06/11/2019
ডায়াবেটিস কি ?
ডায়াবেটিস একটি নিরব ঘাতক রোগ যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে মানুষকে অল্প অল্প করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
বাংলাদেশে ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রায় ৭০ লক্ষে্যর ও বেশি মানুষ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত। বতর্মানে এটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হল আমাদের দেশের ৭০ ভাগ মানুষেরই ডায়াবেটিস সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই।
তাই আমি এই পোষ্টে ডায়াবেটিস সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত তথ্য গোলো তুলে ধরলাম পুরো পোষ্টটি মনযোগরে সঙ্গে পড়ুন ।
আমি এখানে ডায়াবেটিসের গুরুত্বপূনর্ ৭টি বিষয়ে আলোচনা করব..
১. ডায়াবেটিস কি ?
২. ডায়াবেটিস কেন হয় ?
৩. ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ।
৪. কোন মানুষদের ডায়াবেটিস হওয়ায় সম্ভবনা বেশী ?
৫. ডায়াবেটিসের লক্ষণ ।
৬. ডায়াবেটিসের জটিলতা ।
৭. ডায়াবেটিসের চিকিত্সা ও নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল ।
১. ডায়াবেটিস কি ?
ডায়াবেটিস শব্দের বাংলা অথর্ হল বহুমূত্র বা ঘন ঘন প্রসাব। যদি আমাদের রক্তের সুগার বা গ্লুকোজের মাত্রা নিদর্িষ্ট পরিমাণ হতে বেশি থাকে তখন ঐ অবস্তাকে ডায়াবেটিস বলা হয়। আর বহুমূত্র বলার কারন যখন আমাদের রক্তে সুগার বেশি থাকে তখন প্রসাবের সাথে প্রচুর পরিমাণে সুগার বের হয়ে যায়। এখন আমাদের মূত্রথলি 600ml মূত্র ধারণ করতে পারে আর 400 থেকে 500ml মূত্র জমা হলে আমরা প্রসাবের চাপ অনুভব করি। কিন্তু প্রসাবে যখন সুগার থাকে তখন 100 ml প্রসাব না জমতেই প্রচুর চাপ দেয় তাই ঘন ঘন প্রসাব হয়। আর সুগার বা গ্লুকোজ কি? আমরা প্রতিদিন যে শকর্রা জাতীয় খাবার গ্রহণ করি তা পরিপাকতন্ত্রের সাহাযে্য সুগারে পরিনত হয়ে রক্তে প্রবেশ করে। চাল, আটা, আলু, চিনি ইত্যাদি শর্করা জাতীয় খাবারের প্রধান উতস।
আমাদের রক্তের নরমাল সুগার লেভেল হল...
৭-৮ ঘন্টা না খাওয়ার পর 4.0 থেকে 5.9 mmol/L বা ( 72 থেকে 99 mg/dL ) এর মধ্যে এবং খাওয়ার দুই ঘন্টা পর 7.8 mmol/L বা ( 140 mg/dL ) এর নিচে থাকে । আর যদি সবসময় আমাদের সুগার লেভেল এর থেকে বেশি থাকে তখনই ডায়াবেটিস বলা হয় ।
এখানে,
*mg = milligram, 1000mg = 1 gram
*dL = decilitre, 1dL = 100 gram
২. ডায়াবেটিস কেন হয় ?
লিভার আমাদের দেহে প্রতি ১০০ ঘন সেন্টিমিটার রক্তে ৯০ মিলিগ্রাম সুগার রেখে নিয়ন্ত্রণে রাখে। আমরা যে ধরনের খাবারই খাই না কেন রক্তে সুগার লেভেল যেন না বাড়ে বা কমে লিভারই তা প্রতিরোধ করে। অতিরিক্ত সুগার বা গ্লুকোজ কে গ্লাইকোজেন নামক অদ্রবণীয় পলিস্যাকারইড হিসাবে লিভার জমা রাখে। আর গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেন হিসাবে জমা রাখতে সাহায্য করে ইনসুলিন নামক একটি হরমোন, এই হরমোন ছাড়া লিভার অতিরিক্ত গ্লুকোজকে কে জমা রাখতে পার না। আর এই ইনসুলিন তৈরি করে লিভারের সাথে থাকা অগ্ন্যাশয় নামক একটি অঙ্গ। যখন অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা প্রয়োজনের তুলনায় কম তৈরি করে তখন অতিরিক্ত গ্লুকোজ লিভার জমা রাখতে পারে না সরাসরি রক্তে চলে যায়, আর ঐ অবস্তাকে ডায়াবেটিস বলা হয়।
তাই ডায়াবেটিস হওয়ার কারন হল দেহে পযর্াপ্ত পরিমান ইনসুলিন তৈরি না হওয়া।
৩. ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ |
ডায়াবেটিস প্রধানত তিন প্রকার ।
-টাইপ ১ ডায়াবেটিস।
-টাইপ ২ ডায়াবেটিস।
-গভর্কালীন ডায়াবেটিস।
• টাইপ১ ডায়াবেটিস কে ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস বলা হয়। কারণ অগ্ন্যাশয় যখন সামান্য পরিমাণ ইনসুলিনও তৈরি করতে পারে না তখন রোগীকে প্রতিদিন ইনসুলিন নিতে হয়। তাই এটিকে টাইপ১ বা ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস বলে। টাইপ১ সাধারণত অল্পবয়সী বিশেষ করে ১০ থেকে ৩৫ বছরের মানুষের হয়ে থাকে।
• টাইপ২ ডায়াবেটিস হল, অগ্ন্যাশয় যখন প্রয়োজনের তুলনায় কম পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি করে তখন তাকে টাইপ২ ডায়াবেটিস বলা হয়। এটা সাধারণত ৩০-৪০ বছরের পর থেকে শুরু হয়। টাইপ২ ধিরে ধিরে টাইপ১ এ পরিনত হতে পারে ।
• গর্ভঅবস্তায় ডায়াবেটিস খুব অল্প সংখ্যক মহিলাদেরই হয় এবং সন্তান জন্মদানের পরই ডায়াবেটিস চলে যায়। তবে তখন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে অনেক জটিলতা দেখা দেয়।
৪. কোন মানুষদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি?
• আপনার পরিবারে যদি মা, বাবা, দাদা, দাদির কারো ডায়াবরটিস থাকে তাহলে আপনারও ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা আছে।
• যাদের বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন অনেক বেশি তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি ।
• অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস, পর্যাপ্ত হাটাচলা ও শারীরিক পরিশ্রম না করাও ডায়াবেটিসের অন্যতম কারন।
৫. ডায়াবেটিসের লক্ষণ।
• ঘন ঘন প্রসাব হওয়া।
• সবসময় ক্ষুদা ক্ষুদা ভাব।
• অনেক তৃষ্ণা ও মুখ শুকিয়ে যাওয়া।
• অল্প সময়ে দেহের ওজন কমা।
• চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি ডায়াবেটিসের অন্যতম লক্ষণ ।
৬. ডায়াবেটিসের জটিলতা ।
বলে রাখা ভালো যাদের ডায়াবেটিস দীঘর্ সময় নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাদেরই এই জটিলতা গোলো দেখা দেয়।
• কিডনি বিকল হওয়া।
• রক্তনালীতে চর্বি জমে হাটর্ অ্যাটাক ও ব্রেন স্টোকের মত জটিলতার সৃষ্টি করে।
• উচ্চ রক্তচাপ।
• দৃষ্টি শক্তি কমা বা হারিয়ে ফেলা ।
• ঘন ঘন সংক্রমন ও কোন দর্ুঘটনা ছাড়াই অঙ্গ হারানোর মত জটিলতা সৃষ্টি করে।
৭. ডায়াবেটিসের চিকিত্সা ও নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল।
• প্রথমত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলা ও ঔষধ গ্রহণ করা।
• খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনা, শর্করা জাতীয় খাবার ( ফাস্টফুড, ভাত, রুটি, পিজ্জা, বার্গার , কুল ড্রিংস, ইত্যাদি ) অল্প পরিমাণে খাওয়া। কারন ডায়াবেটিক রোগীর দেহে অতিরিক্ত শর্করা জমা থাকে না সরসরি রক্তে চলে যায়। তাই শর্করার পরিবর্তে শাক-শব্জি, ফলমূল ও আমিষ জাতীয় খাবার থেকে ক্যালরি গ্রহন করা। তাছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি ফুড প্লেট ধারণা রয়েছে, অর্থাত্ একটি খাবার প্লেটকে চার ভাগে ভাগ করবেন যার দুই ভাগ থাকবে শাক-শব্জি ও ফলমূল, এক ভাগ শর্করা ( ভাত, রুটি ইত্যাদি ) এবং বাকি এক ভাগ থাকবে আমিষ (মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি )
• নিয়মিত হাটাচলা ও শারীরিক পরিশ্রম কর। শুধু ডায়াবেটিসে আক্রান্তরাই না আমাদের সবারই উচিত
প্রতিদিন ৪০-৪৫ মিনিট হাটা, এটি শুধু ডায়াবেটিস না হৃদরোগ, অতিরিক্ত ওজন থেকে দূরে রাখে।
• সবসময় ফ্রী মাইন্ডে থাকা বেশী চিন্তা না করা। যে কোন রোগই হক না কেন আমাদের উচিত সবসময় পজিটিভ চিন্তা করা কারণ পজিটিভ চিন্তাই আপনার রোগকে অধর্েক সুস্থ করে দিবে।
• সবশেষে একটি সধারন উদাহরণ হল একজন সুস্থ মানুষের দেহে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখে ইনসুলিন হরমোন তাই তারা শর্করা বেশি খেলেও লিভার ইনসুলিন হরমোনের সাহায্যে অতিরিক্ত শর্করা জমা রাখে।
কিন্তু একজন ডায়াবেটিক আক্রান্ত মানুষের দেহে পর্যাপ্ত ইনসুলিন থাকে না তাই তাদের দেহে অতিরিক্ত শর্করা জমাও থাকে না, যতটুকু গ্রহণ করা হয় সবই রক্তে চলে যায়। তাই রক্তে যতটুকু দরকার ততটাই গ্রহণ করতে হবে।
পরবতর্ী পোষ্টে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে কিছু বিজ্ঞানসম্মত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হবে। তাই Bangla Health Science পেজটিতে লাইক দিয়ে সাথে থাকুন।
পোষ্টটি শেয়ার করে অন্যদের জানার সুজোগ করে দিন।
ধন্যবাদ
সাস্থ্য বিষয়ক বিজ্ঞানসম্মত আরো পোষ্ট পেতে Bangla Health Science পেজটিতে লাইক দিয়ে সাথে থাকুন।