08/11/2021
রীতা রানী সরকার (৬১ বৎসর) এর মৃত্যুর পর দান করা দুটি চোখে নতুন করে পৃথিবীর আলো দেখতে পেয়েছেন ২৪ বছরের এক তরুণ এবং আরেক মধ্যবয়স্কা মহিলা। অবসরপ্রাপ্ত পরিবার কল্যাণ সহকারী এই মহিয়সী নারী গত ৪ নভেম্বর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
তার মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়েও তার পরিবারের সদস্যরা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ওয়াসিম খানের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির (ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল জোন) সাথে। তৎক্ষণাৎ সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে ডা. কৃপাধন চক্রবর্তী ও ডা. হাসানুজ্জামান এর নেতৃত্বে, সন্ধানীর কর্মীবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত একটি মেডিকেল টিম রাত ১২ টায়
ময়মনসিংহের ইউনাইটেড চক্ষু ক্লিনিক ও ফ্যাকো সেন্টারে ডোনারের কর্ণিয়া দুটো সংগ্রহ করে। মেডিকেল টিমের অন্যান্য সদস্য বৃন্দ ছিলেন- ডা. সাকিব আহমেদ, ডা. শাম্মা যাকওয়ান, ডা. ওয়ালিউর রহমান বিজয় এবং সন্ধানী ম.মে.ক ইউনিটের সভাপতি ডা. দেলোয়ার হোসেন জীবন ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান সহ সন্ধানীর অন্যান্য কর্মীবৃন্দ।
সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির সার্বিক তত্ত্বাবধানে সংগৃহীত দুটি কর্ণিয়া ঢাকার নীলক্ষেতে অবস্থিত সন্ধানী চক্ষু হাসপাতালে দুজন কর্ণিয়াজনিত অন্ধত্বে আক্রান্ত ব্যক্তির চোখে সফলভাবে প্রতিস্হাপন করেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. শিষ রহমান।
সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেন সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির সম্মানিত সভাপতি - অধ্যাপক ডা. তোসাদ্দেক হোসেন সিদ্দিকী জামাল, মহাসচিব - ডা. জয়নুল ইসলাম, ডা. ফারিহা হাসিন এবং ডা. মির্জা মিনহাজুল ইসলাম।
রীতা রানী মানবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আমরা এই মহৎপ্রাণ নারীর আত্মার শান্তি কামনা করি। মরণোত্তর চক্ষুদান নিয়ে কোনো ধর্মেই কোনো আপত্তি করা হয়নি। মৃত্যুর আগে নিজে দান করে না গেলেও ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরাও চক্ষুদানের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যেমনটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রীতা রানীর পরিবারের সদস্যরা। চক্ষুদানের ধর্মীয় প্রেক্ষাপট জানতে ক্লিক করুন নিচের লিংকেঃ https://www.eyedonationbd.com/
মানুষের মাঝে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যে, চোখ দান করলে লাশের বিকৃতি ঘটবে। কিন্তু, কর্নিয়া নেওয়ার পর মৃত ব্যক্তির চোখে কৃত্রিম কর্নিয়া লাগিয়ে দেওয়া হয়। বিশেষ প্রয়োজনে পুরো চোখ সংগ্রহ করতে হলেও এমনভাবে সেলাই করে দেওয়া হয় যাতে কোন বিকৃতি একদমই বোঝা যায় না।
১৯৮৪ সাল থেকে সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি মরণোত্তর চক্ষুদান আন্দোলন কে জনপ্রিয় করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। সারা বাংলাদেশে ১৪ লক্ষ মানুষ অন্ধত্বে ভুগছেন। হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ে আছে সন্ধানীর কাছে। আমাদের আন্তর্জাতিক মানের চক্ষু ব্যাংক এবং চক্ষু হাসপাতাল আছে। কিন্তু, কর্ণিয়ার চাহিদার তুলনায় দাতার পরিমাণ খুবি নগণ্য।
সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির হিসাব বলছে, দেশে মোট ৫ লাখ ২৬ হাজার মানুষ কর্নিয়াজনিত কারণে দৃষ্টিহীন। কর্নিয়া প্রতিস্থাপন ছাড়া এই মানুষগুলোর চোখের আলো ফিরিয়ে দেওয়ার আর কোনো উপায় নেই।
স্বাধীনতা পদকজয়ী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সন্ধানী স্বেচ্ছায় রক্তদান আন্দোলনকে সারা বাংলাদেশে জনপ্রিয় করে তুলতে অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু, মরণোত্তর চক্ষুদান আন্দোলন এখনো জনপ্রিয় হতে পারেনি নানা রকম কুসংস্কার ও ভুল ধর্মীয় ব্যাখ্যার বেড়াজালে। মৃত্যুর ৬ ঘন্টার মধ্যে কর্ণিয়া সংগ্রহ করা গেলে তা ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে অন্যের চোখে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব।
সারা দেশে যত জন মারা যান, তার অন্তত ২% যদি কর্ণিয়া দান করেন তাহলে আগামী ৮-১০ বছরের মধ্যে দেশ হতে কর্ণিয়া জনিত অন্ধত্ব দূর করা সম্ভব। মৃত্যুর পর এই দেহ, চোখ সবকিছুই তো মিশে যাবে মাটির সাথে। তারচেয়ে বরং আমার দেয়া দুটি চোখে দুজন মানুষ যদি পৃথিবীর আলো দেখতে পারেন এর চেয়ে বড় সদকায়ে জারিয়াহ আর কি হতে পারে?" মরণোত্তর চক্ষুদানে অঙ্গীকার করতে চাইলে কল করুন এই নাম্বারে- 01725358478 অথবা মেসেজ করুন অফিশিয়াল পেজেঃ https://www.facebook.com/Sandhani-National-Eye-Donation-Society-MMCH-Zone-980250935379481/
মরণোত্তর চক্ষুদান সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে চাইলে ক্লিক করুন -
https://www.eyedonationbd.com/