26/06/2025
হাঁটু ব্যথা রোগে কর্যকরি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সমূহ
হাঁটু ব্যথা কেন হয় ?
আগে জানতে হবে হাঁটু কি ?
হাঁটু হল আমাদের শরীরের সবথেকে বড় জয়েন্ট গুলির একটি। এই জয়েন্ট শুধু আমাদের শরীরের ওজন বহন করে তাই নয় আমাদের স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে ও সোজা হয়ে দাঁড়াতে, দৌড়াতে ও বসতেও সাহায্য করে। খেলাধুলা বা দৌড়াদৌড়ি করার সময় আমাদের হাঁটু অনেক ধকল সহ্য করে।
★আমাদের হাঁটু কি ভাবে গঠন ?
হাঁটুর জয়েন্ট তৈরি হয় মূলত তিনটি হাড় দিয়ে, FEMUR বা উরুর হাড়, PATELA বা মালাই চাকি ও TIBIA বা জঙ্ঘাস্থি।
অনেক টেবিল বা চেয়ার এর নিচে যেমন শক্ত রবার কিম্বা প্লাস্টিক এর আবরন থাকে, তেমনি এই সব হাড়ের শেষপ্রান্ত কার্টিলেজ বা তরুনাস্থি দিয়ে ঢাকা থাকে, যাতে হাঁটুর জয়েন্ট-এ ঘর্ষণ বা আঘাত কম লাগে এবং ঘর্ষণ জনিত ক্ষয় কম হয়।
তরুণাস্থি ( Cartilage) এক ধরনের যোজক কলা। এটি অস্থির মতো শক্ত নয়। তরুণাস্থিতে রক্তনালী থাকে না। তাই তরুণাস্থির বৃদ্ধি ও মেরামত ধীর গতিতে হয়। তরুণাস্থিতে স্নায়ুকোষও নেই। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ব্যাথা অনুভূত হয় না।
সমগ্র জয়েন্ট -এর ভিতরটি সায়নোভিয়াল মেমব্রেন বা ঝিল্লি দিয়ে ঢাকা থাকে। এই সায়নোভিয়াল মেমব্রেন সায়নোভিয়াল ফ্লুইড তৈরি করে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
মোটরগাড়ির মোবিল অয়েল যেমন ঘর্ষণ জনিত ক্ষয় রোধ করে, ঠিক তেমনি সায়নোভিয়াল ফ্লুইড হাঁটুর ঘর্ষণ জনিত ক্ষয় রোধ করে।
সমগ্র হাঁটুর জয়েন্টটি কয়েকটি লিগামেন্ট ও ক্যাপসুল দিয়ে জোড়া থাকে। তার উপর থাকে মাংসপেশি যা হাঁটুর জয়েন্টটির বিভিন্ন মুভমেন্ট-এ সাহায্য করে।
হাঁটুর জয়েন্ট এর চারপাশে থাকে সূক্ষ্ম নার্ভের জালিকা, যা হাঁটু তে তৈরি হওয়া ব্যথার অনুভূতি ব্রেইন-এ পাঠিয়ে দেয়, এবং আমরা হাঁটু ব্যাথা অনুভব করি।
হাঁটু জয়েন্টে পাঁচটি প্রাথমিক bursae আছে।
১)patellar bursa
২)Infrapatellar bursa
৩)Pes anserine bursa
৪)semimembranosus
bursa
৫)Suprapatellar bursa
সহ হাঁটুর জয়েন্টে আরো 12 টি বার্সা পাওয়া যায়।
একটি Bursae হল একটি তরল-ভরা থলি যা নিশ্চিত করে যে শরীরের অঙ্গগুলির মধ্যে কম ঘর্ষণ ঘটাতে।
Bursaeর প্রদাহ ( Inflammation) কে bursitis বলে।
হাঁটুর ব্যথার কারনঃ
বিভিন্ন কারনে হাঁটুর ব্যথা হতে পারে।
১),৪০ বছর বয়সের নীচে হাঁটু ব্যথা হলে, সাধারনত হয় চোট-আঘাত থেকে যেমন লিগামেন্ট বা কার্টিলেজ ছিঁড়ে যাওয়া থেকে।
২),প্রদাহ থেকে যেমন রিউমাটএড আরথ্রাইটিস বা স্পনডাইলো আরথ্রাইটিস থেকে।
৩), ৪০ বছর বয়সের বেশি মানুষের হাঁটু ব্যথা হলে সাধারনত হয় অষ্টিও আর্থরাইটিসের থেকে।
হাঁটু ব্যথার সবচেয়ে বেশি এই অষ্টিও আর্থরাইটিসের কারনে হয়।
হাঁটু ব্যথার অন্যান্য কারণগুলি খুব বেশি দেখা যায় না,
আমরা মূলত অষ্টিও আর্থরাইটিস নিয়ে আলোচনা করব।
★অষ্টিও আরথ্রাইটিস কি?
এটি একটি ক্ষয়জনিত রোগ।
ধীরে ধীরে হাঁটুর কার্টিলেজের ক্ষয় হতে থাকে, হাড়ের ক্ষয় প্রাথমিকভাবে হয় না।
কার্টিলেজের ক্ষয় হতে থাকে বলে এটি অমসৃণ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে কার্টিলেজের উচ্চতা কমে যায় এবং হাড় গুলোর মাঝের ফাঁক কমে যায়।
কার্টিলেজের ক্ষয়এর ফলে এর ঠিক উপরেই থাকা সায়নোভিয়াল ফ্লুইড উৎপন্নকারী গ্রন্থিগুলিরও ক্ষয় হয় এবং সায়নোভিয়াল ফ্লুইড কম তৈরি হয়।
সায়নোভিয়াল ফ্লুইড কম তৈরি হওয়ার ফলে ঘর্ষণজনিত ক্ষয় আরও বেশি করে হতে থাকে।
এর ফলে হাঁটুর হাড়গুলোর একে অপরের সঙ্গে ঘর্ষণ হয়, এবং ব্যথার উৎপন্ন হয়।
অষ্টিও আরথ্রাইটিস এর পরিবর্তন গুলি চক্রাকারে চলতে থাকে এবং ধীরে ধীরে রোগটি বাড়তেই থাকে।
★হাঁটুর অষ্টিও আরথ্রাইটিস কারণ কী ?
এখানে একটু অন্য ভাবে আলোচনা করা যেতে পারে,
★★★কার্টিলেজর ক্ষয় বা অষ্টিও আর্থরাইটিসের মুল কারণ ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স।★★★
ইনসুলিন রেজিস্ট্যাস কেন হয় এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করতে হবে, এই বিষয়ে অন্য কোন প্রতিবেদনে আলোচনা করবো।
কিন্তু ইনসুলিন রেজিস্ট্যাস হলে রক্তে অতিরিক্ত সুগার ফ্যাটে পরিনত হয়, এতে শরীরের ওজন বাড়ে এবং হাড়ের ক্ষয়। এই করনে হাটুর ( Cartilage ) তরুণাস্থি ধ্বংস হয়।
★HOMA-IR টেস্ট করলে বোঝা যাবে ইনসুলিন রেজিস্ট্যাস আছে কি না চিকিৎসককে সেই দিকে নজর দিতে হবে।
ওজন বেশী হলে হাঁটুর ওপর ধকল বেশী হয়।
হাঁটুর অষ্টিও আরথ্রাইটিস এর প্রধান লক্ষণ হল হাঁটুর ব্যথা।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় লক্ষ্মণ উপর নির্ভর করে ঔষধ নির্বাচন করতে হয়।
★তাই কিছু লক্ষ্মণ উল্লেখ করলাম
১). সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা বা পরিশ্রমের পর হাঁটুর ব্যথা বেড়ে যাওয়া।
২). সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বা অনেকক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর হাঁটু আড়ষ্ট হয়ে যাওয়া।
৩). চলাফেরা করার সময় হাঁটুর গাঁটে শব্দ হওয়া।
৪).হাঁটু ফুলে যাওয়া।
৫) উরুর মাংসপেশীর ক্ষয় হয়ে যাওয়া।
৬). হাঁটু ভাঁজ করার সময় ব্যথা হয়।
৭). ধীরে ধীরে সামান্য নড়াচড়াতেও অসহ্য ব্যথা ও অস্বস্তি হয়। এবং হাঁটু নড়ানো যায় না।
৮). হাঁটুর গাঁট আড়ষ্ট হয়ে যায়।
৯).বসে থাকা অবস্থাতেও ব্যথার অনুভুতি।
১০). মহিলাদের মেনোপজ পর অস্টিও আর্থ্রাইটিস দেখা দিতে পারে তবে অনেকে ক্ষেত্রে অস্টিওপরোসিস দেখা যেতে পারে।
অস্টিওপোরোসিস প্রায়ই অস্টিওআর্থারাইটিসের সাথে বিভ্রান্ত হয় কারণ প্রায়শই মানুষের উভয়ই থাকে। যদিও অস্টিওআর্থারাইটিস একটি জটিল রোগ যা জয়েন্টে ব্যথা সৃষ্টি করে এবং জয়েন্টের গতিশীলতা এবং কার্যকারিতা হ্রাস করে। অস্টিওপরোসিস
রোগে হাড় ভঙ্গুর হয়ে যায়। হাড় ভেঙে যেতে পারে এবং এটি প্রায়শই একটি নীরব রোগ হিসাবে উল্লেখ করা হয় কারণ বেশিরভাগ রোগীই জানেন না যে তাদের হাড় দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
এছাড়াও আরো কিছু লক্ষ্মণ দেখা যায়।
দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যথা চলতে থাকলে তা স্বাভাবিক জীবনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
শেষ পরিণতি হাঁটু পরিবর্তন ( KNEE REPLACMENT)।
এ থেকে রক্ষা করতে পারে সঠিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা।
শুধু চিকিৎসা করলে হবে না,
সাথে প্রয়োজন জীবন শৈলী পরিবর্তন।
সঠিক খাদ্যাভাস।
এবং নির্বাচিত ব্যায়াম।
এই চারটি সমন্বয়ে হাঁটু পরিবর্তনের ( KNEE REPLACEMENT)
মতো পরিস্থিতি রুগীও সম্পুর্ন সুস্থ হয়ে যায়।
★চিকিৎসার আলোচনা শুরু করার আগে কয়েকটি খাবার সমন্ধে আলোচনা করছি। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে এই খাবার SUPER FOOD হিসেবে গৃহীত।
CARTILAGE যে প্রোটিন তৈরি, তার নাম "COLLAGEN,"
এই Collagen নিন্মলিখিত খাবারগুলো থেকে পাওয়া যায়
১) LEGUMES ( শিম গোত্রের অন্তর্গত খাদ্যশস্য )
অথাৎ ডাল জতীয় খাবার, প্রধানত: বিউলি,মুগ,মসুর,ছোলা,মটর,অড়হর,মাষকলাই, খেসারি,রাজমা,সোয়াবিন প্রভৃতি শুঁটিজাতীয় মৌসুমি ফসলের শুকনো বীজ। এই গুলো সব প্রদাহ হীন হয়,সেই কারণে জ্বালা কম হয়,জ্বালা কমের জন্য Cartilage পর্দা ক্ষয় কম হয়, অত্যধিক পরিমাণে LEUCINE AMINO ACID আছে, যা Cartilage পুনরায় বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে।
২).CITRUSES FRUITS
( ভিটামিন সি যুক্ত টক জাতীয় ফল)
যেমন মৌসম্বী,আমলকী, পেয়ারা কুল ( বড়ই) লেবু বা যে কোন মৌসুমি ফল। VITAMIN C
কার্টিলেজ পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।
৩), BROWN RICE ( ঢেঁকি ছাঁটা চাল )
পুষ্টিগুণের ক্ষেত্রে বাদামী চাল সাদা ভাতের চেয়ে স্বাস্থ্যকর। এই সুপারফুড কম ক্যালরি, চর্বি এবং গ্লুটেন-মুক্ত। অতএব, সমস্ত খাদ্য সচেতন মানুষ সাদা ভাতের চেয়ে এই ভাত পছন্দ করে। এই ভাতে কিছু প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে , যেমন – ফাইবার, খনিজ পদার্থ-দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং সেলেনিয়াম, ভিটামিন বি এবং ভিটামিন কে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-ফ্লেভোনয়েড, প্রোটিন
অত্যাবশ্যক ফ্যাটি অ্যাসিড।
এই চাল শরীরে HYALURONIC ACID ক্ষরন বৃদ্ধি করে, এটি হাঁটু দুইটি হাড়ের মাঝে গ্রিসের মতো করে যা হাঁটুর Movement মসৃণ করে।
৪), POMEGRANATE ( ডালিম)
ডালিমে Butyric acid, Ursolic acid এবং কিছু alkaline দ্রব্য আছে। যা Antioxidants ও Anti Inflammatory , এটা Cartilage ক্ষয় রোধ করতে সহয়তা করে।
৫), Nuts ( বাদাম) -
যেমন, চিনা বাদাম, কাজু বাদাম, কাঠ বাদাম, পেস্তা বাদাম বিশেষ করে আখরোট ( Walnut) ও ব্রাজিল বাদাম , ( Bertholletia excelsa ),
আছে প্রচুর প্রোটিন ও ডায়েটারি ভিটামিন এবং ভিটামিন B Complex ( থায়ামিন) সহ আরোও কিছু মিনারেলস যেমন ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন জিংক ও ম্যাঙ্গানিজ, কপার, সেলেনিয়াম বিশেষ করে আলফা-লিনোলিক অ্যাসিড (ALA) . ( যা প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছ) সহ ওমেগা- ৩ এবং ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড যা হাড়ের ক্ষয় রোধ করে এবং বিশেষ করে Collagen protein তৈরি হতে সহায়তা করে।
৬), Sesame Seeds(সাদা তিল)
একাধিক প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। তাই প্রতিদিনের খাবারে এই উপকরণটি ব্যবহার করলে শরীরের ক্যানসার প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণেও অত্যন্ত কার্যকরী এই তিল। সাদা তিলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস যা হাড় মজবুত করে এবং অস্টিওপোরোসিসের সম্ভাবনা কমা হয়।
৭), Lime ( পাথুরে চুন)
চুনে আছে ক্যালসিয়াম কার্বনেট, যা সরাসরি হাড়ের উপরে কাজ করে। হাড়ের যেকোনো রোগে, প্রতিদিন গম পরিমাণ চুন খেলে আশাতীত উপকার পাওয়া যায়। ( বিশেষ করে মহিলাদের মেনোপজ হওয়া পর হাড়- ক্ষয় জনিত রোগে উপকারী।)
৮), GREEN TEA
গ্রিন টির মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, বি, বি৫, ডি, ই, সি, ই, এইচ সেলেনিয়াম, ক্রোমিয়াম, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ ও সামান্য ক্যাফেইন। এছাড়াও Catechin ও Poly phenol নামে বিশেষ দুই ধরনের উপাদান থাকে, যা toxin ( বর্জ্য পদার্থ) বের করতে সহায়তা করে। শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করা, সব রোগের ক্ষেত্রে অপরিহার্য।
★★★ হাঁটু ব্যথায় কার্যকরী হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সমূ
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা উপসর্গ ভিত্তিক, তাই রোগের ইতিহাস ও লক্ষ্মণ মিলিয়ে ঔষধ নির্বাচন করতে হয়।
তাই নিন্মলিখিত ঔষধ গুলোর নাম ও লক্ষ্মণ দেওয়া হলো।
★
১), ARNICA MONT 200
হাঁটু ব্যথা যদি আঘাতের কারণে হয়, তা'হলে এই কর্যকরি। বা হটাৎ করে হাঁটুতে ব্যথা,রুগী হাঁটু স্পর্শ করতে দেয় না,সে ক্ষেত্রে এই ঔষধ ভালো কাজ করে।
২), RUTA G 200
হাঁটুতে পুরনো চোট। হাঁটু গেড়ে কিছুক্ষণ বসলে ব্যথা।ব্যথা হাড়ের ভিতরে হচ্ছে,
ব্যথার জন্য পা খুরিয়ে খুরিয়ে হাটে। কিন্তু নড়াচড়া করলে উপশম হয়।
সে ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে।
৩), DULCAMARA 200
এই ঔষধ আবহাওয়া পরিবর্তন সময় বা যারা একবার কিছুক্ষণ এসি ঘরে আবার বাইরের আবহাওয়া আসেন আবার কিছুক্ষণ পর এসি ঘরে যেতে হয়, এই রকম পরিবেশে যাদের কাজ করতে হয়, তাদের' হাঁটু ব্যথা হলে, সে ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে।
৪), RHUS TOX 200
" হাঁটু ব্যথা" উঠতে বসতে ব্যথা, আবার চলাফেরা করলে তখনকার মতো ব্যথা কমে যায়। সে ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে।
৫), BRYONIA ALB. 200
" হাটু ব্যথা" একটু নাড়াচাড়া করলে ব্যথা, স্থির হয়ে বসে বা শুয়ে থাকলে ব্যথা নেই, অনেক সময় হাঁটু ফোলে, শক্ত হয়,লালবর্ণ হয় বা এই ধরনের উপসর্গ নিয়ে একবার ডান হাঁটু, একবার বাম হাটু বা অন্য স্থান পরিবর্তন করে। সে ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে।
৬), CAUSTICUM 200
যারা হাঁটু ব্যথায় বেশ কিছু দিন কষ্ট পারছেন, হাঁটু শক্ত হয়ে যাচ্ছে, হাঁটুতে ছিঁড়ে ফেলার মতো বেদনা, অনেক সময় চললে হাঁটুতে কটমট আওয়াজ করে, এমনকি পায়ের ডিমে খিল ধরে। হাঁটুর নীচের অংশ সরু বা চিকন হয়ে যাচ্ছে, দিনের তুলনায় রাতে ব্যথা বৃদ্ধি হয়।
সে ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে।
৭), GUAIACUM 30, 200
হাঁটু ফোল, হাঁটুর প্রদাহ ( Inflammation) সাথে ব্যথা
সামান্যমাত্র চাপে ব্যথা বাড়ে।গরম সেঁক সহ্য হয় না, তরুণ রোগের ক্ষেত্রে ৩০ শক্তি ব্যবহার করা ভালো।
★পুরনো আঘাতের ইতিহাস থাকে বা Causticum ঔষধটি ব্যবহার করে উপকার না পেলে এই ঔষধটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
৮), APIS MEL 30, 200
এটি হাঁটু ব্যথায় ভালো কাজ করে।
হাঁটুর উপরে খুব ফোলে, চাপ দিলে টোপ পড়ে এবং খুব ব্যথা হয়, সব সময়েই মৌমাছির হুলফোটানর ব্যথা, পা ছড়াইতে কষ্ট। ঠান্ডা সেঁক দিলে উপশম।
★উপরের লক্ষ্মণ গুলোর প্রাথমিক অবস্থায় Aconite Nap 30 ভালো কাজ করে কিন্তু তাতে কাজ না হলে Apis mel 30.ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে ঔষধ দিতে হবে।
৯), COLCHICUM A 3X, 30
যে সকল মহিলারা হৃষ্টপুষ্ট ও ক্ষমতাশালী এবং মেনোপজ পর হাঁটু ব্যথা হয় সাথে অস্টিওপরোসিস দেখা যায়।
এই ধরনের রোগী সামান্য গোলমাল, তীব্র গন্ধ, কু - কথা, কথার অসম্মতি এবং অন্যের সংস্রব আদৌ সহ্য করতে পারে না।
এই সকল রোগীর ঔষধ।
আক্রান্ত হাঁটুতে Externally
ব্যবহার ( মাদার টিনচার) করলে সাথে সাথে উপশম হয়।
১০), ANGUSTURA VERA 200
এই ঔষধ হাঁটু ব্যথার চরম অবস্থায় ব্যবহার হয়,
হাঁটুর Cartilage ধ্বংস হয়ে Humerus, tibia, femur ক্ষয় হচ্ছে।
দুই হাঁটুতে গাঁটে টাটানি বেদনা,চালিবার সময় প্রচন্ড বেদনা, গাঁটের ভিতর একপ্রকার মড়্মড়্ শব্দ হয়, গাঁট ও পেশী শক্ত, আড়ষ্ট হয়ে থাকে।
১১, KALI IOD 200
এই ঔষধটি পুরাতন হাঁটু ব্যথায় ভালো কাজ করে। তবে রোগীর অল্পতেই ঠান্ডা লাগে এবং নাক দিয়ে জল দিয়ে তরল সর্দি নি:সরন হয়।
এই রোগীর রাতে বিছানায় শুইলেই বৃদ্ধি হয়।
যে সমস্ত রোগী ব্যথায় দ্রুত আরাম জন্য স্টেরয়েড ব্যবহার করেন, তাদের এই ঔষধ বিশেষ কার্যকরী।
১২), SARRACENIA P 30
হঠাৎ করে হাঁটুর হাড়ে ও ঊরুসন্ধিতে ( Knee & hip joint) আঘাত লাগার মতো বেদনা।
13), ASAFETIDA 200
এই ঔষধটি হাঁটু ব্যথায় ভালো কাজ করে, রোগীর টিবিয়া ( Tibia) অস্থির ক্ষয়ের একমাত্র হোমিওপ্যাথিক ঔষধ।
১৪), STRONTIA CARB 6 X
এই ঔষধটি হাঁটু ব্যথায় ভালো কাজ করে, তবে FEMUR অস্থির ক্ষয়ে আরও ভালো কাজ করে।
১৫), OSTEO ARTHRIS NOSODE 1 M
অস্টিওআর্থারাইটিসের খুব ঔষধ। যখন অন্য ঔষধ তেমন কাজ না করলে এই ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন।
এ ছাড়াও আরো অনেক হোমিওপ্যাথিক ঔষধ আছে, যা লক্ষ্মণ মিলিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
★
১), ARNICA MONT - Q
২), CAPSICUM - Q
৩), CAMPHOR - Q
৪), GAULTHERIA - Q
উপরে চারটি ঔষধ এক সাথে মিলিয়ে বাহ্যিক ( External) প্রয়োগ সাময়িক উপকার পাওয়া যায়। তবে ঔষধ টি ব্যবহার করা পর শুঁকনো গরম সেঁক দিতে হবে।
★ঘরোয়া চিকিৎসা
হাঁটু ব্যথায় বহু বছর আগে থেকে ভারতীয় উপ মহাদেশে, এই ধরনের চিকিৎসা হয়ে আসছে।
১), শিউলী ( সেফালিকা / হারসিঙ্গার/ পারিজাত) ফুলের ৫ -৬ টি পাতা, এক গ্লাস জলে ( পানি) হাল্কা আঁচে ফুটিয়ে অর্ধেক পরিমাণ করে নিয়ে এবং এই সেদ্ধ কারা জলটি ছাঁকনিতে ছেঁকে দিনে বার খেতে হবে।
★★ রাতে সেদ্ধ করে সকালে বা সকালে সেদ্ধ করে রাতে খেতে হবে।
★★★★★
বাহ্যিক প্রয়োগ
১), শিউলী ফুলের ৭-৮ পাতা
২), লাল লঙ্কা ( মরিচ) অর্ধেক বা ১/৪ অংশ , এক সাথে বেঁটে
অ্যালোভেরা জেলের মিশিয়ে বা পেস্ট বানিয়ে হাঁটুতে লাগাতে হবে। হাঁটুতে clockwise মালিশ করতে হবে, একবার ডান দিকে, আরেক বার বাঁ দিক। এই ভাবে দশ মিনিট করে মালিশ করতে হবে।
হাঁটুর উপরে প্রলেপ দিয়ে দুই -তিন ঘন্টা বিশ্রাম নিতে হবে বা রাতে শোবার সময় ব্যবহার করা যেতে পারে ( অবশ্যই সুতির কাপড় বেঁধে নিতে হবে।) রোদে বা শুকনো সেঁক দিতে পারলে ভালো হয়।
★
ব্যায়াম
★
১), প্রথমে সোজা হয়ে বসুন। পা দুটো অর্ধেক ভাঁজ করুন। এবার একটি পায়ের গোড়ালি দিয়ে মেঝেতে চাপ দিন। এইভাবে ১০ সেকেন্ড থাকুন। এরপর অপর পায়ে করুন। এটি ১০ বার করুন।
২), প্রথমে সোজা হয়ে বসুন। তারপর একটি বালিশ হাঁটুর নিচে রাখুন। তাহলে দেখা যাবে হাঁটুটি অর্ধেক ভাঁজ করা অবস্থায় আছে। এরপর হাঁটু দিয়ে বালিশের ওপর চাপ দিন। যে হাঁটু দিয়ে বালিশের ওপর চাপ দেবেন ওই পায়ের গোড়ালি সামান্য ওপরে উঠবে। এই ভাবে ১০ সেকেন্ড থাকুন ও এটি ১০ বার করুন।
৩),প্রথমে একটি চেয়ারের ওপর বসুন। এরপর ধীরে ধীরে একটি পা সোজা করে ওপরে তুলতে থাকুন। পা টি সোজা অবস্থায় আসলে ১০ সেকেন্ড ধরে থাকুন। এরপর পা নিচে নামিয়ে নিন ও অপর পায়ে করুন। এই ভাবে ১০ বার করুন।
★*বিশেষ কথা জেনে রাখা ভালো। ★* ঃ-
শরীর কে রোগ মুক্ত করতে প্রতিদিন আহারে ৫০% খাবার ফল এবং স্যালাট খান অথাৎ কাঁচা পাকা ফল কাঁচা সব্জি খান এতে শরীরে পটাসিয়াম ও সোডিয়াম পরিমাণের সমতা বজায় রাখে। পটাসিয়াম ও সোডিয়াম ১ঃ১ থাকলে কোন রোগ আক্রান্তের হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে হলেও autophagy মাধ্যমে শরীর তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়
…………………………………………………
Dr. Sumon K Biswaas
BHMS; National Institute of Homeopathy, (Kolkata)
M.D; (Homeopathy) Gold Medalist (Govt. Homeopathic Medical College Hyderabad)
MPH (Epidemiology) ; Tata Institute Mumbai.
Ex-House Physician Saltlake Homeopathy Hospital Kolkata (NIH)
ICCR-AYUSH Scholar; Govt. of India.
Whatsapp : +919163111840 / +8801717006259
#মূত্রেররং #স্বাস্থ্যজ্ঞান #ডাক্তারেরপরামর্শ #কিডনিরোগ #জন্ডিস #স্বাস্থ্যসচেতনতা #বাংলাহেল্থTips #স্বাস্থ্যপোস্ট #রোগেরলক্ষণ