20/08/2025
হিজামা থেরাপি (Cupping Therapy) মূলত শরীর থেকে দূষিত রক্ত ও টক্সিন বের করে আনার মাধ্যমে বিভিন্ন রোগে কার্যকর ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়। চুল পড়া রোধে হিজামার ব্যবহার একটি বেশ প্রচলিত বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি।
🔹 চুলপড়া রোধে হিজামা থেরাপির কার্যকারিতা
1. রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে:
মাথার ত্বকে হিজামা করলে ঐ অঞ্চলে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায়। বাড়তি রক্ত সঞ্চালনের ফলে চুলের ফলিকল (Hair Follicle) প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি বেশি পায়, যা চুলকে মজবুত করতে সহায়তা করে।
2. টক্সিন ও দূষিত রক্ত অপসারণ:
শরীরে জমে থাকা টক্সিন বা অপদ্রব্য চুলের ফলিকল দুর্বল করে এবং চুল ঝরে যায়। হিজামার মাধ্যমে দূষিত রক্ত বের করে চুলের গোড়া সুস্থ রাখার প্রচেষ্টা করা হয়।
3. হরমোন ও স্নায়ুতন্ত্রের ভারসাম্য আনা:
কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত স্ট্রেস, হরমোনের অসামঞ্জস্য ও স্নায়বিক সমস্যা চুল পড়ার কারণ হয়। হিজামা শরীরের নির্দিষ্ট আকুপাংচার পয়েন্টে প্রয়োগ করলে মানসিক প্রশান্তি, হরমোন ব্যালান্স ও স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
4. ড্যান্ড্রাফ ও স্ক্যাল্প ইনফেকশন হ্রাস:
মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়লে প্রদাহ (Inflammation) কমে, যা খুশকি, স্ক্যাল্প ইনফেকশন বা ফাঙ্গাল প্রবণতা হ্রাসে ভূমিকা রাখতে পারে।
🔹 হিজামার প্রয়োগ (চুলপড়া রোধে)
1. সাধারণত মাথার ত্বকের স্ক্যাল্প রিজিয়নে এবং ঘাড় ও পিঠের নির্দিষ্ট পয়েন্টে হিজামা করা হয়।
2. কাপ বসানোর আগে ওই অংশ পরিষ্কার করা হয় এবং সাকশন তৈরি করা হয়।
3. প্রয়োজনে ওয়েট কাপিং (Wet Cupping)করা হয়, যেখানে সামান্য কাটার মাধ্যমে দূষিত রক্ত বের করা হয়।
4. সাধারণত মেডিক্যাল হিজামা বিশেষজ্ঞ দ্বারা এই প্রক্রিয়া করা উচিত।
🔹 বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
হিজামার কার্যকারিতা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। তবে কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে:
1. Microcirculation উন্নত করে:
গবেষণায় দেখা গেছে হিজামা শরীরের ক্ষুদ্র রক্তনালী (Capillaries) খুলে দেয়, ফলে অক্সিজেন ও পুষ্টি পরিবাহিতা বাড়ে।
2. Nitric Oxide (NO) বৃদ্ধি পায়
হিজামার ফলে শরীরে Nitric Oxide রিলিজ হয়, যা রক্তনালী প্রসারিত করে এবং মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে।
3. Oxidative Stress কমায়
শরীরে জমে থাকা ফ্রি-র্যাডিক্যাল ও টক্সিন অপসারণে সাহায্য করে, যা চুলের ফলিকলকে সুস্থ রাখে।
4. ইমিউন মডুলেশন
হিজামা ইমিউন সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে এবং প্রদাহজনিত সমস্যা (Inflammation) হ্রাস করে।
5. Endorphin Release
হিজামা করার ফলে শরীরে এন্ডোরফিন (প্রাকৃতিক পেইনকিলার ও সুখ হরমোন) নিঃসৃত হয়, যা মানসিক চাপ কমিয়ে চুল পড়ার অন্যতম কারণ “স্ট্রেস” নিয়ন্ত্রণ করে।
🔹 উপসংহার
হিজামা থেরাপি সরাসরি চুল গজানোর ঔষধ নয়, তবে চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
এর প্রভাব মূলত রক্ত সঞ্চালন, টক্সিন অপসারণ ও হরমোন ব্যালান্স আনার মাধ্যমে হয়।
এটি অবশ্যই অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত হিজামা থেরাপিস্টের অধীনে করা উচিত, নাহলে ইনফেকশন বা ত্বকের ক্ষতির ঝুঁকি থাকে।