10/11/2025
#শরীরের ভেতর অবস্থান করা জিনকে দুর্বল ও পরাভূত করার সহজ আমল
মানুষ কখনও এমন কিছু মানসিক ও শারীরিক কষ্টে পড়ে, যার সুস্পষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। দীর্ঘদিন ধরে একই কষ্ট চলতে থাকলে অনেক সময় জিন-সংক্রান্ত সমস্যা সেটিকে জটিল করে তোলে। কোরআন-সুন্নাহ আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে এই ধরনের আঘাতের মোকাবিলা করতে হয়—ধর্মীয় আমল, দোয়া, ধৈর্য, এবং আল্লাহর ওপর সম্পূর্ণ ভরসা দিয়ে।
এই আমলের উদ্দেশ্য জিনকে প্রজ্বলিত বা নির্যাতন করা নয়। উদ্দেশ্য হলো কোরআনের বারকত ও আল্লাহর পক্ষ থেকে সুরক্ষা চাওয়া। কোরআনের নূর এমনিতেই শয়তান ও জিনকে দগ্ধ করে, দুর্বল করে, তাড়িয়ে দেয়। কোরআনই বলে,
إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيفًا
"নিশ্চয়ই শয়তানের কৌশল খুবই দুর্বল।" (সূরা নিসা ৭৬)
এখানেই ভরসা। মানুষ দুর্বল হতে পারে, কিন্তু আল্লাহর কালাম কখনো দুর্বল নয়।
#কী বুঝে আমল শুরু করবেন
রুকইয়াহ মানেই কোরআন-সুন্নাহ নির্ভর দোয়া ও তিলাওয়াতের মাধ্যমে শারীরিক-মানসিক চিকিৎসা। এতে কুসংস্কার নেই, অতিরঞ্জন নেই। আপনাকে শুধু দুইটি জিনিস ধরে রাখতে হবে—সঠিক নিয়ত এবং পাপ বর্জন।
আমল শুরু করার আগে আল্লাহর কাছে আন্তরিক তাওবা করবেন। অন্তর পরিষ্কার না থাকলে আমল প্রভাবিত হয়। এরপর পরিষ্কার ভাষায় নিয়ত করবেন:
হে আল্লাহ, যদি আমার অসুস্থতার সাথে যে জিন জড়িত থাকে, সে হেদায়েতযোগ্য হয় তাকে হেদায়েত দিন। আর যদি সে জালিম হয়, ক্ষতি করে, আমার ওপর আক্রমণ করে তাকে দূর করে দিন, দুর্বল করুন, অপসারণ করুন। আমার শরীর ও মনের যেসব স্থানে সে কষ্ট দেয়, তাকে তার চেয়ে বহু গুণ বেশি কষ্ট দিন। যেমন আপনি ফেরাউন, কারুন, হামান, নমরুদ ও ইবলিসের ওপর অভিশাপ পাঠিয়েছেন, তেমনি তাকে দূর করে দিন। আমাকে সম্পূর্ণ সুস্থতা দিন। আপনি সর্বশক্তিমান।
নিয়তের পর শান্ত মনে আমল শুরু করবেন।
আমলের ধাপসমূহ
১. আয়াতুল কুরসি তিলাওয়াত
২১ বার পড়বেন (বেশি পড়তে চাইলে আরও পারেন, শুধু বিজোড় সংখ্যা রাখবেন)।
এরপর আয়াতের শেষাংশটি বারবার পড়বেন:
وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
অর্থ: আসমান-জমিন রক্ষা করা তাঁর জন্য কোনো কষ্টের বিষয় নয়। তিনি অতুলনীয় উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, মহান।
যত বেশি সময় মনোযোগ দিয়ে পড়বেন, তত দ্রুত প্রভাব অনুভব করবেন। আয়াতুল কুরসি শয়তান-জিনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী সুরক্ষা।
২. সূরা সাফফাতের ১-১০ আয়াত তিলাওয়াত
২১ বার বা তার বেশি বিজোড় সংখ্যায় পড়বেন।
এরপর বারবার পড়বেন:
فَأَتْبَعَهُ شِهَابٌ ثَاقِبٌ
অর্থ: জ্বলন্ত অগ্নিশিখা তাদের পিছু নেয়।
কোরআনে বলা হয়েছে, জিনেরা আসমানের খবর চুরি করতে গেলে আগুনের শিখা তাদের তাড়িয়ে দেয়। এই আয়াত তাদের ওপর আঘাত হানে। জিনেরা এই আয়াত অত্যন্ত ভয় পায়।
৩. সূরা বুরুজ তিলাওয়াত
২১ বার পড়বেন।
এরপর বারবার পড়বেন:
فَلَهُمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَلَهُمْ عَذَابُ الْحَرِيقِ
অর্থ: তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি, এবং আগুনে জ্বলার শাস্তি।
এই আয়াত মন্দ জিনকে অত্যন্ত দুর্বল করে। শয়তানী শক্তি এ আয়াতের অর্থ ও সুর শুনলেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আমলের সময় প্রয়োজনীয় জিনিস
• খাওয়ার উপযোগী এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল
• বেশি পরিমাণ পানি
• বিশুদ্ধ মধু
এই তিনটিই নববী চিকিৎসার অংশ এবং রুকইয়াহতে খুব কার্যকর।
আমল শেষে যা করবেন
• নিজের ওপর ফুঁ দেবেন, হাত দিয়ে পুরো শরীর মুছবেন
• মধু ও পানির ওপর ফুঁ দেবেন
• দ্বিতীয় দিন থেকে আমলের শুরুতে গতকালের পড়া পানি দিয়ে গোসল করবেন
• এক গ্লাস ভরে ফুঁ দেওয়া পানি পান করবেন
• অলিভ অয়েল পুরো শরীরে মালিশ করবেন
• এরপর আবার আমল শুরু করবেন
এভাবে টানা তিন সপ্তাহ চালিয়ে গেলে পরিবর্তন চোখে পড়ার মতো হয় ইনশাআল্লাহ।
প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে কিছু সুন্নতি আমল
• ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসি
• সকালে-সন্ধ্যায় তিন কুল (ইখলাস, ফালাক, নাস)
• প্রতিদিন অন্তত ১০০ বার লা-হাওলা পড়া
• ঘরে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত
• অপবিত্রতা বা হারাম বিষয় সম্পূর্ণ পরিহার
• ইয়াসিন, বাকারা—বিশেষ করে সূরা বাকারা ঘরে চালানো
হাদিসে এসেছে,
"যে ঘরে সূরা বাকারা তিলাওয়াত হয়, শয়তান সেই ঘর থেকে পালায়।"
সর্বোপরি এই আমলকে কোনো যাদুকরী পদ্ধতি মনে করবেন না। এটি কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী দোয়া, সুরক্ষা, এবং ইবাদাতের একটি নিয়মিত চর্চা। ফল আল্লাহর হাতে। নিয়ত পরিষ্কার হলে এবং আপনি ধৈর্য ধরে নিয়মিত করলে আল্লাহ নিজেই পথ খুলে দেন।
আপনার উপর যদি সত্যিই কোনো আধ্যাত্মিক চাপ থাকে, এই আমল আল্লাহর ইচ্ছায় সেই চাপ ভেঙে দেবে। শরীর ও মন দুটোই হালকা হবে। শান্তি ফিরে আসবে।
আল্লাহ আপনাকে সম্পূর্ণ আরোগ্য দিন।
✍️Mufti Mahmudul Hasan