01/12/2025
জল বসন্ত বা চিকেনপক্স (Chickenpox) একটি অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাল রোগ। এটি সাধারণত ১০-২১ দিনের মধ্যে এমনিতেই সেরে যায়, তবে এই সময়ে রোগীর বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
এখানে জল বসন্ত হলে কী করণীয়, তার একটি বিস্তারিত তালিকা দেওয়া হলো:
সতর্কতা: আমি একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডাক্তার নই। এই পরামর্শগুলো সাধারণ নির্দেশিকা মাত্র। রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে বা শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
১. সাধারণ যত্ন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
আলাদা থাকা (Isolation): রোগীকে বাড়ির অন্য সদস্যদের (বিশেষ করে যাদের আগে এই রোগ হয়নি বা গর্ভবতী নারী) থেকে আলাদা রাখুন। এটি হাঁচি-কাশি ও স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়।
গোসল: অনেকে মনে করেন জল বসন্ত হলে গোসল করা যায় না, এটি ভুল ধারণা। কুসুম গরম পানিতে নিম পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে আলতো করে শরীর মুছিয়ে দেওয়া বা গোসল করানো ভালো। এতে চুলকানি কমে এবং সংক্রমণ রোধ হয়।
পোশাক: সুতির, ঢিলেঢালা এবং আরামদায়ক পোশাক পরা উচিত। সিন্থেটিক বা আঁটসাঁট পোশাক চুলকানি বাড়িয়ে দিতে পারে।
নখ ছোট রাখা: রোগীর নখ কেটে ছোট রাখতে হবে। চুলকানির সময় নখের আঁচড় লাগলে ক্ষত সৃষ্টি হয়ে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে।
২. আরাম ও ওষুধের ব্যবহার
চুলকানি কমাতে: শরীর খুব বেশি চুলকালে 'ক্যালামাইন লোশন' (Calamine Lotion) লাগানো যেতে পারে। তবে, মুখের ঘা বা চোখের আশেপাশে এটি লাগাবেন না। ডাক্তার এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধও দিতে পারেন।
জ্বর ও ব্যথা: জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল (Paracetamol) খাওয়া যেতে পারে।
সতর্কতা: জল বসন্ত চলাকালীন এসপিরিন (Aspirin) জাতীয় ওষুধ কখনোই খাবেন না বা শিশুদের দেবেন না। এটি 'রেই সিনড্রোম' নামক মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে।
ফোস্কা না ফাটানো: শরীরের দানা বা ফোস্কাগুলো কখনোই জোর করে ফাটাবেন না বা খুঁটবেন না। এতে স্থায়ী দাগ বসে যেতে পারে।
৩. খাবার-দাবার
প্রচুর পানি পান: শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে প্রচুর পরিমাণে পানি, ডাবের পানি, ফলের রস এবং শরবত পান করতে হবে।
সহজপাচ্য খাবার: তেল-মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। জাউ ভাত, সবজি খিচুড়ি, সুপ বা নরম খাবার খাওয়া ভালো।
মুখের যত্ন: যদি মুখের ভেতরেও দানা ওঠে, তবে ঝাল ও টক জাতীয় খাবার পরিহার করুন। ঠান্ডা দুধ বা দই আরামদায়ক হতে পারে।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
সাধারণত এটি বাড়িতেই সেরে যায়, তবে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে বা ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত:
যদি শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা হয়।
জ্বর যদি ১০২°F (৩৯°C) এর বেশি হয় এবং কমতে না চায়।
ফোস্কাগুলো যদি খুব লাল হয়ে ফুলে যায় বা পুঁজ বের হয় (ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন)।
রোগী যদি আবোল-তাবোল বকে বা খুব বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে।
ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া বা উজ্জ্বল আলোয় তাকাতে কষ্ট হওয়া।
রোগ পরবর্তী টিপস:
ফোস্কা শুকিয়ে যাওয়ার পর চামড়া উঠতে শুরু করলে তা টেনে তুলবেন না, আপনা-আপনি ঝরে যেতে দিন।
চিকেন পক্স হলে চিকিৎসার জন্য নিচের বিষয়গুলো মেনে চলা উচিত:
- *ঘরে থাকা*: চিকেন পক্সের প্রথম ৫-৭ দিন ঘরে থাকা ভালো, যাতে অন্যের মধ্যে সংক্রমণ না ছড়ায়।
- *ত্বকের যত্ন*: ত্বক পরিষ্কার রাখা এবং আচড়ানো থেকে বিরত থাকা উচিত।
- *অ্যান্টিহিস্টামিন*: চুলকানি কমানোর জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
- *অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ*: চিকেন পক্সের জন্য অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দেওয়া হতে পারে, যা রোগের তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে।
- *ব্যথা উপশম*: ব্যথা এবং জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে।
- *ভিটামিন সি*: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া এবং প্রচুর পানি পান করা উচিত।