্টর-১৭/ডি, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০
(উত্তরা দক্ষিণ মেট্রোরেল স্টেশনের পূর্ব পাশে)
হেল্পলাইন: +8801720-498197 / +8801906-246621
ধন্যবাদান্তে,
টিম, আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ASB

A Radiant Life Through Non-Pharmacological Care:
The Inspiring Journey of Dr. Fauzia Begum’s Triumph Over Dementia .

Dementia cannot be cured, yet life remains profoundly beautiful with the right care.

On behalf of the Dementia and Alzheimer’s Society of Bangladesh (ASB), we are honored to share the inspiring life story of 74-year-old retired scientist Dr. Fauzia Begum.

Dr. Begum, mother of UK-based Sharmin Apa, has been living with dementia for the past 7 years, along with emerging Parkinsonian features. But what makes her journey truly extraordinary is the way she continues to live a meaningful and dignified life—without relying on conventional medications.

A devoted researcher throughout her career at the Science Laboratory, Dr. Begum dedicated her life to scientific exploration. After her dementia diagnosis, her daughter Sharmin Apa—who has witnessed the widespread impact of the disease in the UK—came to a powerful realization:
there is still no effective medication that can cure dementia.

Guided by global experience, deep understanding, and personal insight, Sharmin Apa embraced a new perspective—one that prioritizes holistic, non-pharmacological care. This mindset empowered her to support her mother with compassion, patience, and scientifically informed rehabilitative practices.

In August 2023, when Dr. Fauzia Begum visited our Dementia Centre with her husband and our respected Colonel Dr. Mahbub, he was asked a simple question:
“What medications is she taking?”
His firm and thoughtful reply moved us deeply:

“Why should we give medication for a disease that still has no cure?”

His response challenged a common misconception.
Many of us assume: If there is a disease, there must be a medicine.
But dementia requires us to shift our focus—from treating the disease to caring for the person. From fear to understanding. From medication to meaningful connection.

Recently, Sharmin Apa sought trained caregivers skilled in Cognitive Stimulation Therapy (CST), physiotherapy, and rehabilitative exercises. She was reassured to learn that ASB has government-certified Dementia Care Level-3 experts trained specifically for this purpose.

Today, two of our certified care experts visit her home twice a week to provide personalized, home-based cognitive therapy for Dr. Begum. She remains active, engaged, and capable of performing many daily tasks independently.

When introducing our caregivers to her family, Sharmin Apa affectionately referred to them as “the doctors of dementia care.”
Her warmth, respect, and trust have deeply encouraged our care experts.

Without any dementia medications, Dr. Fauzia Begum is living remarkably well. She sleeps peacefully at night, enjoys listening to music, and regularly recites verses from the Holy Qur’an. Her story stands as a powerful testament that love, respect, structure, and therapeutic care can be more impactful than medication in this challenging journey.

**We want you to know—

You are not alone.**
The Alzheimer’s Society of Bangladesh (ASB) stands beside you, always ready to support.

For more information on dementia care, contact:

Alzheimer’s Society of Bangladesh (ASB)
House 42, Road 4A, Sector 17/D, Uttara, Dhaka-1230
(East side of Uttara South Metro Rail Station)
Helpline: +8801720-498197 / +8801906-246621

With warm regards,
Team, Alzheimer Society of Bangladesh (ASB)

💖 ডিমেনশিয়া সচেতনতা: পথচলা শুরু হোক আমাকেই দিয়েগতকাল আপনাদের বাসায় কিছুটা সময় আমাদের খুব ভালো কেটেছে। ডিমেনশিয়া আক্...
23/11/2025

💖 ডিমেনশিয়া সচেতনতা: পথচলা শুরু হোক আমাকেই দিয়ে
গতকাল আপনাদের বাসায় কিছুটা সময় আমাদের খুব ভালো কেটেছে। ডিমেনশিয়া আক্রান্ত প্রিয়জনের যত্ন নেওয়া একটি কঠিন কিন্তু গভীর ভালোবাসার কাজ। মনে রাখবেন, আপনারা একা নন।
যাঁদের ডিমেনশিয়া (Dementia) ধরা পড়ে, তাঁদের মস্তিষ্কের ক্ষয় খুব ধীরে ধীরে ঘটে। ব্রেনের যে অংশগুলো ভালো থাকে, সেগুলোকে সচল রাখা অত্যন্ত জরুরি। বিভিন্ন উদ্দীপনামূলক কর্মকাণ্ডের (Activities) মাধ্যমে ডিমেনশিয়া ক্ষয়ের গতি ধীর করা সম্ভব।
🧠 ডিমেনশিয়া যত্ন: ব্রেন উদ্দীপনার জন্য কার্যকরী পরামর্শ
আপনারা দৈনন্দিন রুটিনের সাথে নিচের বিষয়গুলো যুক্ত করতে পারেন:

১। *প্রকৃতির সাথে সংযোগ*
পার্কে হাঁটতে নিয়ে যান। আশেপাশের মানুষ, পাখি, গাছের ফুল ও ফল দেখতে দিন। ছোটবেলায় আমরা প্রকৃতির সাথে বেড়ে উঠেছি। এই দৃশ্যগুলি তাঁর ছোটবেলার স্মৃতি মনে করিয়ে দেবে এবং তিনি স্বস্তি বোধ করবেন। |
২‌ *।পরিচিত খেলা ও বিনোদন |* বাসায় এমন পূর্বপরিচিত ও স্থানীয় খেলা খেলুন যা তিনি ছোটবেলা থেকে জানেন।
বিদেশী বা নতুন খেলায় তিনি আগ্রহী নাও হতে পারেন। |
৩। ব্যক্তিগত শখ ও আগ্রহ | তাঁর পছন্দের কবিতা, গান, গল্প বা অন্যান্য শখকে গুরুত্ব দিন। এগুলো তাঁকে আনন্দ দেবে এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করবে। **থেরাপিউটিক পদ্ধতি* (Therapeutic Approaches)
ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য এবং আচরণগত সমস্যা মোকাবিলায় এই থেরাপিগুলো সহায়ক:
* *১। স্মৃতিচারণ থেরাপি (Reminiscence Therapy):*
* বাসায় একটি 'ছোট স্মৃতি কর্নার' তৈরি করুন।
* নিয়মিত পুরোনো ছবি, পারিবারিক ভিডিও দেখান এবং সেই সময়ের গল্প করুন।
* ২। *জ্ঞানীয় আচরণগত থেরাপি* (Cognitive Behaviour Therapy - CBT):
* এটি দুশ্চিন্তা (Anxiety), উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা (Depression) সামলাতে সাহায্য করে।
* (প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন)।
* *৩। সংবেদনশীল উদ্দীপনা* থেরাপি (Sensory Stimulation Therapy):
* এটি উত্তেজনা বা অ্যাজিটেশন কমাতে এবং মাইন্ডফুলনেস/মনোযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। (যেমন: সুগন্ধ, কোমল স্পর্শ বা শান্তিদায়ক আলো ব্যবহার)।
* ৪। *সঙ্গীত ও শিল্পকলা থেরাপি* (Music and Art Therapy):
* যদি আপনি ইতিমধ্যে এটি করে থাকেন তবে এটি চালিয়ে যান। সঙ্গীত অনেক স্মৃতি জাগিয়ে তুলতে এবং ইতিবাচক অনুভূতি তৈরি করতে সাহায্য করে। *যত্নশীলদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ধাপ*
* পরিবার এবং যত্নশীলদের প্রশিক্ষণ (Family + Caregiver Training):
* ডিমেনশিয়ার যত্ন একটি দলগত কাজ। পরিবারের সদস্য এবং যত্নশীলদের সঠিক দক্ষতা ও তথ্য দিয়ে প্রশিক্ষিত করা প্রয়োজন। নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কেও সচেতন থাকুন।
> মনে রাখবেন: ডিমেনশিয়ার কারণে তাঁর মস্তিষ্কের ক্ষয় হচ্ছে, কিন্তু তাঁর আবেগ ও ভালোবাসার ক্ষমতা এখনো সজীব। ধৈর্য, ভালোবাসা এবং নিয়মিত উদ্দীপনা তাঁর জীবনকে অনেক সহজ করে তুলবে।

আলঝেইমার সোসাইটি সহায়তার জন্য আপনাদের পাশে থাকবে।
ধন্যবাদ

ডিমেনশিয়ার সাথে বসবাসকারী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা!দেশের নজরুলসংগীতের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র শবনম মুশতা...
19/11/2025

ডিমেনশিয়ার সাথে বসবাসকারী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা!

দেশের নজরুলসংগীতের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র শবনম মুশতারি সম্বন্ধে একদিন ফলাও করে খবর বেরুলো— কাউকে চিনতে পারছেন না তিনি! জানা গেল, তিনি ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। একই সমস্যায় আক্রান্ত বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সহধর্মিণীও। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় এক টিভি সাক্ষাৎকারে খুব আক্ষেপ করে বলছিলেন, “আমাকে ছাড়া সে আর কাউকেই চেনে না। আমি চলে গেলে তার কী হবে!” এ দুটো উদাহরণ সমাজের স্বচ্ছল ও আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার কাছাকাছি মানুষের। বাস্তবতা হলো, ডিমেনশিয়ার কবলে আজ সকল শ্রেণী–পেশা ও শহর থেকে অজপাড়া গায়ের প্রবীণ জনগোষ্ঠী।
এমন চেনা–অচেনা লক্ষকোটি মানুষ সারা পৃথিবীব্যাপী ভুগছেন মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত সমস্যা ডিমেনশিয়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সাল পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে ডিমেনশিয়ার সাথে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ৫৭ মিলিয়ন, যার মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ বসবাস করছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। সর্বশেষ গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, দেশের বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর শতকরা ৮ শতাংশ ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন— অর্থাৎ প্রতি ১২ জন বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর একজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ডিমেনশিয়া হলো পৃথিবীব্যাপী সকল মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে ৭ম প্রধান কারণ। সারা পৃথিবীতে এবং একই সাথে বাংলাদেশেও ডিমেনশিয়ার প্রকোপ ক্রমশই বেড়ে চলেছে।
ডিমেনশিয়া যেহেতু স্মৃতিশক্তি এবং স্বাভাবিক চিন্তা ও আচরণ করার ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়, তাই এ নিয়ে রয়েছে প্রচুর ভ্রান্ত ধারণা বা কলঙ্ক (স্টিগমা)। বেশিরভাগ মানুষই মনে করে যে এটি মতিভ্রম কিংবা উন্মাদ হয়ে যাওয়ার একটি ধরণ। কেউ বা একে অতীন্দ্রিয় শক্তির কালো ছায়া কিংবা পাপের ফল হিসেবে গণ্য করে। এর ফলে এদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি থাকে অদ্ভুত ধরনের; যার বেশিরভাগই নেতিবাচক। এর কারণে বেশিরভাগ পরিবারই তাদের আপনজনের এ ধরণের সমস্যার কথা যতদিন পারেন গোপন রাখেন। আর এ বিলম্বের ফলে অসামান্য ক্ষতি হয়ে যায় ডিমেনশিয়ার সাথে বসবাসকারী ব্যক্তিদের। এ বিলম্বে মস্তিষ্কের ক্ষয় আরও বেড়ে যায়। বেশিরভাগ ডিমেনশিয়ার সাথে বসবাসকারী ব্যক্তি ও তাদের পরিবার যাপন করতে থাকেন এক অসহনীয় জীবন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৭ সালে ডিমেনশিয়াকে জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে প্রাধান্য দিতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অন্তত ৭৫ শতাংশ রাষ্ট্রকে ২০২৫ সালের মধ্যে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ ও এর যত্ন সম্পর্কিত রাষ্ট্রীয় নীতিমালা ও জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত মাত্র ২৫ ভাগ সদস্য রাষ্ট্র ডিমেনশিয়া নীতিমালা প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়েছে বা করেছে। বাংলাদেশে এ সংক্রান্ত কোনো নীতিমালা প্রণয়নে এখনো এগিয়ে আসা হয়নি। যেহেতু আমাদের দেশে বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলছে এবং এর সাথে ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যাও, তাই এর সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আর্থিক চাপও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রায়শই দেখা যায়, এ জনগোষ্ঠীর সামাজিক, আর্থিক ও আইনগত অধিকার পদে পদে লঙ্ঘিত হয়। তাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো এ জনগোষ্ঠীকে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা প্রদানের মাধ্যমে তাদের শেষ দিনগুলোকে আরামদায়ক করে তোলা।
বাংলাদেশে প্রণীত হয়েছে প্রবীণ নীতিমালা, পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন, মানসিক স্বাস্থ্য আইন ও নীতিমালা। রয়েছে দুর্বল ও অসহায় জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী নিশ্চিত করার নানা আইন–কানুন ও নীতিমালা। কিন্তু এসবের কোনোটিতেই ঠাঁই হয়নি ডিমেনশিয়া ও এর সাথে জড়িত আলঝেইমারসহ অন্যান্য ধরণের ডিমেনশিয়া সংক্রান্ত জটিলতায় বসবাসকারী ব্যক্তিদের সুরক্ষার কোনো বিধান। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩–তে ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতার সুরক্ষার কথা বললেও বলা হয়নি বার্ধক্যজনিত অক্ষমতায় ভোগা ব্যক্তিদের সুরক্ষার কথা। সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক যে জটিল ০৬টি রোগের জন্য নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়, সেখানে নেই তৃতীয় পর্যায়ে উপনীত হয়ে, স্মৃতিশক্তিসহ চিন্তা করার সকল শক্তি এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ও শারীরিক সকল ধরণের সক্ষমতা হারিয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর জন্য দিনগোনা ডিমেনশিয়ার সাথে বসবাসকারী ব্যক্তিদের সুরক্ষার কথা। অথচ ডিমেনশিয়ার পারিবারিক, আর্থিক, সামাজিক ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর চাপ উক্ত ০৬টি রোগের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়; বরং বেশিই। তাই সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান— বার্ধক্যে উপনীত হওয়া সকল ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে অসহায় এ অংশটিকে সকল ধরণের সামাজিক সুরক্ষার আওতায় নিয়ে এসে তাদের শেষ দিনগুলোতে পাশে দাঁড়ানোর।
এবার আসি আইনগত সুরক্ষার কথায়। বাস্তব অভিজ্ঞতায় প্রায়শই দেখা যায় যে সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের অবহেলায় ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যান বিপুল ধনসম্পত্তির মালিক হয়েও ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত অনেক ব্যক্তি। শিকার হন নির্যাতনের। রাজধানী ঢাকারই এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিকে চিনি, যার একমাত্র পুত্র দিনের পর দিন এক ফোঁটা জল পর্যন্ত মুখে না দিয়ে তিলে তিলে মেরেছে নিজ পিতাকে। অন্য সন্তানেরা দূর থেকে কেবল চেয়ে চেয়ে দেখেছে, আর বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বিচার পাননি। এখানে যেমন আছে আইনের শাসনের অভাব, তেমনি আছে আইনেরও নানা সমস্যা। যেমন, সন্তানের অবহেলা বা নির্যাতনের কারণে কোনো পিতার মৃত্যু হলে সেই সন্তান কি পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন কিনা— প্রচলিত বার্ধক্য বিষয়ক আইনে এ নিয়ে স্পষ্ট কোনো বিধান নেই। এ ক্ষেত্রে দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় উপাদানের আলোকে বিচার এবং ফৌজদারি অপরাধের প্রমাণ সাপেক্ষে উত্তরাধিকার বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত প্রদানের এখতিয়ার রাখে। এ বিষয়ে প্রচলিত আইনে সুস্পষ্ট বিধান এনে সংশোধনীর সুপারিশ করছি। একজন ডিমেনশিয়ার সাথে বসবাসকারী ব্যক্তি যেহেতু তার যৌক্তিক চিন্তার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন, এ ক্ষেত্রে তার সম্পত্তির বিষয়ে মানসিক স্বাস্থ্য আইনে কিছুটা বলা হলেও তার চিকিৎসা সিদ্ধান্ত ও অক্ষমতা-পরবর্তী চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ নিয়ে কোনো সুরক্ষা আইনে স্পষ্ট নিশ্চিত করা হয়নি।
ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির ভরণপোষণ, যত্ন ও চিকিৎসা নিয়ে সন্তানদের মাঝে শুরু হয় পারস্পারিক দায় চাপানোর প্রবণতা- কে নেবে এ দায়! শেষমেশ কোনো এক সন্তানকেই হয়তো মানবিক বিবেচনায় গ্রহণ করতে হয় পিতার বা মাতার সার্বিক ভার। দেওয়ানি আইনে পিতার মৃত্যুর পর তার যেকোনো দেনা ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ব্যয় সন্তানের দেনা হিসেবে বর্তায় এবং তা পিতার সম্পত্তি থেকে ব্যয় করা আইনত বাধ্যতামূলক। এর আলোকে পিতার ব্যয়ভার যদি এক সন্তান বহন করেন, সেক্ষেত্রে এ ব্যয় কেন অন্য সন্তানদের উপর পিতার দেনা হিসেবে বর্তাবে না? এ বিষয়ে পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইনে স্পষ্ট ধারা সন্নিবেশ করা একান্ত জরুরি।
ডিমেনশিয়ার সাথে বসবাসকারী ব্যক্তিরা তাদের সোনালি যৌবনের মেধা, শক্তি, সামর্থ্য একসময় এ দেশের কল্যাণেই ব্যয় করেছেন। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে দিয়েছেন অনেক কিছু। এখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাদের মৌলিক সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে আইনগত ও আর্থ-সামজিক সুরক্ষায় নীতিগত সিদ্বান্ত গ্রহণ করা।

ইমদাদুল হক তালুকদার
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

২০২৬: এক নতুন অধ্যায়! 🌟​কিছু বছর ক্যালেন্ডারের সাধারণ সংখ্যা নয়, বরং একেকটি মাইলফলক। ২০২৬ আমাদের কাছে তেমনই একটি বছর।​এই...
18/11/2025

২০২৬: এক নতুন অধ্যায়! 🌟
​কিছু বছর ক্যালেন্ডারের সাধারণ সংখ্যা নয়, বরং একেকটি মাইলফলক। ২০২৬ আমাদের কাছে তেমনই একটি বছর।
​এই বছর আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ASB) ডিমেনশিয়া নিয়ে কাজের দুই দশক—অর্থাৎ দীর্ঘ ২০ বছর—পূর্ণ করছে! এটি বিশ্বাস, সংগ্রাম, শেখা আর পরিবর্তনের এক গৌরবময় যাত্রা।
​এই বিশেষ মুহূর্তেই জন্ম নিয়েছে আমাদের নতুন বইটি:
📚 “ডিমেনশিয়া: শূন্য থেকে শুরু” (Dementia: Starting from the Scratch)

​এটি কেবল একটি বই নয়—এটি সেই দুই অনুভূতির মিলন-মুহূর্ত, যা কখনো আকস্মিকভাবে আসে, আবার কখনো দীর্ঘদিনের গোপন প্রস্তুতি থেকে।
​আমরা বিশ্বাস করি:
ডিমেনশিয়া কোনো রহস্য নয়,
কোনো অভিশাপও নয়—
এটি মস্তিষ্কের কোষের যাত্রাপথ বদলে যাওয়া, আর সেই সাথে বদলে যাওয়া একটি পরিবারিক বিশ্ব।
​আমাদের এই নতুন প্রকাশনা ডিমেনশিয়াকে ভয় নয়, বরং জ্ঞান আর ভালোবাসা দিয়ে মোকাবিলা করার শক্তি দেবে।
​আমাদের ২০ বছরের যাত্রায় সঙ্গী হওয়ার জন্য ধন্যবাদ। বইটি পড়ুন, সচেতনতা বাড়ান এবং প্রতিটি পরিবারকে পাশে থাকার বার্তা দিন।
​ #ডিমেনশিয়া #শূন্যথেকেশুরু #২০বছরপূর্তি #স্বাস্থ্যসচেতনতা

💊 ডিমেনশিয়া কেয়ারে ওষুধবিহীন আচরণ ব্যবস্থাপনা: গল্পের মতো এক পথনির্দেশিকাডিমেনশিয়া কেয়ারের জগতে আমরা যে আচরণগত চ্যালে...
18/11/2025

💊 ডিমেনশিয়া কেয়ারে ওষুধবিহীন আচরণ ব্যবস্থাপনা: গল্পের মতো এক পথনির্দেশিকা

ডিমেনশিয়া কেয়ারের জগতে আমরা যে আচরণগত চ্যালেঞ্জ দেখি—অস্থির হাঁটাহাঁটি, আকস্মিক রাগ, চুপ করে গুটিয়ে থাকা, বা হঠাৎ আতঙ্কিত হয়ে পড়া—এসব আসলে কোনো গোলমাল নয়। এগুলো হলো একেকটি নীরব ভাষা, যাকে ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিরা ব্যবহার করেন তাদের অজানা ভয়, অস্বস্তি বা চাহিদা প্রকাশ করতে।
অনেকটা যেন—শব্দ হারিয়ে যাওয়া মানুষটি আচরণ দিয়ে গল্প বলতে চাইছেন।

আচরণের ভাষা: সমস্যা নয়, বার্তা

প্রতিটি আচরণের আড়ালে থাকে একটি না-জানা দরজা। দরজার ওপাশে লুকিয়ে থাকতে পারে—

নিরাপত্তার খোঁজ: ভয়, হারিয়ে যাওয়ার অনুভূতি, অচেনা পরিবেশ

সংযোগের প্রয়োজন: একাকীত্ব, ভুলে যাওয়া পরিচিত মুখের অভাব

দেহের মৌলিক চাহিদা: ব্যথা, খিদে, অতিরিক্ত গরম–ঠান্ডা, অথবা ক্লান্তি

কিন্তু কেয়ার হোম বা হাসপাতালে অনেক সময় প্রথম প্রতিক্রিয়াই হয়ে দাঁড়ায়—সেডেটিভ ওষুধ।
ওষুধ অবশ্যই কখনো কখনো প্রয়োজন হয়, কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহার অনেক সময় আচরণকে দমিয়ে দেয়, রোগীকে নয়।
তাই হৃদয়ের ভাষা বোঝার এই যাত্রায় ওষুধবিহীন পথই বেশি নিরাপদ, কার্যকর এবং সম্মানজনক।

🔍 প্রথম কাজ: আচরণের গল্প শোনা

ডিমেনশিয়া কেয়ারের সবচেয়ে সুন্দর ও চ্যালেঞ্জিং অংশ হলো—ধৈর্য ধরে আচরণের দিকে তাকানো, এবং খুঁজে বের করা "কেন"।

যেভাবে গল্পটা খুলে যায়—

১. আচরণের আগ-পিছ দেখা
ঘটনার আগে কী হয়েছিল? কারা ছিল? ঘরে আলো কেমন ছিল?
অনেক সময় খুব সাধারণ বিষয়—একটি জোরে দরজা বন্ধ হওয়া, তীব্র আলো, বা অচেনা কণ্ঠ—ট্রিগার হয়ে দাঁড়ায়।

২. প্যাটার্ন খোঁজা
অনেক ব্যক্তি বিকেলবেলা বেশি দুর্বোধ্য আচরণ দেখান—এটাকে বলা হয় সানডাউনিং।
আলো কমে যাওয়া, শরীরের প্রাকৃতিক ক্লান্তি—সব মিলিয়ে আচরণ তীব্র হয়।

৩. ব্যথা খুঁজে দেখা
ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিরা অনেক সময় ব্যথা বলতে পারেন না।
তাই আচরণের মাধ্যমে ব্যথার গল্প ফুটে ওঠে: কপাল কুঁচকানো, চুপচাপ হয়ে যাওয়া, বা হঠাৎ বিরক্তি।

✔️ ডিমেনশিয়ায় সোনার নিয়ম: Validation (মান্যতা দেওয়া)

ডিমেনশিয়া কেয়ারে সবচেয়ে বড় ভুল হলো তর্ক করা।
আর সবচেয়ে বড় শক্তি হলো অনুভূতির মান্যতা দেওয়া।

Validation কী?
এটি এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে আমরা ব্যক্তির কথাকে “সত্য-মিথ্যা” দিয়ে বিচার করি না; বরং তার অনুভূতিকে সম্মান দিই।

উদাহরণ:

যদি কেউ বলেন—
“আমি বাড়ি যেতে চাই।”

তর্কের ভাষা:
“এটাই তো আপনার বাড়ি! আপনি ভুল বলছেন।”
ফল: অস্থিরতা আরও বাড়ে।

Validation-এর ভাষা:
“আপনি কি বাড়ির মতো নিরাপদ জায়গায় থাকতে চাইছেন?”
ফল: ভয় কমে, সান্ত্বনা তৈরি হয়।

একটি সহজ নিয়ম মনে রাখা যায়—
👉 তথ্য নয়, অনুভূতি ঠিক রাখুন।
ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি বাস্তব নয়, অনুভূতির ওপর নির্ভর করেন।

🎯 ওষুধবিহীন তিনটি কার্যকর কৌশল
১. আরাম ও সংযোগ (Comfort & Connection)

কোমল স্বর

পরিচিত সঙ্গীত

প্রিয় সাবানের গন্ধ

পুরনো অ্যালবামের ছবি

এই ছোট ছোট জিনিসই অনেক সময় হৃদয়কে শান্ত করতে ওষুধের চেয়েও শক্তিশালী কাজ করে।

২. অর্থবহ কাজ (Meaningful Activities)

একঘেয়েমি আচরণ বাড়ায়।
তাই কাজ দিন যা ব্যক্তির অতীতের সঙ্গে মেলে:

পুরনো শিক্ষকের জন্য খাতা গুছানো

গৃহিণীর জন্য তোয়ালে ভাঁজ করা

কৃষকের জন্য টবের গাছ দেখা

বাবুর্চির জন্য ছোট সবজি ধোয়া

মানুষ মর্যাদা পেলে আচরণ নরম হয়।

৩. পরিবেশ ও ডিজাইন (Environment & Design)

ভালো আলো

কম অগোছালো স্থান

স্পষ্ট কনট্রাস্ট (দেওয়াল–মেঝে, দরজা–পথ)

কম শব্দ

ডিমেনশিয়া-সহায়ক পরিবেশ আচরণকে ৩০–৪০% পর্যন্ত কমাতে পারে।

⚠️ পলিফার্মাসি ও ড্রাগ ইন্টারঅ্যাকশন: এক নীরব ঝুঁকি

ডিমেনশিয়া কেয়ারের দুটি বড় ঝুঁকি হলো—

১. পলিফার্মাসি (Polypharmacy)

একজন ব্যক্তি যদি একসাথে ৫ বা তার বেশি ওষুধ খান—
➡ বিভ্রান্তি
➡ পড়ার ঝুঁকি
➡ সাইড ইফেক্ট
সবই বাড়তে পারে।

২. ড্রাগ ইন্টারঅ্যাকশন

এক ওষুধ আরেকটি ওষুধের প্রভাবকে পরিবর্তন করলে—
➡ অতিরিক্ত ঘুম
➡ মাথা ঘোরা
➡ আচরণ আরও খারাপ হওয়া
এসব ঘটে।

তাই যতটা সম্ভব—
ওষুধ কম, মনোযোগ বেশি।

শেষ কথা: আচরণের আড়ালে মানুষটিকে খুঁজে পাওয়া

ডিমেনশিয়া কেয়ারে আচরণ যেন এক ধরনের বন্ধ দরজা।
ওষুধ সেই দরজাকে চুপ করায়, কিন্তু খোলে না।
খুলে দিতে হলে দরকার—
শোনা, দেখা, বোঝা এবং ধৈর্য ধরে পাশে থাকা।

ওষুধবিহীন যত্ন মানে শুধু পদ্ধতি নয়—
এটি হলো এক মানুষের ভেতরের গল্পকে সম্মান করার শিল্প ।
ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতিটি আচরণেরই একটি অর্থ আছে-যদিও তা খুঁজে পেতে কখনও গোয়েন্দাগিরি করতে হয়। অনেক সময় যে আচরণটিকে আগ্রাসন মনে হয়, তা আসলে গভীর ভয় বা ব্যথার প্রকাশ।

নিরব যুদ্ধের সৈনিকলেখক: ডা. বেনজির জাহাঙ্গীরদুঃখজনক হলেও সত্য, আমি একজন ডাক্তার হবার পরও ডিমেনশিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জ্...
16/11/2025

নিরব যুদ্ধের সৈনিক
লেখক: ডা. বেনজির জাহাঙ্গীর
দুঃখজনক হলেও সত্য, আমি একজন ডাক্তার হবার পরও ডিমেনশিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান জ্ঞান না থাকতে তাই কখনও বুঝতে পারিনি যে আমার মা অল্প অল্প করে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ২০০৯ সালে আমার মা চাকরি থেকে অবসর নিলেন। এরপর থেকে আমি কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম, যা আমরা প্রথমে স্বাভাবিক ধরে নিয়েছিলাম-যেমন বারবার গোসল করা, সামাজিক দূরত্ব তৈরি করা, এবং নির্দিষ্ট রুটিন কঠোরভাবে মেনে চলা, যেমন প্রতিদিন ঠিক ১০ টায় ঘুমানো।
তিনি বারবার ফোন দিতেন এবং একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতেন। আমি লক্ষ্য করলাম, তিনি দৈনন্দিন কাজ যেমন খাওয়া, নাম মনে রাখা, হিসাব করা ভুলে যাচ্ছেন। পছন্দের কাজ যেমন পত্রিকা বা বই পড়া কমে গিয়েছিল। বিশেষ করে বিকেলে হাঁটাচলা করতেন না। চিকিৎসার জন্য কোনো টেস্ট করালেও সেটা করতেন না। অল্পতেই বিরক্ত হয়ে সংক্ষেপে উত্তর দিতেন।

মা স্ট্রোক করলেন ২০২৩ সালের মার্চে। স্ট্রোকের পর তার ডান সাইড প্যারালাইসিস হয়ে গেল। ফিজিওথেরাপি ও ঔষুধের মাধ্যমে কিছুটা উন্নতি হলেও তিনি পুরোপুরি স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা, নিজে বসা, খাওয়া, গোসল করতে পারছেন না। গত তিন বছর ধরে মা বিছানায় পড়ে আছেন। এখন তিনি এক শিশুর মতো আমার উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। সারাক্ষণ নাম ধরে ডাকাডাকি করতে থাকেন আমাকে।

সময়ের চাকা ঘুরিয়ে আমাকে এমন অবস্থায় এনেছে যেখানে আমার মা আমার সন্তান হয়ে গেছেন। এই পুরো পরিস্থিতি সামাল দিতে আমার সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছে সমাজ এবং আত্মীয়দের কারণে। কেউ কোনো কাজে আসে না, বড় বড় কথা বলে মানসিকভাবে ভেঙ্গে দেয়। আমি আমার ক্যারিয়ার ছেড়ে ঘরে ফিরে আসি, কারণ বুঝতে পারি, আমার মায়ের হাতে গড়া ৩০ বছরের সংসার, আমাদের তিনজনের পরিবার ধ্বংস হতে ৩০ মিনিটও লাগবে না।

গত তিন বছর ধরে আমি যেন নারগিস আহসানের জীবনযাপন করছি-অর্থাৎ আমার মা’ই যেন আমার জীবন। সবচেয়ে বেশি ভেঙে যাই, যখন দেখি আমার মায়ের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে কিছু মানুষ বাজে মন্তব্য করছে, মানসিকভাবে আঘাত দিচ্ছে। তারা ঘরে অতিথি হিসেবে আসার কথা থাকলে মা কখনো কোনো কাজ এড়িয়ে যেতেন না; সবকিছু তিনি নিজেই সামলাতেন। অথচ জীবিত মানুষটি যখন হুঁশ-জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন, আর তাদের দিতে কিছু নেই, তখনও সবাই তাকে এমনভাবে পরিত্যাগ করেছে যেন তিনি কখনোই জীবিত ছিলেন না।

যে মানুষটা , যিনি জীবনের ৩০–৩৫ বছর পুরো পরিবারের জন্য উৎসর্গ করেছেন,এবং এতগুলো মানুষ এর পিছনে । তার যদি মাত্র পাঁচ বছরের পরিচর্যার প্রয়োজন হয়—সেটা নিশ্চিত করা কি আমাদের ন্যূনতম মানবিক বিবেকের বিষয় নয়?”

কষ্টটা এখানেই যে আমাকে হয়তো আল্লাহ একটি ৩ কেজির ধৈর্য্য পরীক্ষা দিয়েছেন, কিন্তু আমাকে বহন করতে হচ্ছে ২০ কেজির মানসিক চাপ এবং শারীরিক কষ্ট। এই অতিরিক্ত ১৭ কেজি আমার বহন করতে হয় আশেপাশের মানুষের জন্য।

রোগী দেখতে এসে আত্মীয়দের মিলনমেলা চলে; কিন্তু পরিচর্যার ধারেকাছে কেউ নেই। বরং অযথা হস্তক্ষেপ-আর মানসিক হয়রানি। আমি চাই কেউ একদিন বলুক—
“তুমি দুই ঘণ্টা ঘুমাও, আমরা আছি।”কিন্তু তার বদলে শুনতে হয়-আব্বুর দ্বিতীয় বিয়ে, আমার বিয়ে, সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা, বা চাকরির টাকার হিসাব।
মানুষের মনে এতটুকু মানবিকতা নেই-এই দায়িত্ব নেবে কে, পরিচর্যা করবে কে-এটাই কি প্রথম ভাবনা হওয়া উচিত নয়?

তিন বছরের পরিচর্যা আমাকে শিখিয়েছে ত্যাগ এবং ভালোবাসা মানে কী। আমি হয়তো আল্লাহ থেকে ১০০০ গ্রাম ধৈর্য্য নিয়ে পৃথিবীতে এসেছি, এখন প্রতিদিন আমার মা’র জন্য ২ গ্রাম খরচ করতে হচ্ছে। ডিমেনশিয়া রোগীর পরিচর্যা করতে অসীম ধৈর্য্য ও ভালোবাসা লাগে। একদিন ৫০০ গ্রাম আবেগ দেখিয়ে, পরের দিন তা হারিয়ে গেলে চলবে না। প্রতিদিন শূন্য থেকে শুরু করে রাতে শূন্য হাতে ঘুমাতে হবে।
দেহের বোঝা বহন করা তুলনামূলকভাবে সহজ, কিন্তু মনের বোঝা বহন করা সহজ নয়। কিছু হবে না জানেও প্রতিদিন একই কাজ করে যেতে হয়। আল্লাহ এই কষ্ট শত্রুদের যেন না দেয়। অনেক দিন এমনও গেছে, যখন আমি নিয়তির উপর রাগ করে না খেয়ে শুয়ে ছিলাম। তখন আমার মায়ের চোখের দিকে তাকালে মনে হতো, আড়াই বছরের শিশু আমার দিকে ভরসা নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি তার একমাত্র আশ্রয়।

একদিন মা হঠাৎ বললেন, “চোখের নিচে এত কালো কেন?” আমি উত্তর দিলাম, “যে কষ্ট পাই, এগুলো চোখের নিচে জমাট বাঁধে।” তখন মা মাথায় হাত রেখে বললেন, “আমাকে মাফ করে দাও, তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।” ঐ মুহূর্তে আমি পাথর হয়ে বসে ছিলাম। চোখের পানি ছাড়া আর কিছুই অনুভব করতে পারিনি।
আমি একমাত্র সন্তান। ডাক্তার হিসেবে আমি জানি বৃদ্ধ বয়সে পরিবারের গুরুত্ব কী এবং সদস্যদের একসাথে থাকার মর্ম কী। সন্তান হিসেবে আমি আমার বাবা-মায়ের পরিচর্যা করব, এটি আমার সিদ্ধান্ত। এখন চিন্তা হয় আব্বু নিয়ে। তার যুদ্ধ আমার থেকে ভিন্ন। একই ছাদের নিচে তিনটি দেহ, তিনটি আলাদা যুদ্ধের গল্প। একজন কিছুই জানে না, কিছুই বুঝে না। আমি হতাশা নিয়েই প্রতিদিন যা করব তা করছি। আব্বু তার সংসার জলে ভাসা পদ্মের মত ভাসতে দেখেন আর সমাধানের পথ খুঁজতে থাকেন । আমাদের পরিবারের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো আমরা একসাথে আছি। অন্তত চোখের সামনে জীবিত দেহ আছে-আমার কাছে এটিই সার্থকতা।
একজন কেয়ারগিভার হিসেবে চ্যালেঞ্জ হলো মানুষটির সম্মান বজায় রেখে স্বাভাবিক মৃত্যু নিশ্চিত করা। মা’র হাতে গড়া সংসার যেন তার নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়, সেটি নিশ্চিত করা।

লেখকরা ডিমেনশিয়া রোগীদের সঙ্গে বসবাসের কষ্ট নিয়ে সাহিত্যিকভাবে লিখেননি, তাই এই দুঃখের স্বীকৃতি নেই। নিয়মিত পরিচর্যা করার চেয়ে অস্ত্র ধরে যুদ্ধ করা সহজ । বিশেষ করে এমন মানুষের যার দেহ আছে ,মন আছে কিন্তু বোঁধ শক্তি নেই। নিশ্বাস আছে কিন্তু জীবন নেই ।

আমার পথ মসৃণ করছে অচেনা মানুষরা, যারা নিছক মানুষ হওয়ার খাতিরে আমার পাশে আছেন। তাদের জন্য আল্লাহ উত্তম বিনিময় দান করুন। আমি জানি এই ধৈর্য্য পরীক্ষা কোন ‘পাস’ বা ‘ফেইল’ নয়। এটি প্রতিদিনের পরীক্ষা, যা ধৈর্য্য এবং সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে। পৃথিবীতে ভালোবাসা থেকে বড় কোনো ঔষুধ নেই। তাই প্রতি রাতে আমি রবার্ট ফ্রস্ট (Robert Frost) কবিতার লাইন নিজেকে বলি:

The woods are lovely, dark and deep,
But I have promises to keep,
And miles to go before I sleep,
And miles to go before I sleep

Address

Dhaka Office : Alzheimer Society Of Bangladesh (ASB) House No- 42, Road No- 4A, Sector-17/D, Uttara, Dhaka- 1230.

DHAKA- 1230.

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশ - Alzheimer Society of Bangladesh posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Practice

Send a message to আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশ - Alzheimer Society of Bangladesh:

  • Want your practice to be the top-listed Clinic?

Share

Share on Facebook Share on Twitter Share on LinkedIn
Share on Pinterest Share on Reddit Share via Email
Share on WhatsApp Share on Instagram Share on Telegram