22/11/2025
🛑 ভূমিকম্প: দৌড় নয়, বুদ্ধি দিয়ে বাঁচুন!
বিশেষ করে ঢাকা শহরের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়, যেখানে বেশিরভাগ আবাসনই ৫ থেকে ৭ তলা অ্যাপার্টমেন্ট, সেখানে ভূমিকম্পের প্রথম ১০ থেকে ২০ সেকেন্ডের সিদ্ধান্তই জীবন আর মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয়। কম্পন শুরু হলেই আতঙ্কিত হয়ে দৌড়ে সিঁড়ির দিকে যাওয়াটা সবচেয়ে সাধারণ ভুল—এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটিই প্রাণহানির কারণ হয়।
❌ যে ভুলগুলো এড়িয়ে চলবেন (এগুলো খুবই বিপজ্জনক)
১. সিঁড়িতে দৌড়ানো:
বিভিন্ন গবেষণা বলছে, ভূমিকম্পের সময় সিঁড়িগুলোই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ভবন ধসে পড়লে সাধারণত ওপরের অংশের চাপ সরাসরি সিঁড়ির উপর এসে পড়ে। ধাক্কাধাক্কি, ভিড় এবং বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় সৃষ্ট অন্ধকারে ৯০% ক্ষেত্রেই গুরুতর আঘাত বা মৃত্যু সিঁড়িতেই ঘটে।
২. বারান্দায় আশ্রয়:
বারান্দার রেলিং এবং কাঠামো একাধিক দিক থেকে কম্পনের চাপ সহ্য করতে পারে না এবং সহজেই ভেঙে নিচে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। বারান্দা এড়িয়ে চলুন।
৩. লিফট ব্যবহার:
কম্পনের সময় লিফট ব্যবহার করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। লিফট জ্যাম হয়ে যাওয়া, তার ছিঁড়ে যাওয়া বা মাঝপথে আটকে পড়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
✔️ বাঁচার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য কৌশল: Drop – Cover – Hold On
ভূমিকম্প শুরু হলে দ্রুত এই তিনটি পদক্ষেপ নিন:
১. আশ্রয় নিন (Cover): যত দ্রুত সম্ভব মজবুত কোনো টেবিল বা খাটের নিচে ঢুকে পড়ুন।
২. ঢেকে রাখুন (Hold On): দুই হাত দিয়ে শক্তভাবে আপনার মাথা ও ঘাড় ঢেকে রাখুন।
৩. ধরে থাকুন (Drop): কম্পন না থামা পর্যন্ত টেবিল বা কাঠামোটিকে শক্ত করে ধরে রাখুন।
বিছানায় থাকলে: খাটের নিচে আশ্রয় নিন। খাট ভেঙে পড়লেও এর নিচে একটি ফাঁকা 'লাইফ ট্রায়াঙ্গেল' বা জীবন রক্ষার জায়গা তৈরি হতে পারে।
বড় আসবাবের নিচে: ড্রয়িং বা ডাইনিং রুমে থাকলে মজবুত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন। কাঁচ, জানালা, আয়না এবং ভারী শোকেস থেকে দূরে থাকুন।
আশ্রয় না পেলে: যদি টেবিল বা শক্ত কাঠামো না পান, তবে দ্রুত একটি দেয়ালের কোণে বসে পড়ুন এবং মাথা-ঘাড় ঢেকে রাখুন। এটি 'সেফ কর্নার পজিশন' নামে পরিচিত; সাধারণত কোণার অংশগুলো পুরোপুরি চাপে ভাঙে না।
মাথা রক্ষা: তাৎক্ষণিক যা পাওয়া যায় (যেমন: হেলমেট, বালতি, মোটা বই বা ব্যাগ) তা মাথার ওপর চেপে ধরুন। ভূমিকম্পে যেকোনো ভাঙা বস্তু সরাসরি মাথা লক্ষ্য করে পড়তে পারে।
🏠 নিচতলার বাসিন্দাদের জন্য সুযোগ (১ম বা ২য় তলা)
যারা ১ম বা ২য় তলায় থাকেন, তাদের নিরাপদে বাইরে বের হওয়ার সুযোগ তুলনামূলকভাবে বেশি।
দরজা খুলে দিন: কম্পন শুরুর সাথে সাথেই দ্রুত দরজাগুলো খুলে দিন। ঝাঁকুনিতে দরজা জ্যাম হয়ে গেলে বের হতে পারবেন না।
দ্রুত সিঁড়ি ব্যবহার: প্রথম ১৫–২০ সেকেন্ডের মধ্যে দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামুন। এর বেশি সময় নিলে ঝুঁকি বাড়বে।
বাইরে অবস্থান: বাইরে এসে ভবন থেকে কমপক্ষে ১০০ ফুট দূরে খোলা জায়গায় দাঁড়ান।
এড়িয়ে চলুন: বিদ্যুতের খুঁটি, গাছপালা এবং তারের নিচে দাঁড়ানো থেকে বিরত থাকুন।
🆘 ধ্বংসস্তূপে আটকে গেলে (জরুরী উদ্ধার প্রোটোকল)
যদি দুর্ভাগ্যবশত ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়েন, তবে এই আন্তর্জাতিক প্রোটোকলগুলো মেনে চলুন:
চিৎকার নয়: অযথা চিৎকার করে শক্তি নষ্ট করবেন না। ধুলো ফুসফুসে ঢুকে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে দিতে পারে।
সংকেত দিন: হুইসেল থাকলে বাজান। হুইসেল না থাকলে, কোনো শক্ত বস্তু (যেমন পাথর বা লোহার পাইপ) দিয়ে প্রতিবার ৩ বার করে দেওয়ালে বা পাইপে টোকা দিন। এটি আন্তর্জাতিক 'SOS রেসকিউ সংকেত'।
ব্যাটারি বাঁচান: মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে রাখুন, কিন্তু কথা বলা বা ভিডিও করা থেকে বিরত থাকুন।
শ্বাস নিন: মুখে কাপড় চেপে রাখুন যাতে ধুলো কম ঢোকে এবং শ্বাস নিতে সুবিধা হয়।
📝 আজ থেকেই প্রস্তুতি নিন
জরুরী সরঞ্জাম: আপনার বিছানার পাশে সবসময় জুতা, একটি হেলমেট এবং হুইসেল প্রস্তুত রাখুন।
ভারী আসবাবপত্র: ভারী আলমারি, ফ্রিজ এবং শেলফগুলো দেয়ালে স্ক্রু করে বা বন্ধনী দিয়ে ভালোভাবে ফিক্স করে দিন।
গ্যাস ও জিনিসপত্র: গ্যাস সিলিন্ডার চেইন বা স্ট্যান্ড দিয়ে বেঁধে রাখুন। দরকারি চাবি সবসময় হাতে কাছে রাখুন।
যোগাযোগ: পরিবারের সবার ফোনে জরুরি সেবার নম্বরগুলো সেভ করে রাখুন।
একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা মনে রাখুন:
৪র্থ তলা বা তার উপরে: দৌড়ানো মানেই মৃত্যুর ঝুঁকি। আশ্রয় নিন (Drop – Cover – Hold On)।
১ম–২য় তলায়: প্রথম ২০ সেকেন্ডই আপনার জীবন। দ্রুত এবং নিরাপদে বের হন।
#ভূমিকম্প
(ভূমিকম্প বিজ্ঞান)
(দুর্যোগ প্রস্তুতি)
(ভূমিকম্প সুরক্ষা)
(নিরাপদ থাকার মূল মন্ত্র)
(যদি উপকূলীয় এলাকায় ঝুঁকি থাকে)
(ত্রাণ ও সহায়তা)
(ভূমিকম্প সচেতনতা)
(ভূমিকম্প মহড়া)