29/10/2025
প্রশ্নঃ
রুকইয়াহ সেশনের ভিডিও অর্থাৎ যেসব ভিডিওতে জিন আক্রান্ত রোগীর বিভিন্ন মুভমেন্ট দেখায় আর রাকি তিলাওয়াত করতে থাকে, এরকম ভিডিও কি আদৌ রুকইয়াহর প্রচারের জন্য প্রয়োজন আছে?
উত্তরঃ
১।
না, কোনও প্রয়োজন নেই। বরং এতে সামগ্রিকভাবে উম্মাহর ক্ষতিই নিয়ে আসে। এসব ভিডিও দেখে একটি অথর্ব জিন-জাদু আক্রান্ত জাতি তৈরী হয়। আমি যেহেতু সরাসরি এই ফিল্ডের সাথে সম্পৃক্ত, তাই আমি সাধারণ জনগণ যাদের দ্বীনের মৌলিক জ্ঞানটুকু নেই তাঁদের দেখেছি তাঁরা আমাদের কাছে ভিডিওর এই রাকির মতো জিন হাজির করে জিনকে বের করে দিতে বলে(লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ)!! আমাদের কাছে আসে কারণ ঐজন্য যে ঐ রাকিদের শিডিউল পাচ্ছে না তাই! তখন ৯০% রোগীদের বোঝানো অসম্ভব হয়ে যায়, কারন তাঁদের অন্তরে রাকির প্রতি মোহ তৈরী হয়েছে যা ঐ রাকির সাথে সাক্ষাৎ করা ছাড়া যাবে না।
আর এসব ভিডিও দেখে যারা রুকইয়াহ করতে আসে, তাঁরা কি রুকইয়াহ শারইয়াহর শর্তগুলো জেনে বুঝে রুকইয়াহ করতে আসে নাকি রাকিকে বিশেষ ক্ষমতাধর মনে করে আসে। অবশ্যই তাঁরা ভিডিও দেখে ইতোমধ্যে রাকির প্রতি মুগ্ধ হয়েই এসেছে এবং রাকির উপর এমন আস্থা তৈরী হয়েছে যে রাকি আমার শরীরের সমস্যাগুলো দূর করে দিতে পারবে। ফলে রুকইয়াহ জায়েজ হওয়ার প্রথম শর্ত যে- আল্লাহই যা করার করবে রাকি শুধু প্রচেষ্টাকারী বা আল্লাহর কালাম আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কাজ করে না সেই শর্ত নষ্ট হয়ে যায়।
২।
এসব ভিডিও করে ভাইরাল হওয়া রাকিদের বিরুদ্ধে জনগণের অভিযোগ বেশি থাকে এবং এখানে এদের জন্য ও আরো কিছু দেশে একই টাইপের রাকির জন্য রুকইয়াহ ফিল্ডটাই ক্ষতির স্বীকার হয় বা হচ্ছে, কারন কি? কারন এটাই যে জনগণ তাঁদের বিশেষ কিছু মনে করেই গিয়েছিলো। যাওয়ার পর দেখে সেখানে আরো অনেক বিপরীত বিষয় আছে যা তাঁরা ভিডিওতে দেখায় না। ফলে অন্তরে রোগ ভরা এমন মুসলিমরা পুরো রুকইয়াহ সেক্টরকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। কারন এই রাকিগুলো শুধু জিন হাজিরের মূহুর্ত দেখিয়ে জনগণকে একটি ভূল তথ্য দেয় যে এভাবে তিলাওয়াত করলেই শরীরে থাকা জিন হাজির হয়ে যায় বা চলে যায় (সেটা তাঁরা মুখে না বললেও জনগণ এমন মেসেজই নিচ্ছে)। অথচ এমন অগণিত রোগী আছে যাদেরকে কেয়ামত পর্যন্ত রুকইয়াহ করলেও জিন হাজির হবে না।
আর জিন হাজির হলেই কি রোগী সুস্থ হয়ে যায়? কিংবা রুকইয়াহর উদ্দেশ্য কি জিন হাজির করা!? এসব কি ধরনের কাজ যার উদ্দেশ্য বা মাকসাদ আজও কেউ স্পষ্ট করতে পারলো না। বলবে কুরআনের মুজিজা দেখানো, আরে ভাই এটা তো মানুষ কুরআনের মুজিজা হিসেবে নিচ্ছে না, কারন যদি তাঁরা কুরআনের মুজিজাও মনে করতো তাহলে রাকির থেকে সাপোর্টে সুস্থ না হয়ে রাকির প্রতি অভিযোগ না করে নিজের প্রতি অভিযোগ করতো যে আমার কুরআনের সাথে সম্পর্ক ভালো না, তাই সুস্থতা বিলম্বিত হচ্ছে বা কুরআন বলছে আমার ব্যক্তিগত এই এই বিষয় ঠিক করতে হবে, না হলে আমি জালিম। আর এটা জালিমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।
আর যারা রুকইয়াহ বিষয়ক জ্ঞান অর্জন ও তাঁর প্রায়োগিক শিক্ষার মাধ্যমে প্রচার করে তাঁদের আশেপাশে এমন অস্থির বা রাকিমুগ্ধ টাইপের রোগীও দেখা যায় না বা তাঁদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রোগীরা দাঁড় করায় না যে রুকইয়াহ ফিল্ডকেই অপদস্ত করে ছাড়ে।
এজন্য এই দ্বীন আমাদের শেখায় আল্লাহমুখী হতে, এবং শেখায় দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য চেষ্টা করে যেতে। নিজের নামকে প্রতিষ্ঠা করতে দ্বীন শেখায় না, (তবে আল্লাহ কারো প্রতি দয়া করে মানুষের অন্তরে তার বিষয়ে আকর্ষণ সৃষ্টি করলে সেটা আল্লাহর অনুগ্রহ মাত্র)।
লিখেছেন – Farhad Hussain,