29/10/2025
🌍 বিশ্ব স্ট্রোক দিবস
বিশ্ব স্ট্রোক দিবস প্রতি বছর ২৯ অক্টোবর পালিত হয়।
উদ্দেশ্য
এই দিনটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো:
স্ট্রোকের গুরুত্বপূর্ণতা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো।
স্ট্রোক প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করা।
স্ট্রোক থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের জন্য উন্নত যত্ন ও সহায়তা নিশ্চিত করা।
স্ট্রোক সম্পর্কে কিছু তথ্য
স্ট্রোক মস্তিষ্কের একটি জটিল রোগ, যা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কোনো কারণে বিঘ্নিত হলে ঘটে (রক্তনালী বন্ধ হয়ে বা ছিঁড়ে গেলে)।
বিশেষজ্ঞরা প্রায়শই বলেন, স্ট্রোকের রোগীর জন্য প্রথম কয়েক ঘণ্টা, বিশেষ করে প্রথম চার ঘণ্টা, 'গোল্ডেন আওয়ার'। এই সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারলে অনেক রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।
স্ট্রোকের লক্ষণগুলো দ্রুত জানা এবং তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া জীবন বাঁচানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
🚶 স্ট্রোক রোগীদের রিহ্যাবিলিটেশন (পুনর্বাসন)
স্ট্রোক রোগীদের পুনর্বাসন (Rehabilitation) একটি দীর্ঘ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এর মূল লক্ষ্য হলো স্ট্রোকের কারণে সৃষ্ট শারীরিক, মানসিক এবং কথা বলার সমস্যাগুলো কাটিয়ে রোগীকে সর্বোচ্চ পরিমাণে স্বাবলম্বী করে তোলা এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা।
পুনর্বাসনের মূল পদ্ধতিসমূহ
স্ট্রোক রোগীর ক্ষতিগ্রস্ত মস্তিষ্কের অংশের ওপর নির্ভর করে পুনর্বাসন কার্যক্রম সাজানো হয়। এর প্রধান অংশগুলো হলো:
১. ফিজিওথেরাপি (Physiotherapy):
স্ট্রোক-পরবর্তী প্যারালাইসিস বা দুর্বলতা কাটাতে এটি সবচেয়ে জরুরি।
এর মাধ্যমে পেশির শক্তি এবং জয়েন্টের নড়াচড়ার ক্ষমতা বজায় রাখা হয়।
রোগীকে বিছানায় নড়াচড়া করা, বসা, দাঁড়ানো এবং হাঁটার (Walking) অনুশীলন করানো হয়।
ভারসাম্য (Balance) এবং চলাচলের সমন্বয় (Coordination) উন্নত করতে সহায়তা করে।
২. অকুপেশনাল থেরাপি (Occupational Therapy):
রোগীকে দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কাজগুলো (যেমন: খাওয়া, পোশাক পরা, গোসল করা, লেখা ইত্যাদি) পুনরায় করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
আক্রান্ত হাত বা পায়ের কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনতে এবং ব্যবহারের কৌশল শেখানো হয়।
প্রয়োজনে সহায়ক উপকরণ (যেমন: বিশেষ ধরনের চামচ, ওয়াকার ইত্যাদি) ব্যবহার করতে শেখানো হয়।
৩. স্পিচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি (Speech and Language Therapy):
স্ট্রোকের কারণে কথা বলায় (Aphasia) বা খাবার গিলতে (Dysphagia) সমস্যা হলে এই থেরাপি দেওয়া হয়।
উচ্চারণ, ভাষা বোঝা এবং নিজের চিন্তাভাবনা প্রকাশ করার ক্ষমতা উন্নত করার জন্য বিভিন্ন ব্যায়াম করানো হয়।
৪. সাইকোলজিক্যাল ও সোশ্যাল সাপোর্ট:
স্ট্রোকের কারণে রোগী প্রায়ই হতাশা (Depression), উদ্বেগ বা মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হন। কাউন্সেলিং এবং সাইকোলজিক্যাল সাপোর্ট এই সমস্যা মোকাবেলায় সাহায্য করে।
পরিবার ও সমাজের সহযোগিতা এবং রোগীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ পুনর্বাসনে খুবই জরুরি।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
তাৎক্ষণিক শুরু: স্ট্রোক হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব (সাধারণত ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে), রোগীর অবস্থা বুঝে পুনর্বাসন শুরু করা উচিত।
সমন্বিত দল: একজন স্ট্রোক রোগীকে সুস্থ করে তোলার জন্য ফিজিওথেরাপিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, স্পিচ থেরাপিস্ট এবং নিউরোলজিস্টের একটি সমন্বিত দল কাজ করে।
ধৈর্য ও ধারাবাহিকতা: স্ট্রোকের পুনর্বাসন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। রোগীর দ্রুত আরোগ্যের জন্য ধৈর্য এবং নিয়মিত থেরাপি চালিয়ে যাওয়া অপরিহার্য।