16/10/2020
****** World Anaesthesia Day-2020 ******
16 October
এনেস্থেশিয়লজি চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অপারেশন থিয়েটার থেকে শুরু করে আই সি ইউ এর ক্রিটিক্যাল রোগী সবই এরা সামলে থাকেন। এটা কত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা সেটা মানুষ আজ ২০২০ সালে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।দেশ এবং সারা বিশ্বে এনেস্থেশিয়লজিস্ট এর কত সংকট তা আজ সবার সামনে প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে।
এক সময় ছিল যখন বাংলাদেশের ডাক্তাররা এই সাবজেক্টে ক্যারিয়ার করতে খুব একটা ইন্টারেস্টেড ছিলনা। কিছুদিন ট্রেনিং করে তারা প্রাইভেট প্র্যাকটিস এ ঝাপিয়ে পড়তো। হয়তো তাদের বেশ ভালো ইনকাম হতো দেখে তারা জীবনে আর কখনো কোন ডিগ্রী নেবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। যার ফলে পরবর্তীতে এ সাবজেক্টে ডিগ্রিধারী লোকের সংখ্যা খুব একটা বাড়েনি । কিন্তু এখন যুগ অনেকাংশে পাল্টে গিয়েছে। এই সাবজেক্টে ক্যারিয়ার গড়ার অনেক সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে, সাথে এ সাবজেক্টে ক্যারিয়ার করার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহ এবং উৎসাহ বেড়েছে। সাথে দিন দিন বাড়ছে ডিগ্রিধারী লোকের সংখ্যা।
অনেক লোকজন মনে করে এই সাবজেক্টে ডিগ্রির কোন দরকার নেই, ভালো করে কাজ জানলেই যথেষ্ট। এখনো অনেক এনেস্থেসিওলজিস্ট আছেন যারা শুধু স্পাইনাল এনেসথেসিয়া দিতে জানেন, জেনারেল এনেসথেসিয়া দিতে জানেন না। তাই তারা জেনারেল এনেসথেসিয়া দিয়ে কোন অপারেশন করেন না। শুধু স্পাইনাল এনেসথেসিয়া দিয়ে অপারেশন করেন। কিন্তু সেটা যে কতটা ভয়ঙ্কর সেটা তখনই বোঝা যায় যখন সে কোন বিপদে পড়েন। এমন হতে পারে যখন স্পাইনাল এনেসথেসিয়া দেবার পর কোন কারনে রোগীকে ইনটিউবেশন এর প্রয়োজনীয়তা হতে পারে। কিন্তু সে যদি কোনো কারণে ইনটিউবেশন না পেরে থাকেন, তাহলে তা রোগীর জীবনের জন্য কতটা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ সেটা সহজেই অনুমেয়।
আজকাল প্রায়ই দেখা যায় এবং খবরে শোনা যায় যে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সার্জনরা নিজেরাই এনেসথেসিয়া দিয়ে অপারেশন করছেন। আবার দেখা যায় কোন কোন প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ওয়াডবয়রা এনেসথেসিয়া দিচ্ছেন। যার ফলশ্রুতিতে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। এই আধুনিক যুগে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায়না। অল্প কিছু টাকা পয়সার জন্য লোকজন মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দ্বিধা বোধ করছে না। এখনো কেউ কেউ রোগীর অপারেশন এর পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই সরাসরি চেম্বার থেকে অপারেশন থিয়েটারে পাঠিয়ে দিচ্ছেন । যার কারনে হচ্ছে নানান রকম নানান রকম ক্রাইসিস।
আবার কোন কোন এনেস্থেশিয়লজিস্ট এক অপারেশন থিয়েটারে এনেসথেসিয়া দিয়ে, অপারেশন শেষ হওয়ার পূর্বেই অন্য ক্লিনিকের অন্য অপারেশন থিয়েটারে চলে যাচ্ছেন। রোগীকে অনিরাপদ অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যাচ্ছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। একবার ভাবুন আপনার কোন আত্মীয়-স্বজনের সাথে যদি কেউ এমন করত তাহলে অাপনার কেমন লাগতো!
তাছাড়া সাধারণ জনগণও এনেসথেসিয়া ও এনেস্থেশিয়লজিস্ট সম্পর্কে এতোটা সচেতন নয়। তাদের যেসব জ্ঞানের অভাব রয়েছে তা হলো নিম্নরুপঃ
১. এনেস্থেশিয়লজিস্ট কে এবং অপারেশনে তার ভূমিকা কি সেটার জ্ঞানের অভাব।
২. তারা জানেন না যে অপারেশনের আগে তাদেরকে একজন দক্ষ এনেস্থেশিয়লজিস্ট দাঁড়া একটি চেকআপ করতে হয় এনেসথেসিয়া ফিটনেস এর জন্য। সাধারণত সরকারি হাসপাতালগুলোতে এটা করা হয়ে থাকে কিন্তু বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সাধারণত খুব একটা চোখে পড়ে না।
৩.তারা জানেনও না যে অপারেশন থিয়েটারে তাকে যে অজ্ঞান অথবা অবশ করছেন সে আদৌ ডাক্তার কিনা অথবা দক্ষ এনেস্থেশিয়লজিস্ট কিনা।
৪. উনি অপারেশনের জন্য ফিট কিনা তাও জানেন না।
৫. তারা জানেন না যে অপারেশনের পূর্বে একটা রোগীকে কি কি পূর্ব প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিতে হয়, অপারেশনের জন্য ফিট হতে হলে কি কি করতে হয়।
৬. অপারেশনটি তার জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কিনা।
৭. অপারেশনটি তার জন্য ইমার্জেন্সি কিনা অথবা কয়দিন পরে করলে চলে কিনা।
৮. অপারেশনের পূর্বে কি কি ওষুধ বন্ধ করতে হবে এবং কি কি ওষুধ অবশ্যই খেতে হবে তার জ্ঞানের অভাব।
৯. অপারেশনের পূর্বে কত ঘন্টা আগে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করতে হবে তার জ্ঞানের অভাব। সাধারণত অপারেশনের ৮ ঘণ্টা আগে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করতে বলা হয়।
১০. সর্বোপরি একটা অপারেশন চলাকালীন সময়ে রোগীর কি কি জটিলতা হতে পারে তার সম্বন্ধে পূর্ব জ্ঞানের ও প্রস্তুতির অভাব।
১১. হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে সকল প্রকার সরঞ্জামাদির ব্যবস্থাপনা আছে কিনা সে সমন্ধে জ্ঞানের অভাব। এবং কোন রকম জটিলতা হলে তার পরবর্তী ব্যবস্থাপনার সুযোগ-সুবিধা আছে কিনা সেই সম্বন্ধে জ্ঞানের অভাব।
আমরা আজ ২০২০ সালে উপনীত হয়েছি। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে যেসব জিনিসের উন্নতি হওয়ার কথা ছিল অপারেশন থিয়েটার এবং এনেসথেসিয়া সম্পর্কিত, সেই সম্পর্কিত উন্নতি এখনো সম্পন্ন হয়নি। যেসকল উন্নয়ন আমাদের প্রয়োজন তা নিম্নরূপঃ
১. দক্ষ, যোগ্য এবং ডিগ্রিধারী এনেস্থেশিয়লজিস্ট প্রস্তুতকরণ।
২. দেশের গ্রামে-গঞ্জে অপারেশন থিয়েটার পরিচালনা করার জন্য দক্ষ এনেস্থেশিয়লজিস্ট এর সংখ্যা বৃদ্ধি করন।
৩. আইন প্রণয়ন করে সকল সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে Pre-Anaesthetic Assessment With Documentation বাধ্যতামূলক করন।
৪. এনেস্থেশিয়লজিস্ট ব্যতীত অন্য ডাক্তার, প্যারামেডিকস এবং ওয়ার্ড বয় কর্তৃক এনেসথেসিয়া প্র্যাকটিস বন্ধ করতে হবে।
৫. সরকারি বেসরকারি সকল হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার কে ASA Standard অনুযায়ী মানসম্মত করে গড়ে তুলতে হবে। সকল প্রকার সরঞ্জাম এবং ওষুধপত্রের উপস্থিতি নিশ্চিত করন করতে হবে। General Anaesthesia Machine এর উপস্থিতি নিশ্চিন্ত করণ করতে হবে।
৬. নিম্নমানের অপারেশন থিয়েটার গুলোকে রোগীর জীবনের স্বার্থে সিলগালা করে বন্ধ করতে হবে।
৭. ইমার্জেন্সি অপারেশন ব্যতীত অন্যান্য সকল রুটিন অপারেশন পূর্বপ্রস্তুতি ব্যতীত করা বন্ধ করতে হবে।
৮. অপারেশন পরবর্তী জটিলতা নিরসনের জন্য মানসম্মত ICU তৈরি করতে হবে।
৯. ICU এবং অপারেশন থিয়েটারের দক্ষ জনবল এবং নার্সিং এর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।
১০. আনেস্থেশিয়লজিস্ট, আইসিইউ স্পেশালিস্ট, নার্স এবং অপারেশন থিয়েটারে স্টাফদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ করতে হবে।
১১. সর্বোপরি জনগণকে এই বিষয়ে সচেতনত করার জন্য প্রচারণা করতে হবে।
So the moto the World Anaesthesia Day changing day by day..........
# Know your Anesthesiologist
# Safe Anaesthesia safe surgery
# Quality Anaesthesia quality surgery
# Occupational wellbeing of Anesthesiologist
অপারেশন করার জন্য যেমন আমরা সবসময় একজন ভালো সার্জন কে খুঁজি, ঠিক তেমনি তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো একজন ভালো এনেসথেসিওলজিস্ট। সার্জন শুধু একটা অঙ্গ পতঙ্গ নিয়ে নাড়াচাড়া করে কিন্তু আপনার পুরো জীবনটাই থাকে একজন আনেস্থেশিয়লজিস্ট এর হাতে। জীবন আপনার এবং অপারেশন চলাকালীন সময়ে তার নিরাপত্তা প্রদান করার দায়িত্ব থাকে একজন এনেস্থেশিয়লজিস্ট এর হাতে। Because we Anaesthesiologist take care when your are not aware.
******Happy World Anaesthesia Day******
Courtesy
Khalid Mahbub