23/11/2025
যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন ইউনির গবেষকরা ২০১৬ সালে নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক পেপারে বাংলাদেশের প্লেটের বেগ হিসাব করে দেখিয়েছেন। তারা দেখেছেন বাংলাদেশের প্লেট বছরে ১৫ থেকে ৪০ মিলিমিটার করে উত্তর-পূর্ব দিকে সরছে, বার্মা প্লেটের নিচ দিয়ে। ইন্ডিয়ান প্লেটের বাংলাদেশ অংশে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের পলি জমে, যার নিচে আছে একটা ওশানিক প্লেট, এবং এই ওশানিক প্লেট কন্টিনেন্টাল বার্মা প্লেটের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের সক্রিয় অঞ্চলকে বলে সাবডাকশন জোন। আর এসব জোনের যেখানে এক প্লেট আরেক প্লেটের নিচে তলিয়ে যেতে থাকে সেই সীমান্তে তৈরি হয় মেগাথ্রাস্ট ফল্ট। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পগুলি সাধারণত মেগাথ্রাস্ট ফল্টে ঘষাঘষির কারণেই হয়।
ইন্ডিয়া ও বার্মা প্লেটের এই সাবডাকশন জোনের একটা সীমান্ত হচ্ছে ডিফর্মেশন ফ্রন্ট। এই ফ্রন্টের পশ্চিমে পাথর খুব একটা বিকৃত (ডিফর্মড) হয় না, কিন্তু ফ্রন্টের পূর্বের পাথর বিকৃত হয়ে পৃথিবীর পেটের ভিতর যেতে থাকে। আর এই ফ্রন্টের অবস্থান ঢাকার খুব কাছে। ছবিতে একমাত্রিক প্লটের নিচে মানচিত্রে ডিফর্মেশন ফ্রন্ট দেখানো হয়েছে কালো ড্যাশ লাইন দিয়ে। বুঝাই যাচ্ছে লাইনটি ঢাকার উপর দিয়ে যায়। তার মানে এই না যে ঢাকাতেই বড় ভূমিকম্পের এপিসেন্টার হবে। একমাত্রিক ফিগারে দেখানো হয়েছে যে, ডিফর্মেশন ফ্রন্ট থেকে শুরু হয়ে মেগাথ্রাস্ট ফল্ট প্রায় ২৫০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। এই বিশাল অঞ্চলের অনেক জায়গাই হতে পারে এপিসেন্টার।
আমাদের মেগাথ্রাস্ট ফল্টে গত ৪০০ বছরে কোনো বড় (৮ - ৯ মাত্রা) ভূমিকম্প হয়নি। তার মানে ৪০০ বছর ধরে এখানে প্রেশার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে, যে প্রেশার বিমুক্ত হলেই বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয়। কোনো বড় ভূমিকম্প ছাড়াই আমরা বার্মার সাথে প্রায় ৫ মিটার কনভার্জ (মিলিত হওয়া) করেছি গত চারশ বছরে। চারশ বছর ধরে জমে থাকা প্রেশার কবে বিমুক্ত হবে বলা সম্ভব না। এখনো হতে পারে, আরো চারশ বছর পরেও হতে পারে। সুতরাং এই পেপারে কোনো ভূমিকম্প প্রেডিক্ট করা হয়নি, তেমন প্রেডিকশন বৈজ্ঞানিক হবে না। কিন্তু খুব ভালো করে একটা কথা বলা হয়েছে: ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর এক মেগাথ্রাস্ট ফল্টের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে। এবং এই ভয়ংকর ফল্টে কোনো একদিন এমন ভূমিকম্প হতে পারে যা জাপানের সবচেয়ে ভয়ানক ভূমিকম্পের সমান। তাই প্রস্তুতি নেয়ার কোনো বিকল্প নাই।
কলাম্বিয়া ম্যাগাজিন আর্টিকেল: https://magazine.columbia.edu/article/beneath-bangladesh-tectonic-time-bomb
পেপার: https://academiccommons.columbia.edu/doi/10.7916/D83J3KSZ
লেখা: Khan Mohammad Bin Asad