18/11/2025
পিত্তথলির পাথর (Gallstone) সাধারণত পিত্তের মধ্যে রাসায়নিক অসামঞ্জস্যতা বা পিত্ত প্রবাহে বাধা তৈরি হলে গঠিত হয়। নিচে সহজভাবে কারণগুলো দেওয়া হলো:
✅ পিত্তথলির পাথর হওয়ার প্রধান কারণ
1. পিত্তে কোলেস্টেরল বেশি থাকা
পিত্তথলিতে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল জমে শক্ত হয়ে পাথর তৈরি করে।
✔ মোটা হওয়া
✔ বেশি তৈলাক্ত খাবার খাওয়া
✔ শারীরিক পরিশ্রম কম করা
এগুলো ঝুঁকি বাড়ায়।
2. বিলিরুবিন বেশি হয়ে গেলে
লিভার রোগ, রক্ত ভাঙার কিছু সমস্যা (hemolysis) বা সংক্রমণ হলে পিত্তে বিলিরুবিন বেড়ে পাথর তৈরি করতে পারে।
এগুলোকে পিগমেন্ট স্টোন বলা হয়।
3. পিত্তথলি ঠিকমতো খালি না হওয়া
যখন পিত্তথলি ঠিকমতো সংকুচিত না হয়, তখন পিত্ত জমে থাকে এবং ধীরে ধীরে পাথর তৈরি হয়।
✔ গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে
✔ দীর্ঘ সময় উপোস থাকা
✔ ওজন খুব দ্রুত কমানো
এগুলোতে ঝুঁকি বাড়ে।
---
🧬 ঝুঁকি বাড়ায় এমন শারীরিক ও জীবনযাপনের কারণ
নারীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি
৪০ বছরের বেশি বয়স
স্থূলতা (ওজন বেশি)
ডায়াবেটিস
ফ্যাটি লিভার
জিনগত বা পারিবারিক ইতিহাস
দ্রুত ওজন কমানোর ডায়েট
খাবারে অতিরিক্ত চর্বি ও তেল
---
🩺 লক্ষণ
সবার লক্ষণ নাও থাকতে পারে, তবে সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:
ডান দিকের পাঁজরের নিচে তীব্র ব্যথা
বমি বমি ভাব বা বমি
জ্বর (সংক্রমণ হলে)
খাবার হজমে সমস্যা
✅ পিত্তথলির পাথরের চিকিৎসা
পাথরের ধরন, আকার, লক্ষণ ও জটিলতা দেখে চিকিৎসা ঠিক হয়।
1) অস্ত্রোপচার (সবচেয়ে কার্যকর ও সাধারণ চিকিৎসা)
➤ ল্যাপারোস্কোপিক কোলেসিস্টেকটমি
এটি সবচেয়ে নিরাপদ ও প্রচলিত পদ্ধতি।
ছোট ছিদ্র করে পিত্তথলি অপসারণ করা হয়।
পাথর সম্পূর্ণ সেরে যায় এবং আবার হওয়ার ঝুঁকি থাকে না।
হাসপাতাল থাকার সময় কম (১–২ দিন)।
2) ওষুধে চিকিৎসা (যাদের অপারেশন করা সম্ভব নয়)
Ursodeoxycholic acid (UDCA) কিছু ছোট কোলেস্টেরল পাথর ধীরে ধীরে গলাতে পারে।
সময় লাগে ৬–২৪ মাস।
সব ধরনের পাথরের ক্ষেত্রে কাজ করে না।
⚠ এটি ডাক্তারি পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবে না।
3) জটিলতা হলে বিশেষ চিকিৎসা
যদি পাথর পিত্তনালী ব্লক করে:
ERCP করে পাথর বের করা
অ্যান্টিবায়োটিক
জরুরি অস্ত্রোপচার
---
🍎 পিত্তথলির পাথর থাকলে খাদ্যতালিকা
যে খাবারগুলো খাবেন
✔ কম তেল-চর্বিযুক্ত খাবার
সিদ্ধ/ভাপ/গ্রিল করা খাবার
লো-ফ্যাট দুধ, দই
ওটস, সবজি, ফল
মাছ (কম তেল দিয়ে)
ডাল, মসুর, ছোলা
ব্রাউন রাইস, রুটি
শসা, গাজর, লাউ, করলা
✔ উচ্চ ফাইবার খাবার
ফাইবার পিত্ত নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
সবুজ শাক
ফল (আপেল, পেয়ার, কলা)
দানাদার শস্য
সালাদ
✔ যথেষ্ট পানি পান
দিনে ৮–১০ গ্লাস পানি।
---
❌ যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন
বেশি তেল, ভাজা, পুরি, পরোটা
লিভার/মগজ/চর্বিযুক্ত মাংস
চিজ, বাটার, ক্রিম
ফাস্ট ফুড (বার্গার, পিজা, ফ্রাইড চিকেন)
খুব মসলাযুক্ত খাবার
ডিমের কুসুম অতিরিক্ত
চিপস, কেক, বিস্কুট, চকলেট
কোমল পানীয়
---
🧪 পিত্তথলির পাথর শনাক্ত করতে যে পরীক্ষা করা হয়
1) আল্ট্রাসনোগ্রাফি (USG Whole Abdomen)
পাথর আছে কিনা নিশ্চিত হওয়ার সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর পরীক্ষা।
2) Liver Function Test (LFT)
লিভারের অবস্থা ও পিত্ত জমে আছে কিনা তা দেখা হয়।
3) CBC (Complete Blood Count)
সংক্রমণ বা ইনফেকশন আছে কিনা জানা যায়।
4) Serum Amylase / Lipase
অগ্ন্যাশয়ে (pancreas) সমস্যা বা পাথর ব্লক করেছে কিনা বোঝা যায়।
5) MRCP (যদি ডাক্তার মনে করেন)
পিত্তনালীতে পাথর আছে কিনা তা বিস্তারিত দেখতে করা হয়।
আর যদি কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে জানান