11/04/2023
❝গর্ভাবস্থায় যে সব ঔষধ খাওয়া যাবে না।❞
________________💊___________________
গর্ভাবস্থায় সবধরনের ওষুধ খাওয়া যায় না। কিছু কিছু ওষুধ গর্ভের সন্তানের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর ওষুধের তালিকায় সাধারন বেদনানাশক থেকে শুরু করে বেশ কিছু এন্টিবায়োটিকও রয়েছে।
কিছু কিছু ওষুধ গর্ভাবস্থার প্রথম ধাপে নিরাপদ কিন্তু শেষ ধাপে ক্ষতিকর হতে পারে। আবার কিছু কিছু ওষুধ আছে, সাধারনত গর্ভাবস্থায় দেয়া হয় না, কিন্তু সম্ভাব্য ঝুকির চেয়ে প্রয়োজনীয়তা যখন জরুরী হয়ে পড়ে তখন দেয়া হয়।
খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (Food and Drug Administration – FDA) কর্তৃক অনুমোদিত সব ওষুধ কিন্তু গর্ভবতীদের উপর পরীক্ষা করা হয় না। কারন এ ব্যপারে নৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ কারণে এসব ওষুধ গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে কতটা নিরাপদ, নিশ্চিত করে বলা যায় না।
গর্ভাবস্থায় যে সব ওষুধ খাওয়া উচিত না তার একটি তালিকা নিচে দেয়া হলো। এমনকি গর্ভাবস্থা সন্দেহ হলেও এই ওষুধ গুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
প্রেসক্রিপশন ছাড়া যে সব ওষুধ (OTC drugs) সহজে কিনতে পাওয়া যায়, তাদের মধ্যে রয়েছে
ওষুধের নাম
ব্যবহার
পরামর্শ
★এসপিরিন (Aspirin)
ব্যথানাশক
গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাস, মাঝের ৩ মাস এবং শেষের ৩ মাস অর্থাৎ পুরো গর্ভাবস্থাতেই ব্যবহার করা উচিত না।
★ক্লোরফেনিরামিন (Chlorpheniramine)
আলারজী, চুলকানি কমাতে ব্যবহৃত হয়
গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাস ও মাঝের ৩ মাসে সাবধানতার সাথে ব্যবহার করা উচিত। শেষের ৩ মাসে ব্যবহার করা উচিত না
★ব্রোমফেনিরামিন (Brompheniramine)
সাধারন ঠান্ডা, সর্দি কমাতে ব্যবহৃত হয়
গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাস ও মাঝের ৩ মাসে সাবধানতার সাথে ব্যবহার করা উচিত। শেষের ৩ মাসে ব্যবহার করা উচিত না
★আইবুপ্রফেন (ibuprofen)
জ্বর, ব্যথা, প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হয়
গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাস ও মাঝের ৩ মাসে সাবধানতার সাথে ব্যবহার করা উচিত। শেষের ৩ মাসে ব্যবহার করা উচিত না
★ন্যাপ্রক্সেন (Naproxen)
জ্বর, ব্যথা, প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হয়
গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাস ও মাঝের ৩ মাসে সাবধানতার সাথে ব্যবহার করা উচিত। শেষের ৩ মাসে ব্যবহার করা উচিত না। ©sanok
★সিওডোএফিড্রিন (Pseudoephedrine)
বন্ধ নাক ও সাইনাসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়
গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাসে ব্যবহার করা উচিত না। মাঝের ৩ মাস এবং শেষের ৩ মাসে সাবধানতার সাথে ব্যবহার করা উচিত।
★ক্যাস্টরওয়েল (Castor Oill)
গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাস, মাঝের ৩ মাস এবং শেষের ৩ মাস অর্থাৎ পুরো গর্ভাবস্থাতেই ব্যবহার করা উচিত না।
❝এবার এন্টিবায়োটিক নিয়ে আলোচনা করা যাক।❞
________________scm______________________
কোন কোন এন্টিবায়োটিক বাদ দেয়া উচিত, সুনির্দিষ্ট ভাবে বলা কঠিন, এক্ষেত্রে আরো যে সব বিষয় বিবেচনায় নিতে হয় তা হলো – আপনি এটি কি পরিমানে খাচ্ছেন, কতদিন ধরে খাচ্ছেন, গর্ভাবস্থার এখন কোন পর্যায় চলছে, ইত্যাদি। তবে সাধারণভাবে ঝুকির ভিত্তিতে এন্টিবায়োটিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয় যেমন, A-B-C-D এবং X। তারমধ্যে A হলো সবচেয়ে নিরাপদ আর X হলে অবশ্যই বর্জনীয়।
গর্ভাবস্থায় যে সমস্থ এন্টিবায়োটিক বর্জন করতে হবেঃ
___________________Scm________________________
💊 ওষুধ
যে রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ঃ
★স্টেপ্টোমাইসিন (Streptomycin)
যক্ষা
★টেট্ট্রাসাইক্লিন (Tetracycline) গ্রুপের ওষুধ যেমন, ডক্সিসাইক্লিন (Doxycycline) এবং মিনোসাইক্লিন (Minocycline)
শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমন, ব্রণ
★সালফোনামাইড (Sulfonamides) গ্রুপের ওষুধ যেমন, ক্লট্রিমাজল (Clotrimazole)
মুত্রনালীর সংক্রমন, কানের সংক্রমন, নিমোনিয়া (pneumonia)
★ফ্লুরোকুইনোলনস (Fluoroquinolones) গ্রুপের ওষুধ যেমন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন (Ciprofloxacin), লিভোফ্লক্সাসিন (Levofloxacin), ওফ্লক্সাসিন (Ofloxacin)
মুত্রনালীর সংক্রমন
★ট্রাইমেথোপ্রিম (Trimethoprim)
মুত্রনালীর সংক্রমন
💊যে এন্টিবায়োটিক গুলো তুলনামূলক নিরাপদঃ
____________________________________________
এমক্সিসিলিন (Amoxicillin)
এম্পিসিলিন (Ampicillin)
ক্লক্সাসিলিন (Cloxacillin)
ফ্লুক্লক্সাসিলিন (Flucloxacillin)
ক্লিন্ডামাইসিন (Clindamycin)
জেন্টামাইসিন (Gentamicin)
ইরাইথ্রোমাইসিন (Erythromycin)
সেফালস্পোরিনস (Cephalosporins) যেমন, সেফিক্সজিম (Cefixime), সেফটাজিডিম (Ceftazidime)
মেট্রোনিডাজল (Metronidazole)
এই ওষুধ গুলো B গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। যার অর্থ হলো, এই ওষুধ গুলো অন্য প্রাণীর মধ্যে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও পাওয়া গেছে। কিন্তু গর্ভবতী মেয়েদের মধ্যে অতি সতর্কতার সাথে ব্যবহার করে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। গর্ভাবস্থার পুরো সময়টাতেই এই ওষুধ গুলো নিরাপদ। তবে সব অবস্থাতেই এন্টিবায়োটিক সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত এবং ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনই খাওয়া উচিত না। ডাক্তার যখনই আপানাকে কোন ওষুধ দিবেন, সে ওষুধের উপকারিতা এবং সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সবই তিনি আপনাকে বুঝিয়ে দিবেন।
💊যদি আপনার ডায়বেটিস অথবা উচ্চ রক্তচাপ থাকেঃ
______________________________________________
আপনি যদি ডায়বেটিসের জন্য মুখে খাবার ওষুধ খেয়ে থাকেন, তবে যখনই আপনি গর্ভধারণের পরিকল্পনা করবেন তখনই বা গর্ভবতী হয়ে পড়েছেন জানার পর পরই আপনার ডাক্তারকে জানান। ডায়বেটিসের জন্য মুখে খাবার সব ওষুধ গর্ভাবস্থায় খাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে ডাক্তার আপনার ওষুধ বদলে দিবেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিবেন।
★মেটফরমিন (Metformin) এবং গ্লিবেনক্লিমাইড (Glibenclamide) ডায়বেটিসের চিকিৎসায় এই দুটি মুখে খাবার ওষুধ গর্ভাবস্থায় নিরাপদ। যদি গর্ভাবস্থায় খাবার নিয়ন্ত্রন এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে আপানর ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রনে না আসে তবে ইনসুলিনই প্রথম পছন্দ। তবে উপরের মুখে খাবার ওষুধ দুটিও এক্ষেত্রে নিরাপদ।
💊উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসার ক্ষেত্রেঃ
______________________________
এ,সি,ই ইনহিবিটর (ACE Inhibitor - Angiotensin-converting Enzyme Inhibitor) এবং এ,আর,বি (ARB-Angiotensin Receptor Blocker) গ্রুপের ওষুধ নিষিদ্ধ। এই গ্রুপের মধ্যে রয়েছে র্যামিপ্রিল (Ramipril), এনালাপ্রিল (Enalapril), লিসিনোপ্রিল (Lisinopril), লোসারটান (Losartan), ভালসারটান (Valsartan) ইত্যাদি। গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় যা ব্যবহার করা হয় তা হলো হাইড্রালাজিন (Hydralazine), মিথাইল ডোপা (Methyldopa) এবং লেবিট্যালোল (Labetalo)l
⚠️সাবধানতাঃ
একই জেনেরিক নামের ওষুধ বাজারে ভিন্ন ভিন্ন নামে পাওয়া যায়। ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানি তাদের নিজস্ব দেয়া নামে বাজারজাত করে। ওষুধ কেনার আগে জেনেরিক নাম দেখে নিশ্চিত হয়ে নিন। কাছাকাছি নাম হলেই একই ওষুধ হবে এমন কোন কথা নেই। শেষ কথা হলো এ ধরনের ওষুধ ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কখনই খাবেন না।
◎ ══════ ❈ ══════ ◎
©শনক চন্দ্র মোহন্ত
ইনস্টিটিউট অব হেলথ্ টেকনোলোজি,তাজহাট, রংপুর
ফার্মেসী ডিপার্টমেন্ট