28/04/2024
আই ভি এফ (IVF) কি?
আই ভি এফ (ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) বলতে এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতিকে বোঝায় যেখানে নারীর ডিম্বাণু তার ডিম্বাশয় থেকে অপসারণ করা হয় এবং একটি পরীক্ষাগারে পুরুষের শুক্রাণু দিয়ে নিষিক্ত করা হয়। এরপরে গর্ভাবস্থা অর্জনের জন্য গঠিত ভ্রূণগুলিকে মায়ের জরায়ুতে স্থাপন করা হয়।
যাদের জন্য আই ভি এফ (IVF) চিকিৎসা উপকারী
যেসব নারীর ফেলোপিয়ান টিউবে ব্লকেজ আছে এবং যেসব পুরুষের শুক্রাণু ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করতে পারে না।
যেসব নারীর জরায়ুগাত্রে ফাইব্রয়েড আছে বা ওভ্যুলেশন ঠিকমতো হয় না।
শারীরিক কোনও অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার কারণে কোনও নারীর ফেলোপিয়ান টিউব বাদ দিতে হয়েছে।
পুরুষদের ক্ষেত্রে বীর্য বা স্পার্ম কাউন্ট বা শুক্রাণুর ঘনত্ব কম হলে এই পদ্ধতি লাভজনক হয়।
এছাড়াও কোনও জেনেটিক সমস্যার কারণে কনসিভ করতে না পারলে বা অজ্ঞাত কারণবশত গর্ভে সন্তান না এলে আই ভি এফ (IVF) পদ্ধতিকে কাজে লাগানো হয়।
চিকিৎসা
পূর্ব প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা
এগুলি আপনার এবং আপনার সঙ্গীর বয়স এবং পূর্ববর্তী চিকিৎসার উপর নির্ভর করে। এর মধ্যে রয়েছে বন্ধ্যাত্ব মূল্যায়নে উল্লিখিত মৌলিক মূল্যায়ন। উপরন্তু, আমরা আপনার শারীরিক সুস্থতা পরীক্ষা করার জন্য নিয়মিত রক্তের রিপোর্টের পরামর্শ দিয়ে থাকি। হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করতে বা ডিম্বাশয়ের রিজার্ভ নির্ধারণের জন্য অতিরিক্ত পরীক্ষা প্রয়োজন অনুসারে পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
আইভিএফ পদ্ধতি
১) ডিম তৈরি- প্রথম ধাপে ইনজেকশন দিয়ে ভাল ডিম্বাণু তৈরির চেষ্টা করা হয়। সাধারণত প্রতি মাসে একটা ডিম ফোটে। কিন্তু এক্ষেত্রে ওষুধ প্রয়োগের ফলে একাধিক ডিম পরিপক্ক হয়। যদি ওষুধ দিয়েও পর্যাপ্ত সংখ্যায় ডিম্বাণু তৈরি না করা যায় তখন দাতার ডিম্বাণু নিয়ে আইভিএফ করা হয়।
২) ডিম সংগ্রহ- ঋতুচক্রের দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন থেকে ফলিকিউলার স্টাডির মাধ্যমে ডিম্বাণু উৎপাদনের বিষয়টি তত্ত্বাবধান ও কবে শরীরের বাইরে বার করে আনা হবে তা নির্ণয় করা হয়। সেই মতো দিন দেখে আর একটি ইনজেকশন দেওয়া হয় যা ডিম ফাটিয়ে ডিম্বাণুকে বাইরে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে। এই ইনজেকশন দেওয়ার ৩২-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে আলট্রা সোনোগ্রাফির সাহায্যে ডিম্বাণুগুলিকে বার করে আনা হয়।
৩) শুক্রাণু সংগ্রহ- একই দিনে পুরুষসঙ্গীর শুক্রাণু সংগ্রহ করে (ডোনার স্পার্মও ব্যবহার হতে পারে) পরীক্ষাগারে রেখে দেওয়া হয়।
৪) নিষিক্তকরণ- ডিম্বাণু ও শুক্রাণু পরস্পরকে নিষিক্ত করে ভ্রূণ তৈরি হয় চিরাচরিত পদ্ধতিতে। অথবা শুক্রাণুকে সরাসরি ডিম্বাণুতে ইঞ্জেক্ট করে ভ্রূণ তৈরি করা হয় (আইসিএসআই)।
৫) ভ্রূণ প্রস্তুতি ও স্থাপন- ভ্রূণ তৈরি হয়ে যাওয়ার পরে তা ইনকিউবেটরে রাখা হয়। এই সময় একটি ছোট্ট পরীক্ষা করা হয় (প্রিইমপ্ল্যান্টেশন জেনেটিক টেস্টিং) যাতে জিনগত কোনও ত্রুটি রয়েছে কি না তা জানা যায়। পাঁচ থেকে ছ’দিনের মাথায় আট কোষ, ষোলো কোষ বা ব্লাস্টোসিস্ট অবস্থায় ভ্রূণ মায়ের গর্ভে প্রতিস্থাপিত করা হয় ক্যাথিটারের সাহায্যে। অনেক সময় দু’টি বা তিনটি ভ্রূণ প্রতিস্থাপিত করা হয়। এতে একদিকে যেমন গর্ভধারণে সফলতার হার বাড়ে, অন্যদিকে তেমনই যমজ বা তিনটি সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা থেকে যায়।
আইভিএফ-এর সুবিধা
১) আইভিএফ-এ সাফল্যের হার বেশি। বিশেষ করে ৩৫ এর নীচে যাঁদের বয়স, তাঁদের ক্ষেত্রে। তবে বয়স বেশি হলে সাফল্যের হার কমে।
২) একাধিক বার চেষ্টা করা যায়।