06/12/2025
🌹🥀 রগে টান বা পেশীতে খিল ধরলে কী করবেন???
হঠাৎ করে পায়ের মাংসপেশিতে টান লেগে অনেকে ব্যথায় কুঁকিয়ে ওঠেন। কোনোভাবেই তখন আর আরাম পাওয়া যায় না। অনেক সময় পা ভাঁজ করে রাখার পর হঠাৎ করে সোজা করলেও পেশিতে টান লেগে যায়। এটা ঘুমের মাঝে বা জেগে থেকেও হতে পারে।
কেন এমন হয়?
আমরা নিজেদের ইচ্ছানুসারে হাত বা পায়ের মাংসপেশী সংকুচিত বা প্রসারিত করে নড়াচড়া করি। কিন্তু আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হঠাৎ কোনো পেশী সংকুচিত হয়ে গেলে পেশীতে খিঁচুনি (spasm) তৈরি হয়। আর এটাকে আমরা পেশীতে খিল ধরা বা রগে টান বলি।
সাধারণত নিম্নোক্ত কারণে এ সমস্যা দেখা যায়-
ক. পানিশূন্যতা (Dehydration)
খ. স্নায়ু বা মাংসপেশীতে আঘাত
গ. রক্তে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম বা ম্যাগনেসিয়ামের অভাব
ঘ. কোনো কোনো ঔষধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায় (hypertension, cholesterol)
ঙ. কিছু ভিটামিনের অভাবে- বিশেষ করে ‘বি’ ভিটামিন (B1, B5, B6)
চ. আরো কিছু কারণে এই সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন : ধূমপান, মদ্পান, হাইপোথাইরয়েডিজম, কিডনি ফেইলিওর, মেন্সট্রুয়েসন, গর্ভসঞ্চার ইত্যাদি।
- অনেক সময় বেশি পরিশ্রমের কারণে পায়ের পেশিতে এভাবে টান লাগতে পারে। পেশিতে টান লাগা খুবই যন্ত্রণাদায়ক। পা সোজা করতে গেলে ব্যথা আরও বাড়তে থাকে।
- ধূমপায়ীদের পায়ে রক্ত চলাচল কমে যায় বলে সামান্য হাঁটাহাঁটিতেই পায়ে টান লাগে। একই কারণে ডায়াবেটিক ও কোলেস্টেরলের রোগীদেরও পায়ে ব্যথা হয়।
- গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন স্নায়ুতে চাপ পড়ে বলে পায়ে প্রায়ই টান লাগে।
- পায়ের পেশির দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত ব্যবহার, একভাবে দীর্ঘ সময় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা।
পেশীতে খিল কী করবেন?
ক. আক্রান্ত পেশীকে দ্রুত Relax (শিথিলায়ন) করতে হবে। এর উপায় হচ্ছে পেশী প্রসারিত করা। যা অতি দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তিকে আরাম দিতে পারে।
খ. তাপ চিকিৎসা মানে গরম সেঁক দেয়া যায় যদি পেশী শক্ত হয়ে বসে য়ায়।
গ. পেশী নরম, ব্যথাযুক্ত আর ফুলে গেলে ঠাণ্ডা সেঁক ‘Ice pack’ দেয়া যায়।
ঘ. বাম বা জেল দিয়ে মালিশ করা যেতে পারে।
ঙ. ইলেক্ট্রোলাইটিক ড্রিঙ্ক, যেমন-ওরাল স্যালাইন দেয়া যেতে পারে।
চ. দীর্ঘ মেয়াদে ভালো থাকতে শাকসবজি, ফল, দুধ, মাংস এবং খেজুর খান পর্যাপ্ত পরিমাণে। এই খাবারের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণ পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়।
ছ. নেশা থাকলে তা বাদ দিতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
পেশী সম্প্রসারণের (Muscle Stretching) নিয়মঃ
৹ যদি হাঁটুর নিচে পায়ের পেছনে টান লাগলে : পা সোজা করে ফেলুন, হাত দিয়ে পায়ের আঙুলের মাথাগুলো ধরুন আর আপনার দিকে টানুন।
৹ উরুর সামনের দিকে হলে পা ভাঁজ করে ফেলুন, হাত দিয়ে পায়ের আঙুলের মাথাগুলো ধরুন আর আপনার নিতম্বের দিকে টানুন।
৹ যদি উরুর পেছনে খিল লাগে, তাহলে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। পা ভাঁজ করে হাটুঁ যতটুকু পারবেন বুকের দিকে নিয়ে আসুন। ধীরে ধীরে উরুর পেছনের পেশীতে হালকা মালিশ করুন।
যদি সমস্যা মাঝে মাঝেই চলতে থাকে তবে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হউন।
🌹🥀সঠিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পেতে হলে জানতে হবে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ/নির্দেশনা ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করা উচিত নয়।
স্পন্ডিলাইসিসের জন্য হোমিওপ্যাথিক ওষুধগুলি বিস্ময়করভাবে কাজ করতে পারে। হোমিওপ্যাথিক ওষুধ সার্ভিক্যাল স্পন্ডিলাইসিসের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় ত্রাণ সরবরাহ করে।
এই ওষুধগুলি প্রত্যেক আলাদা ভাবে ব্যথ্যা ও বেদনার লক্ষণামূলককে সামলায়। ঘাড়ের দ্রাড়িমা, অসাড় অবস্থা উপরের অংশে ভার্টিগো ভালোর সাথে। এছাড়াও ঘাড়ের স্পন্ডিলাইসিসের জন্য মেরুদণ্ডের মধ্যে ডেজেনারেটিভ প্রক্রিয়া অগ্রগতিকে আরও স্থগিত করে। হোমিওপ্যাথিক ওষুধের অনেক তালিকা আছে যা ঘাড়ের স্পন্ডিলাইসিসের জন্য অনেক সাহায্য করতে পারে যেমন – Rhus Tox (রুহস্ টক্স) ব্রায়োনিয়া অ্যালবা), Paris Quadrifolia (প্যারিস কোয়াড্রিফোলিয়া) কালমিয়া ল্যাটিফোলিয়া, সিমিসিফুগা রেসমোসা। হোমিওপ্যাথিক ওষুধ যা ঘাড়ের স্পন্ডিলাইসিসের বা ঘাড়ের ব্যথার জন্য
রুস্ টক্স:
অনেক ভালো গ্রেডের হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ঘাড়ের স্পন্ডিলাইসিসের জন্য, ব্যবহার করার জন্য বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করে। রুহস্ টক্স খুব বেদনা দায়ক এবং দ্রাড়তা থাকে ঘাড়ে। একজন মানুষ রুহস্ টক্স ব্যবহার করে এই ধরনের ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে পারে। ঘাড়ে ম্যাসাজ করলেও কিছু ক্ষেত্রে মুক্তি পেতে পারে। হোমিওপ্যাথিক ওষুধ গুলির মধ্যে ঘাড়ের ব্যথার কথা উঠলেই এই ওষুধটিই সবসময় দেওয়া হয়। কখনও ঘাড়ে ব্যাথা অনেক ক্ষণের কাজ বেশি করলে বা বেশিক্ষণ কাজ করলে এটি দরকার হয়।
ব্রায়োনিয়া অ্যালবা :-
হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ব্যবহার করলেও ঘাড়ের ব্যথায় হাঁটা চলা বা গমন করার সাথে বাড়ে। এটি অন্যদিকে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কোনো মানুষ যখন ব্রয়োনিয়া আল্বা নেওয়া মানুষেরা সেই ব্যথা অনুভব করে তাদের ঘাড়ের মধ্যে তা হাঁটা চলার সাথে আরও বাজে হয়ে ওঠে। কিছু ক্ষণ আরাম নিলে সেই লক্ষণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
হাইপেরিকাম প্যারফোরেটাম –
হোমিওপ্যাথিক ওষুধ গুলির মধ্যে ঘরের ব্যথ্যার জন্য এই ওষুধ টি অনেকটা বেশি উপযুক্ত।টক্স ছাড়া ও হোমিওপ্যাথিক ওষুধের মধ্যে হাইপেরিকাম প্যারফোরেটাম একটা খুবই চিন্হতামূলক ওষুধ ঘাড়ের গুনের জন্য যেটার ফল ক্ষতি কারক দরকারী লক্ষণ গুলি দেখা যায় যখন হাইপারসেন্সিটিভিটি যেটা খুব ভালো প্রসক্রিপশন হল ঘাড়ের ব্যাথ্যা বা কাঁধে ব্যাথ্যাও হতে পারে এবং মেরুদন্ডের স্পর্শে সংবেদনশীল হতে পারে। হাতের মধ্যে জ্বলন, দূর্বলতা, টিংলিং সংবেদন দেখা দিতে পারে।
জেলসেমিয়াম :
জেলসেমিয়াম খুবই উপযোগী হোমিওপ্যাথিক ওষুধ যা ঘাড়ের স্পন্ডিলাইটিস এবং মাথা ব্যাথার জন্য । মাথা ব্যাথার ঘটনা গুলি ঘটতে পারে হাঁটা চলা করার জন্য। চোখে ধোঁয়াশা মতো দেখতে হতে পারে। এই ম্যাথা ব্যাথ্যা বেশির ভাগ সময় হাঁটা চলার সময় ঘটে থাকে।
সিলিসিয়া :
ঘাড়ে ব্যাথার সাথে মাথা ব্যাথার ও ঘাড়ের স্পন্ডিলাইটিসের জন্য কার্যকর হোমিওপ্যাথিক ওষুধ। সিলিসিয়া হচ্ছে অনেক টা ভালো হোমিওপ্যাথিক ওষুধ। ঘাড়ের স্পন্ডিলাইটিস যেখানে ঘাড় থেকে বেড়ে মাথায় যায়। সেই ব্যাথা ঘাড় থেকে বেড়ে মাথার পেছন পর্যন্ত হয় । কিছু ক্ষেত্রে ঘাড়ের ব্যথার মাথা পর্যন্ত এবং সেটা চোখ পর্যন্ত যায়। এটা মাথা ব্যাথা থেকে থেকে হতে পারে কখনও কখনও মাথা ব্যাথা হয় মাথা উঁচু করে রাখার জন্য।
হোমিওফ্লেক্স লেগ ক্র্যাম্প রিলিফ কিট
হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ম্যাগ ফস ৩০, দিনে ২ বার ২ ফোঁটা। ম্যাগনেসিয়াম ফসফোরিকাম হল পরিশ্রমের ফলে পায়ের খিঁচুনির চিকিৎসার জন্য প্রাকৃতিক ঔষধ। বাছুর এবং পায়ে খিঁচুনির সমস্যা দেখা দেয় এবং রাতে বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় আরও খারাপ হতে পারে। ম্যাগনেসিয়াম ফস রানারদের খিঁচুনির জন্য বা ক্রীড়াবিদদের পায়ের খিঁচুনির জন্য অত্যন্ত উপকারী। বয়স্কদের ক্ষেত্রে তীব্র পায়ের খিঁচুনিও এই প্রতিকারের মাধ্যমে ভালোভাবে চিকিৎসা করা হয়। উপরোক্তগুলি ছাড়াও, গর্ভাবস্থায় পায়ের খিঁচুনির জন্য ম্যাগনেসিয়াম ফসও ভালোভাবে নির্দেশিত।
হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ক্যালকেরিয়া ফস ৬x, দিনে ২ বার ৬টি ট্যাবলেট। হাঁটার সময় বাছুরের ব্যথার ক্ষেত্রে ক্যালকেরিয়া কার্ব একটি চমৎকার ঔষধ। কখনও কখনও বাছুর স্পর্শ করলেও এই ব্যথা অনুভূত হয়। বাছুরের ব্যথার পাশাপাশি বিশেষ করে বাম দিকে ফোলাভাব থাকতে পারে। এটি ব্যবহারের আরেকটি ইঙ্গিত হল পা প্রসারিত করার সময় বাছুরের খিঁচুনির সমস্যা।
অ্যাকোনাইট ন্যাপ ৩০, ২ ফোঁটা দিনে ৩ বার। আক্রান্ত স্থান থেকে স্পন্দিত ব্যথা, অসাড়তা বা ঝাঁকুনি সহ। রোগী উদ্বেগ এবং ভয়ে আচ্ছন্ন থাকে।
আর্নিকা মন্ট ৩০, ২ ফোঁটা দিনে ৩ বার। এই ওষুধটি পায়ে ব্যথা সহ ব্যথার জন্য কার্যকর, অর্থাৎ স্পর্শে সংবেদনশীল। অতিরিক্ত পরিশ্রম এবং ক্লান্তির কারণে পায়ে ব্যথা আর্নিকার সাথে চমৎকারভাবে নিরাময় করা হয়। প্রয়োজনে, পায়ে ঝাঁকুনিও অনুভব করা যায়। আঘাতের কারণে পায়ে ব্যথাও এই ওষুধ দিয়ে সবচেয়ে ভালোভাবে চিকিৎসা করা হয়।
বেলিস পেরেনিস ৩০, ২ ফোঁটা দিনে ৩ বার। বেলিস পেরেনিসের প্রভাব প্রধানত টেন্ডন, লিগামেন্ট, পেশী, জয়েন্ট এবং রক্তনালীর পেশী তন্তুতে দেখা যায়। এই প্রতিকারটি ক্ষত এবং ব্যথাজনিত ব্যথা, এবং অতিরিক্ত চাপ বা আঘাতের ফলে সৃষ্ট ব্যথা এবং ফোলাভাব দূর করতে সহায়ক। এটি মচকানো (পেশী বা টেন্ডনের আঘাত) এবং টান (অতিরিক্ত প্রসারিত বা ছিঁড়ে যাওয়া লিগামেন্ট) পরিচালনার জন্যও একটি দুর্দান্ত ওষুধ। এই ধরনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যথা উপশম করতে এটি মূলত কার্যকর।