15/11/2025
#স্বাস্থ্য_সচেতনতা
বাঁচতে হলে জানতে হবে ।
পচে গলে যাওয়া কিডনিও সুস্থ হবে যা কয়েকদিন খেতে পারলে। কিডনি সুস্থ করতে পারে যেসব খাবার।
আপনার শরীরের ভেতরে এমন দুটি অঙ্গ আছে, যেগুলো নিঃশব্দে ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছে— কিন্তু আপনি তার কথা প্রায় ভুলেই যান। এগুলো হলো কিডনি। এক মুহূর্তের জন্যও কিডনি থেমে থাকলে, পুরো শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আজকের যুগে কিডনির সমস্যা ভয়াবহ হারে বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ১০ জনের মধ্যে অন্তত ৩ জন কোনো না কোনোভাবে কিডনি দুর্বলতায় ভুগছেন।
অনিয়মিত খাবার, অতিরিক্ত লবণ, কম পানি পান করা, ঘুমের অভাব, ব্যথার ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার— এইসবই ধীরে ধীরে কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে। প্রথমে বুঝা যায় না, কিন্তু একসময় শরীরে পানি জমা, চোখ ফুলে যাওয়া, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, শরীর ভারী লাগা— এগুলো সবই কিডনি দুর্বলতার লক্ষণ।
কিন্তু সুখবর হলো, প্রাকৃতিকভাবে কিডনিকে আবারও শক্তিশালী করা সম্ভব। এমনকি ক্ষতিগ্রস্ত কিডনিও কিছু নির্দিষ্ট খাবারের মাধ্যমে ধীরে ধীরে নিজেকে পুনর্গঠন করতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলেন, কিডনি এমন একটি অঙ্গ, যার কোষগুলোর “রিজেনারেশন” ক্ষমতা রয়েছে— অর্থাৎ এটি নিজে থেকেই নতুন কোষ তৈরি করতে পারে, যদি তাকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দেওয়া হয়।
আজকের এই গবেষণাধর্মী লেখায় আমরা জানব, কিডনি সুস্থ রাখতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কিডনি পুনরুদ্ধারে কোন খাবারগুলো সবচেয়ে কার্যকর।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কিডনি প্রতিদিন প্রায় ২০০ লিটার রক্ত ছেঁকে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়। কিন্তু যখন এই ফিল্টার সিস্টেমে টক্সিন জমে যায়, তখন কিডনির কোষগুলো ধীরে ধীরে কাজ বন্ধ করে দেয়। তাই প্রথম ধাপ হলো— কিডনি পরিষ্কার করা।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর উপাদান হলো “ধনেপাতা পানি”। গবেষণায় দেখা গেছে, ধনেপাতা কিডনির মধ্যে জমে থাকা ইউরিক অ্যাসিড, ইউরিয়া ও টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আধা কাপ ধনেপাতা সেদ্ধ পানি পান করলে কিডনির ভেতরের জমে থাকা বর্জ্য দ্রবীভূত হয়ে বেরিয়ে যায়।
দ্বিতীয় শক্তিশালী উপাদান হলো “তরমুজ”। তরমুজে প্রায় ৯২% পানি থাকে, যা শরীরের অতিরিক্ত লবণ ও টক্সিন বের করে দেয়। এটি প্রাকৃতিক ডাইইউরেটিক হিসেবে কাজ করে— অর্থাৎ এটি প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে কিডনিকে বিশ্রাম দেয়। প্রতিদিন একবেলা তরমুজ খেলে কিডনির ওপরের চাপ কমে, এবং রক্ত পরিষ্কার থাকে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার হলো “কালোজিরা”। আয়ুর্বেদে কালোজিরাকে বলা হয় “শিফা”, অর্থাৎ নিরাময়ের দানা। কালোজিরার তেলে রয়েছে থাইমোকুইনন, যা কিডনির কোষের প্রদাহ কমায় এবং নতুন কোষ গঠনে সাহায্য করে। এটি কিডনির অভ্যন্তরীণ দেয়াল পরিষ্কার রাখে, ফলে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে।
কিডনিকে পুনর্জীবিত করতে যেসব খাবার আশ্চর্য কাজ করে, তার মধ্যে “আপেল”, “লাল বিট”, এবং “আমলকি” রয়েছে। আপেলে আছে পেকটিন নামক একটি ফাইবার, যা শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে কিডনিকে সুরক্ষা দেয়। লাল বিটে রয়েছে বিটেইন, যা রক্তে জমে থাকা টক্সিন ভেঙে দেয় এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়।
আমলকি বা ভারতীয় গোসবারি কিডনির জন্য এক অসাধারণ টনিক। এটি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, রক্ত পরিশুদ্ধ করে এবং কিডনির টিস্যুগুলোকে মেরামত করে। প্রতিদিন সকালে এক চামচ আমলকির রস খেলে কিডনি দীর্ঘদিন শক্তিশালী থাকে।
এছাড়া “বেল পাতা” ও “তুলসি পাতা” কিডনির প্রদাহ কমাতে দারুণ কার্যকর। তুলসির রস ইউরিক অ্যাসিড কমায়, যা কিডনি স্টোনের অন্যতম প্রধান কারণ। প্রতিদিন সকালে ৫-৬টি তুলসি পাতা চিবিয়ে খেলে বা গরম পানিতে মিশিয়ে পান করলে শরীরের টক্সিন কমে যায়।
অনেক সময় কিডনি ক্ষয়ের মূল কারণ হয় শরীরের পানিশূন্যতা। যারা দিনে কম পানি পান করেন, তাদের রক্ত ঘন হয়ে যায়, ফলে কিডনিকে সেই রক্ত ফিল্টার করতে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়। তাই দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই এক গ্লাস উষ্ণ পানি পান করলে কিডনির ফিল্টার সিস্টেম সক্রিয় হয়।
“নারকেল পানি” কিডনির জন্য প্রাকৃতিক ওষুধ। এতে আছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট, যা শরীরের অ্যাসিড-বেজ ভারসাম্য বজায় রাখে। এটি কিডনির ভেতরের পাথর ভাঙতে সাহায্য করে এবং প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমায়।
অন্যদিকে “ডালিম” কিডনির কোষে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। ডালিমের রসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো কিডনির কোষে রক্তপ্রবাহ উন্নত করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু মেরামত করে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, কিডনি রোগীদের মধ্যে যারা নিয়মিত আদা, রসুন ও হলুদ খেতেন, তাদের কিডনি ফাংশন দ্রুত উন্নত হয়েছে। কারণ এই তিনটি উপাদানই শরীরের প্রদাহ কমায়, রক্তে টক্সিন জমতে দেয় না, এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়।
বিশেষ করে “হলুদ”-এর কারকিউমিন যৌগ কিডনির ভেতরের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে পুনর্জীবিত করে। প্রতিদিন এক গ্লাস কুসুম গরম দুধে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে খেলে কিডনি ও লিভার উভয়ই পরিষ্কার থাকে।
এছাড়া “লাউয়ের রস” কিডনির জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি শরীর ঠান্ডা রাখে, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমায়, এবং শরীরের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
যাঁরা কিডনি দুর্বলতায় ভুগছেন, তাদের খাবারে প্রোটিন ও লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। অতিরিক্ত প্রোটিন (বিশেষ করে লাল মাংস) কিডনির ওপর চাপ ফেলে, কারণ প্রোটিন ভাঙার পর তৈরি হওয়া ইউরিয়া কিডনির মাধ্যমে বের হতে হয়। তাই সপ্তাহে ১-২ দিন নিরামিষ খাবার খেলে কিডনি বিশ্রাম পায়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেন, কিডনি দুর্বল হলে শরীরে ফসফরাস জমে যায়, যা হাড় ক্ষয় করে ও রক্তচাপ বাড়ায়। তাই সফট ড্রিংকস, ফাস্ট ফুড, এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার একেবারে বন্ধ করা উচিত।
অন্যদিকে, নিয়মিত হাঁটাহাঁটি ও ঘুম কিডনি পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রাতে অন্তত ৭ ঘণ্টা গভীর ঘুম না হলে কিডনির ফিল্টারিং প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়।
সৃষ্টিকর্তা মানুষের শরীরকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন, যাতে প্রকৃত খাবার ও প্রাকৃতিক জীবনধারা মেনে চললে এমনকি দুর্বল কিডনিও নিজে নিজে সেরে উঠতে পারে।
তাই এখনই শুরু করুন কিডনির যত্ন। সকালে খালি পেটে ধনেপাতা পানি, দুপুরে তরমুজ বা ডালিম, রাতে কুসুম গরম দুধে হলুদ— এই তিনটি অভ্যাসই আপনার কিডনিকে নতুন জীবন দিতে পারে।
মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে শরীর হালকা লাগবে, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমে যাবে, ফোলা ভাব দূর হবে। কিডনি আবার তার পুরনো শক্তি ফিরে পেতে শুরু করবে।
এটাই প্রমাণ করে, সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি শরীর নিজেই সবচেয়ে বড় ওষুধ— যদি আমরা তাকে সঠিক পুষ্টি, বিশ্রাম ও যত্ন দিই।
@কপি