Dr Rameez Reza

Dr Rameez Reza General Surgeon currently Attached at Murshidabad Medical College and Hospital

 #ছোট ছোট মানুষের ছোট ছোট গল্প।পুজোর জিন্সছোট্ট একটা মেয়ে, তেরো বছর বয়স। জঙ্গিপুরের কাছেই অখ্যাত একটা গ্রামে বাস।বেচার...
13/06/2023

#ছোট ছোট মানুষের ছোট ছোট গল্প।

পুজোর জিন্স

ছোট্ট একটা মেয়ে, তেরো বছর বয়স। জঙ্গিপুরের কাছেই অখ্যাত একটা গ্রামে বাস।
বেচারীর পেট ক্রমশ ফুলে যাচ্ছিল, দূর থেকে দেখে মনে হতো, যেন গর্ভবতী হয়ে পড়েছে।
এ ছবি -সে ছবি ,এ ডাক্তার সে ডাক্তার.. অনেক জটিল জটিল কথাবার্তা শুরু হলো চারিদিকে। গরিব পরিবারে আর্থিক টানাটানি।
তারই মাঝে টাকা পয়সা জমিয়ে
সিটি স্ক্যান হলো শহরের নামি এক প্রতিষ্ঠানে ,বেরোলো জটিল এক টিউমারের কথা।

এবার উপায় ? অনেকেই রেফার করে দিল উচ্চতর জায়গায়।

একজন সহৃদয় ডাক্তারবাবু তাকে নিয়ে এলেন মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজে।
প্রায় ১০ দিন ভর্তি থাকার পর গত শুক্রবার ছোট্ট মেয়ের পেটে অনেক বড় একটা ইন্সেশন ( কাটা) পড়ল ।
বিস্তর কসরৎ এর পর বেরিয়ে এলো প্রায় কেজি দশকের একটা টিউমার ।একটা গামলা ভর্তি হয়ে গেল প্রায়।
ফুলে ওঠা পেটটা চুপসে গেল এক মুহূর্তে।

গরিব জেলার ভূমিপুত্র দুই ডাক্তারের মুখে তখন ছোট্ট হাসি।
অপারেশনের পর চোখ মেললো মেয়েটা।
"ছোট " জেলার "ছোট " ডাক্তার প্রশ্ন করল , ভালো আছিস? তোর অপারেশন হয়ে গেছে পেটটা দেখ এখন অনেক পাতলা..

বাচ্চা মেয়েটা দুর্বল ভাবে স্যালাইন চলা হাতটা তুলে পেটে হাত দিল তারপরে ডাক্তারের চোখে দিকে তাকিয়ে বলল , স্যার এবার তবে আমি পুজোয় জিন্স পরবো....

পুজোর শপিং করে ওঠার সময় না পাওয়া ডাক্তারের মনে তখন জানান দিল , পুজো আসছে। মা আসছেন। আর মা ছেলের মনের মধ্যে শরৎকালের পেঁজা তুলোর মেঘের মত একরাশ খুশি দিয়ে জন্য পুজোর গিফট পাঠিয়ে দিয়েছেন।

-------------------

মাঝরাতের কিছু প্রলাপ..আমরা কখনোই শিখি না ।গতানুগতিক প্রবাহ একই রকম চলতে থাকে...এখন ভোর সাড়ে চারটে, মেডিকেল কলেজ হাসপাতা...
26/05/2021

মাঝরাতের কিছু প্রলাপ..

আমরা কখনোই শিখি না ।
গতানুগতিক প্রবাহ একই রকম চলতে থাকে...

এখন ভোর সাড়ে চারটে, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল একটু একটু ঝিমুচ্ছে।
আমি একটু আগে করোনা পজিটিভ পেশেন্টের বুকে জমে থাকা জল বের করার ড্রেন বসিয়ে এসে ডক্টরস রুমে ফিরে দেখি, ফোনের নোটিফিকেশন লাইট জ্বলছে।

গতকাল সোহেল দা মারা গেছে। আপনারা হয়তো চিনবেন না, না চেনারই কথা। কোন রাজনৈতিক মুখ না, কোন বৈশাখী ঝড়ে মিশে থাকা সুশোভন চরিত্র নয়, একজন স্বাস্থ্যকর্মী।
পিজি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ছিল।

হোয়াটসঅ্যাপে অনেক মেসেজের মধ্যে একটা ছোট্ট মেসেজ ছিল, "সোহেল দার চিকিৎসার বিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাসপাতালে, প্রায় 10 লাখ টাকা, আশরাফুল দা এর ব্যাংক একাউন্ট পাঠালাম পারলে কিছু সাহায্য করিস"... সেটাই জানান দিচ্ছিল লাইটটা।

খুব হাসি পেল। সোহেল দা ডাক্তার হয়েছিল, অনেক কিছু হতে পারত, কিন্তু মধ্যবিত্ত বাঙালি মানসিকতা আর নিরাপদ ভবিষ্যতের আশা হয়ত ওকে উৎসাহিত করেছিল এই পেশা বেছে নিতে ।
আজকে তার ভাইকে সাহায্য চাইতে হচ্ছে আর্থিক বোঝা চুকিয়ে মৃতদেহটা বাড়িতে আনার জন্য।

মনে পড়ল, আজকে আমার করোনা হওয়ার এক মাস। কদিন আগেই ফেরপেনেম টা শেষ হয়েছে। এখনো বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে পিঠের পিছনে দিকটা ব্যাথা করে।

প্রিয়জনকে সময় দিতে পারি না বলে প্রায়ই ঝগড়া হয়, কল বুকের ফোন আসলে খুব কাছের বন্ধুর ফোন ও হোল্ড করে দিতে হয়।
ফেসবুকের গ্রুপের মেসেজগুলো দু আড়াইশো মেসেজের ভিড়ে জমা হয়ে থাকে..

তারপর ও যখন জ্বর সর্দি-কাশি রোগীকে বলি আপনি পারলে একবার পরীক্ষা করান, উত্তর আসে "ওসব রোগ আমাদের হয় না"...
জ্বরের উপসর্গ টাইফয়েডের নাম নিয়ে দিব্যি সুন্দর কোয়াক ডাক্তারের চাতাল ঘরের মেঝেতে স্যালাইন টানতে থাকে, তারপর যখন শ্বাস প্রশ্বাসের কষ্ট কোয়াক ডাক্তারবাবুর "ইঞ্জেকশন" এ কমে না, তখন পোস্ট কোভিদ স্ট্রেস নিয়ে পিপিই পরে ঘামতে ঘামতে বুকে নল বসিয়ে জমা জল বার করি আমরা...

তারপরে হয়তো কোন এক বন্ধুর ফোনে আর একটা মেসেজ হয়ে জমা হবে... কোন একটা বিলের জন্য সাহায্য হয়ে...

এইসব ভুলভাল ভাবনাগুলো কেটে যায় সিস্টারের ডাকে, "স্যার, আর একটা পজেটিভ পেশেন্ট এসেছে, পিপিই রেখে দিয়েছি..."
এনআরবিএম এ হাপাতে থাকা ঘোলাটে চোখের বৃদ্ধের দিকে ঝাপসা ফেস শিল্ডের ঝাপসা বাষ্প জামা দৃষ্টি নিয়ে এগিয়ে যাই ।

The show must go on.

কালকে খুব বৃষ্টি হয়েছিল রাতে। অনেকদিন বৃষ্টি দেখা হয়নি। অনেকদিন পাহাড়ে যাওয়া হয় নি।

ওটির ঠান্ডা ঘর থেকে বাইরেটা বোঝা যায় না।
আলো কি এখনো ফোটেনি?

________________________

12/05/2021

অক্সিজেন থেরাপি

আজ আমরা কিছু সাধারণ আলোচনা করবো অক্সিজেন থেরাপি নিয়ে। এখন বর্তমান পরিস্থিতি তে অনেকেই কোভিড এ আক্রান্ত হয়ে বাড়ীতে অক্সিজেন নিতে বাধ্য হচ্ছেন,অনেকেই হাসপাতালে হাই ফ্লো অক্সিজেন এ আছেন ,অনেক কেই ভেন্টিলেটর এ দিতে হচ্ছে অনেক কেই বাই প্যাপ নামে একটি মেশিনের মাধ্যমে ভেন্টিলেট করতে হচ্ছে। অনেকেই হাসপাতালে বা নার্সিং হোম এ বেড পাচ্ছেন না,তাদের ক্ষেত্রে বাড়িতেই অক্সিজেন নিয়ে কম স্যাচুরেসান নিয়েও বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। আজকের লেখার মূল উদেশ্য হলো যারা বাড়িতে অক্সিজেন এ আছেন তাদের ক্ষেত্রে কিভাবে সর্বাপেক্ষা বেশি ফ্লো তে সঠিক মাত্রার অক্সিজেন দেয়া যায় সেটি সুনিশ্চিত করা।

অক্সিজেন থেরাপি মানে যেখানে অক্সিজেন কে একটি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আমরা অনেক কাল ধরেই ফুসফুস এর না না অসুখ এ অক্সিজেন থেরাপি বাড়িতে বা হাসপাতালে দিয়ে থাকি।

কোভিড 19 এ যারা ভুগছেন ,যারা প্রথম থেকেই অক্সিজেন স্যাচুরেসান কম নিয়ে আছেন বিশেষ করে বয়স্ক লোকদের ক্ষেত্রে 95 এর কম এবং অন্যান্য দের ক্ষেত্রে 90 র কম হলেই আমাদের অক্সিজেন দেয়ার কথা ভাবতে হবে। যাদের আগে থেকেই ফুসফুসের বা হার্ট এর সমস্যা যেমন হার্ট ফেলিওর,সি ও পি ডি, এজমা,আই পি এফ ইত্যাদি আছে তাদের ক্ষেত্রে এটি আরো বেশি করে দরকার হবে।
কিভাবে অক্সিজেন থেরাপি দেব?
1.যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি আছেন ,তাদের ক্ষেত্রে একটি সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই থাকে যেখান থেকে পাইপলাইন এর মাধ্যমে অক্সিজেন ডাইরেক্ট রোগীর কাছে চলে যায় বেড এ ,ও সেখান থেকে রোগী অক্সিজেন পেতে পারে.
2. এছাড়া যারা বাড়িতে অক্সিজেন দিচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে সিলিন্ডার এর মাধ্যমে,এই সিলিন্ডার এর সাইজ অনুসারে(B,C,E,D type). এর মধ্যে বিভিন্ন মাত্রার অক্সিজেন থাকতে পারে। এই অক্সিজেন সিলিন্ডার এর মধ্যে কমপ্রেস করে রাখা হয় অর্থাৎ বেশি চাপে অনেক বেশি আয়তন এর অক্সিজেন অনেক কম আয়তন এর সিলিন্ডার এ রাখা যায়। একটি বড় সিলিন্ডার এ 1200 লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন ভরা যেতে পারে।
3.যারা বাড়িতে অক্সিজেন দিচ্ছেন তারা অবশ্যই যেখান থেকে অক্সিজেন নিচ্ছেন সেখান থেকে জেনে নেবেন অক্সিজেন কত লিটার ভরা আছে। সব সময় সিলিন্ডার এর মাপ অনুসারে অক্সিজেন থাকে না,তার বেশি বা কম হতে পারে।
4. অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে রোগী কে অক্সিজেন 2ভাবে দেয়া যেতে পারে। নাকের মাধ্যমে যেটি কে নাসাল প্রঙ্গ বা নাসাল ক্যানুলা বলা হয়। এতে 24-44% অক্সিজেন দেয়া যায়। সর্বাধিক 6লিটার প্রতি মিনিটে দিলে 44% অক্সিজেন প্রবেশ করে। এটি নিয়ে রোগী খেতে, কথা বলতে ,নেবুলাইজার নিতে পারে। নাকে অনেকক্ষণ নিলে নাক শুকনো হওয়া বা নাকে ঘা হতে পারে, সাবধানে রাখবেন।
5.অক্সিজেন মাস্ক
অক্সিজেন মাস্ক এর মাধ্যমেও রোগী অক্সিজেন নিতে পারে, এতে নাসাল ক্যানুলার থেকেও বেশি মাত্রার অক্সিজেন দেয়া যেতো পারে। এর বিভিন্ন প্রকার আছে, যেমন
Simple oxygen Mask
সব থেকে কমন। নেবুলাইজার নিতেও এরকম মাস্ক আমরা ব্যবহার করি। এতে রোগীর অক্সিজেন নিতে খুব ই সুবিধে হয়, এতে 6 থেকে 10 লিটার প্রতি মিনিটে এ 35 % থেকে 60% অক্সিজেন দেয়া যায়
Partial rebreather Mask
এই মাস্ক এর মাধ্যমে 80% পর্যন্ত অক্সিজেন দেয়া যায় কিন্তু ফ্লো অর্থাৎ অক্সিজেন এর গতিবেগ সবসময় 6 লিটার প্রতি মিনিটে হওয়া উচিত।
Non rebreathing Mask(NRBM/HIGH)
এই মাস্ক এর মাধ্যমে সবথেকে বেশি ঘনত্বের অক্সিজেন দেয়া যায়,এই মাস্ক এ একটি থলি থাকে ও একটি ভালভ থাকে যাতে কোনো অক্সিজেন ই নষ্ট হয়না,এবং 95% পর্যন্ত অক্সিজেন দেয়া যায় 6 থেকে 15 লিটার প্রতি মিনিটে।

মনে রাখবেন অক্সিজেন দেয়ার সময় সেটি যেন ড্রাই বা শুকনো না হয়, সবসময় humified অর্থাৎ জলীয় বাষ্প যুক্ত অক্সিজেন দেয়া উচিৎ। আপনার অক্সিজেন সিলিন্ডার এর বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে ভালো করে জেনে নেবেন এবং গতিবেগ বা ফ্লো রেট কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন সেটাও জেনে নেবেন। শেষ হয়ে যাবার আগেই অক্সিজেন রিফিল করে নেবেন।
6. বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকলে কিন্তু কাউকেই ধূমপান করতে দেয়া যাবে না। অক্সিজেন র সামনে ধূমপান করলে বা আগুন র সংস্পর্শে এলে বিস্ফোরণ এর সম্ভাবনা আছে।
7. অক্সিজেন কোনসেনট্রেটার(oxygen Concentrator)
এটি একটি বিশেষ মেশিন যা বিদ্যুৎ এ চলে, এবং বাতাস এর অক্সিজেন র ঘনত্ব বাড়িয়ে 24 থেকে 93 % পর্যন্ত করতে পারে, এবং নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে অক্সিজেন সাপ্লাই করতে পারে । অর্থাৎ বাড়িতে এটি থাকলে জাস্ট সুইচ টিপলেই পাবেন তাজা অক্সিজেন, যদিও এতে 5লিটার এর বেশি গতিবেগ তোলা খুব মুশকিল। কিন্তু একবার কিনলে আর সারাজীবন অক্সিজেন এর জন্য সিলিন্ডার এর উপর নির্ভর করতে হবেনা।

8. হাই ফ্লো নাসাল অক্সিজেন (HFNO)
কোভিড এর ক্ষেত্রে হাই ফ্লো অক্সিজেন অর্থাৎ উচ্চ গতিবেগ এ নাসাল অক্সিজেন দিতে হয়। এটি একটি বিশেষ মেশিন যার মাধ্যমে 30 থেকে 60 লিটার প্রতি মিনিটে অক্সিজেন দেয়া হয়। কোভিড রোগী রা যাদের অক্সিজেন কমে যাচ্ছে ও স্যাচুরেসান নেমে যাচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে এই বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে উচ্চ গতিবেগ এ অক্সিজেন দেয়া হয়। এই যন্ত্র টি কোভিড হাসপাতালে ও নার্সিং হোম গুলিতে আছে।
9.বাইপ্যাপ মেশিন
এটি একটি বিশেষ ধরনের ভেন্টিলেটর যাতে একটি মাস্ক এর মাধ্যমে উচ্চ চাপ এ বাতাস ফুসফুস এ প্রবেশ করানো হয়। বাইপ্যাপ এর মাধ্যমে নিঃস্বাস ও প্রশ্বাস এর 2টি প্রক্রিয়া তে 2টো আলাদা বায়ুচাপ এ বাতাস প্রবেশ করানো হয়। যারা কোভিড নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় স্যাচুরেসান কিছু লোকদের ঠিক থাকে কিন্তু ফুসফুস ক্লান্ত হয়ে যায়,তাদের ক্ষেত্রে এই মেশিন ব্যবহার করে ঠিক করা হয়।

10. ভেন্টিলেটর
সব থেকে ভয়াবহ শব্দ। এই কোভিড নিউমোনিয়ার সময় কোনো রোগী ভেন্টিলেসান এ আছে শুনলেই মানুষ শিউরে ওঠে,সাধারণ মানুষের কাছে ভেন্টিলেশন এ যাওয়া মানেই সব শেষ,কেউ কেউ ভাবে এগুলি নার্সিং হোম বা ডাক্তার এর বাজে বুদ্ধি, টাকা নেয়ার জন্য ইচ্ছে করে ভেন্টিলেটর এ দিয়ে দেয়, বিল বাড়ানোর জন্য, মৃত মানুষ কে জীবিত সাজিয়ে রেখে দেয় ইচ্ছে করে। বিশ্বাস করুন এগুলো সব ভুল ধারণা, যেমন কিডনি র ক্ষেত্রে ডায়ালিসিস, যেমন হার্ট এর ক্ষেত্রে পেসমেকার, তেমন ই ফুসফুস এর রোগী দের ক্ষেত্রে ভেন্টিলেশন একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ জীবনদায়ী মেশিন।
কোভিড নিউমোনিয়ায় যাদের অক্সিজেন হাই ফ্লো নাসাল অক্সিজেন দেয়ার পর ও উন্নতি হয় না, অক্সিজেন স্যাচুরেসান কমতে থাকে ও ফুসফুস ক্লান্ত হতে থাকে তখনই দরকার হয় ভেন্টিলেশন এর । এতে মেশিন কৃত্তিম ভাবে নিশ্বাস ও প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে ও রোগী কে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়। ফুসফুস অনেক আরাম পায় ও কিছুদিনের মধ্যে সুস্থ্য হয়ে যায়।

তাহলে সবাই কেন বলে যে ভেন্টিলেশন এ দেয়া মানেই শেষ?
এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। যে মানুষের ফুসফুস দুর্বল, যার শরীর এর শেষ সময় চলে এসেছে তাকে ভেন্টিলেশন দিলে তার ফিরে আসার সম্ভাবনা খুব কম,বিশেষ করে সে যদি বয়স্ক হয় ও তার অন্যান্য রোগ থাকে, কিন্তু যে কোনোদিন ভেন্টিলেশন পায়নি, যার আগে কোনো ফুসফুসের রোগ ছিল না তাকে ভেন্টিলেশন দিলে তার সেরে ওঠার সম্ভাবনা অনেকটাই।

তাই বাড়িতে অক্সিজেন দিলে খেয়াল রাখুন কিসে দিচ্ছেন, যদি অক্সিজেন না পারে তাহলে নাসাল ক্যানুলার বদলে অক্সিজেন মাস্ক দিন বা NRBM মাস্ক দিয়ে দেখুন স্যাচুরেসান বাড়ছে কিনা। ডাক্তার এর সাথে পরামর্শ করুন অক্সিজেন এর মাত্রা কিভাবে বাড়ানো যায়। যদি ডাক্তার বাবুর পরামর্শ দেয় এবং হাসপাতালে বেড না পাওয়া যায় বা ভর্তি না করা যায়, আমাদের বাড়িতে ভেন্টিলেশন অর্থাৎ বাইপ্যাপ যন্ত্রটি দিয়েও চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।।
সবাই ভালো থাকবেন, আমরা সবাই আপনাদের পাশেই আছি। অক্সিজেন থেরাপি সম্পর্কে পরামর্শ নিতে এই গ্রুপ এ হেল্প পোস্ট করুন, আমরা আপনার পাশে আছি।

____________________________
সৌজন্যে - জয়দীপ গাঙ্গুলী দা

08/05/2021

প্রেসক্রিপশন

রোগী - ডাক্তার বাবু, প্রেসক্রিপশনে একদম উপরে যে ওষুধটা লিখেছেন সেটা কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।

ডাঃ - আরে, ওটা ওষুধ নয়। পেন-এ কালি আসছিল না বলে চালিয়ে দেখছিলাম।

রোগী - আর কোথাও চেক করতে পারলেন না, প্রেসক্রিপশনেই চেক করতে হল ? এরজন্য আমাকে 50টা ওষুধের দোকানে ঘুরে বেড়াতে হল !!
একজন তো বলল, কালকে আনিয়ে দেবে।
আর একজন বলল, এই কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে, অন্য কোম্পানির দেব ?
আর একজন বলল, এই ওষুধের এখন খুব ডিমান্ড। ব্ল্যাকেই পাওয়া যাবে।
আর একজন তো আর এক কাঠি। বলেছে এটা তো ক্যানসারের ওষুধ, কার হয়েছে ?

08/05/2021

Tocilizumab and Remdesivir কিছু কথা যেগুলি জানার:
অক্সিজেন ও অন্যান্য ওষুধ এর সাথে সাথে আমরা গ্রুপ এ প্রচুর হেল্প পোস্ট পাচ্ছি ইনজেকশন remdesivir ও ইনজেকশন tocilizumab r কথা। অনেকের ই বাড়ির লোক হসপিটালে, বিশেষ করে প্রাইভেট নার্সিং হোম গুলিতে এডমিট হবার পর সবাই এই 2টি ইনজেকশন এর খোঁজ করছেন।

বর্তমানে inj Remdesivir এবং ini Tocilizumab এই 2টি ই সরকারি ভাবে কন্ট্রোলে, এবং কোন প্রাইভেট ভাবে কেউ এগুলো আনতে বা কিনতে পারবেন না। সরকারি হাসপাতালে যারা ভর্তি আছে তাদের লাগলে CMOH office থেকেই সেটি দেয়া হবে,এমনকি যারা মনমহিনী, লীলা,গীতারাম বা আর এন ঠাকুর এ এডমিট আছেন তাদের ও লাগলে সেটা হাসপাতালে সরাসরি পৌঁছে দেবে সরকার থেকে,যদি পর্যাপ্ত স্টক থাকে।
কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে এই 2টি ওষুধ ই কোনো ম্যাজিক না,যে দেয়ার সাথে সাথে 70% স্যাচুরেসান এর রোগীর স্যাচুরেসান 95% হয়ে সম্পুর্ন সুস্থ্য হয়ে যাবে।

ইনজেকশন remdesivir হলো একটি এন্টিভাইরাল যেটি ভয়াবহ মাত্রার কোভিড হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন ও খুব তাড়াতাড়ি খারাপ হয়ে যাচ্ছেন,তাদের কে দেয়া হয়।
100mg r vial এ পাওয়া যায়, 200mg i.v charge করে বাকি 4দিন এ 100mg i.v দেয়া হয়। রোগের প্রথম 5দিন বা প্রথম 7দিন এর মধ্যে দিতে হয়, যত দেরি করে দেওয়া হবে তার কার্যকারিতা তত কম হবে। তাই পরের দিকে দিলেও সেরকম লাভ হয়না। দাম 3000-4000 টাকা প্রতি এমপুল।

ইনজেকশন tocilizumab একটি এন্টিবডি যেটি মানুষের শরীরে নিঃসৃত ইন্টারলুকিন 6 নামে কেমিক্যাল কে প্রতিহত করে। আমি আগের পোস্ট গুলোতে বলেছি যে কোভিড এর দ্বিতীয় সপ্তাহ বা তার আগেই কিছু মানুষের শরীরে সাইটকাইন ঝড় বা cytokine Storm হয় যাতে এই IL 6 bere jay (80 বা তার ও বেশি) . যার জন্য নতুন করে জ্বর আসা,শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া,স্যাচুরেসান কমে গিয়ে হটাৎ করে রোগী খারাপ হয়ে যায়। এই সাইটকাইন ঝড় কে ঠিক করার জন্য বেশি মাত্রায় ইনজেকশন স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়, হাই ফ্লো ন্যাসাল অক্সিজেন(একটি বিশেষ মেশিনে যাতে 60লিটার/মিনিট গতিবেগ পর্যন্ত অক্সিজেন দেওয়া যায়),ভেন্টিলেটর দরকার পড়লে ও আনুষঙ্গিক ওষুধ দেয়া হয়।
যাদের আই এল 6(IL6) এর ভ্যালু খুব বেশি তাদের ক্ষেত্রে
ইনজেকশন tocilizumab ba injection ETOLIZUMAB দিয়ে সাইটকাইন ঝড় থামিয়ে রোগীর প্রান বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়। যদিও এই ওষুধ ও খুব দুর্লভ এবং সরকারি ভাবে নিয়ন্ত্রিত।
ইনজেকশন টোসিলিজুম্যাব এর ব্র্যান্ড নাম holo inj ACTEMRA 400mg. দাম প্রায় 40000 একটি এমপুল এর।

প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি এই 2টি ইনজেকশন এর কোনোটাই কিন্তু বর্তমানে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি কোভিড চিকিৎসা গাউইলাইনে সেভাবে নেই। এগুলি off lebel use অর্থাৎ রোগীর অবস্থা অনুযায়ী প্রয়োগ করা হচ্ছে ।

ভালো থাকুন,সুস্থ্য থাকুন, লড়াই চালু থাকুক।

__________________________
সৌজন্যে -জয়দ্বীপ গাঙ্গুলী স্যার

01/05/2021

স্বাস্থ্য স্রমিক

**********************************

ওই যে দেখছেন উস্কোখুস্কো চুলের ছেলেটা ছুটে বেড়াচ্ছে ওয়ার্ডের এমাথা থেকে ওমাথা... কিংবা ওই যে মেয়েটা দুদ্দাড় করে সিঁড়ি ভাঙতে গিয়ে হোঁচট খেল... ওদের চেনেন? ওরা সরকারি মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তার। ইন্টার্ন, হাউসস্টাফ, পিজিটি। কতই বা বয়স? চব্বিশ-ছাব্বিশ কিংবা আরেকটু বেশি।

সকাল থেকে ওরা এক মুহূর্ত বসার সময় পায়নি। ব্লাড টানা, চ্যানেল করা, গলায় খাওয়ার নল পরানো, ড্রেসিং, ক্যাথেটার, খাতাপত্রের কাজ ইত্যাদি যাবতীয় জিনিস সামলে ওরা যখন কোমর সোজা করে উঠে দাঁড়িয়েছে তখন সূর্য মাঝগগন ছেড়ে বেশ খানিকটা পশ্চিমে ঢলেছে। সকাল থেকে জল খাওয়াও হয়নি। অনকল রুমে গিয়ে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে, মাস্ক খুলে জল খাওয়া মানে বিরাট ঝক্কির কাজ। ও হ্যাঁ, সাবানও থাকে না বেশিরভাগ সময়। পেচ্ছাব হলুদ। জ্বালা করে। ব্যস্ত সরকারি হাসপাতালে কোনোকিছুই হাতের কাছে পাওয়া যায় না। একটা রক্ত নেওয়ার জন্য সিরিঞ্জ বা নিডল, তুলো, স্পিরিট, চেটানোর টেপ ইত্যাদি সব বেঁধেছেঁদে জোগাড় করতে যে সময় লাগে সেই সময়ে একটা বড়সড় ঘুরতে যাওয়ার ব্যাগ গোছানো হয়ে যায়। গ্লাভস বা মাস্ক পাওয়া যায় না অনেক সময়েই। মাস্ক চাইতে গেলে এমন সব চাউনি জোটে যে মনে হয় বড় কিছু অপরাধ করে ফেলেছে তারা। হাতে-পায়ে ছুঁচ ফুটে যাওয়া তো প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। তবু ওরা ছোটে। হাসপাতালগুলো ওদের হাতেই চলে।

হাতের কাজ কিছুটা মিটলে ওরা বৈভবপূর্ণ অনকল রুমে যাওয়ার সুযোগ পায়। এক চিলতে ঘরে খান তিনেক লোহার খাট। কাঁচভাঙা জানলা দিয়ে পশ্চিমের চড়া রোদ এসে শেঁকে, ভেজে যায়। বৃষ্টির ছাঁটে বিছানা সপসপে। শীতের উত্তুরে হাওয়ার পাতলা কাপড়ের পর্দা লতপতিয়ে ওড়ে। হাড় কাঁপিয়ে যায়। মেঝেতে আরশোলার লীলাক্ষেত্র। দেওয়াল ভর্তি মাকড়সার ঝুল। বাতাসে কান পাতলেই মশার পোঁ পোঁ। চেয়ার, টেবিলে লাল পিঁপড়ের লম্বা লাইন। বিছানায় চিটচিটে তোষক। চাদরগুলো ছিঁড়ে না যাওয়া অব্দি পরিবর্তনের আশা নেই। এসবের মধ্যে একটাই ভালো দিক। বিছানায় জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য খাবারের অপরিমিত আয়োজন। "অবশ্য খাবার খেতে নয়, খাবার হিসেবে।" ছারপোকার দল চব্বিশ-পঁচিশের তাজা রক্ত বড্ড ভালোবাসে।

তারপর সেই আড়ম্বরপূর্ণ হিসি-হাগু রুম। দরজা ঠেললেই আওয়াজ ওঠে- ক্যাঁচ! রাজারাজড়ার ব্যাপার তো... ওসব আসলে শুভ-আগমনের সানাই। দরজা খুব ধীরে ঠেলতে হয়। না জানি কখন ভেঙে পড়ে। ঢুকেই সামনে দামী বেলজিয়াম গ্লাসের আয়না। নিন্দুকে বলে, মাকড়সার ঝুলে কিছুই দেখা যায় না। এমনিতেই কাঁচের বিভিন্ন জায়গায় বিস্তর ফাট। ওদের কথায় কান দেবেন না। ওরা শিল্পকর্মের কিছু বোঝে না তাই ওরকম বলে। ওগুলো আসলে কাঁচের ওপর নক্সা কাটা। শিল্পরসিক না হ'লে ভাঙা কাঁচ বলে ভুল করা স্বাভাবিক। অথবা, সেই প্রাগৈতিহাসিক জাদুঘর সদৃশ কোমোড... শোনা যায়, ওখানে বিম্বিসারের আমলের বিষ্ঠাচর্চিত নক্সারও দেখা মেলে। কী তার রূপ! কী তার বর্ণ! হলুদের ওপর বাদামীর বিভিন্ন শেড। যেন বা মাইকেল এঞ্জেলোর চিত্রকলা! লোকচক্ষুর আড়ালে শুধুমাত্র জুনিয়র ডাক্তারদের মনোরঞ্জনের জন্যই এত আয়োজন। ফ্লাশের জলে ধুয়ে চিত্রকলা যাতে নষ্ট না হয় তার ব্যবস্থাও পাকা। টিপলে জল পড়ে না। শব্দ হয়- খট! অথবা জল মেঝে ভাসিয়ে বাইরে যায়। খুব খারাপ দিনে মাঝে মাঝে ফ্লাশ কাজ করে। মিনিট পনেরো গুড়গুড় আওয়াজ করে ঝিরঝিরিয়ে জল পড়ে। তাতে বিষ্ঠারাজি নড়ে ওঠে কিন্তু কালের অতল গহ্বরে তলিয়ে যায় না।

এই বিপুল সমারোহে ভরা অনকল রুমে ওরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে থাকে। ঘামে ভেজা শার্ট। জুতোটা ছিটকে পাঁচহাত দূরে। হাতে খাপখোলা পেন। শুধু স্টেথোস্কোপটা বড্ড যত্ন করে রাখা। গলায় কিংবা মাথার কাছে। কে জানে কেন ওটার প্রতি বড্ড মায়া ছেলেমেয়েগুলোর...

রাতবিরেতে ডাক আসে। সাতদিন বাড়িতে ফেলে রেখে ঠিক খাবি খাওয়ার আগের মুহূর্তে পেশেন্ট হাসপাতালে আসে। মাঝে মাঝেই মদ্যপ গুটকাখোর কিংবা লোকাল রাজনৈতিক নেতার সাড়ে বত্রিশ নম্বর চ্যালাদের দেখা মেলে- "দাক্তার কোতায় **? দাক্তার গুমোচ্চে? নাক ডাকিয়ে গুমোচ্চে নাকি? রুগির কিচু ওয়ে গেলে কিন্তু..." চব্বিশ-পঁচিশের ছেলেটি কিংবা মেয়েটি কাঁপা কাঁপা হাতে স্টেথো বসায়। প্রেসক্রিপশন লিখতে গিয়ে মনে পড়ে জয়েন্টে মেডিক্যালে পঁচানব্বই র‍্যাঙ্ক করার পর সাতটা ফুলের তোড়া পেয়েছিল সে।

আবার কখনও অন্যরকম সকাল হয়। সেই কোন গড়বেতা থেকে আট বছরের ছেলেটা নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছিল। আজ চোদ্দদিন বাদে ছুটি। দোহারা চেহারার বাবা শিরা ওঠা হাত তুলে কপালে ঠেকায়, চোখে জল। বাচ্চাটা ডাক্তারকে নিজের হাতে আঁকা একটা ছবি তুলে দেয়। ছবিতে অ্যাপ্রন পরা একটা চেহারা। বড় মমতায় পৃথিবীর সব কালো ধুইয়ে দিচ্ছে সে। চোখ ঝাপসা হয়ে আসে জুনিয়র ডাক্তারের।

আজ ওদেরও দিন। যদিও ওরা ছুটি পায়নি। ওরা আজও কাজ করবে। ওদের কাজ 'ঘন্টা'য় বেঁধে দেয়নি কেউ।

____________________________
সৌজন্যে Soumyakanti Panda

28/04/2021

#হারামি_ডাক্তার_বনাম_হরেনবাবু

*******************************

(বিধিসম্মত সতর্কীকরণঃ সব চরিত্র কাল্পনিক)

হরেনবাবু পাড়ার চায়ের দোকানে বেশ পরিচিত মুখ। আর হবে নাই বা কেন? উনি এককথায় জীবন্ত এনসাক্লোপিডিয়া। ইথিওপিয়ায় চালের দাম, কলম্বোর বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ, মস্কোর লোকে আমুল বাটার দিয়ে পাউরুটি খায় কিনা এসব যাবতীয় তথ্য ওনার নখদর্পনে। চেহারাতেও বেশ একখানা ইয়ে আছে। মানে, দেখলেই কেমন যেন সমীহ জাগে। ওনার আরও অনেক গুণ! চিত্রকলা, সঙ্গীত, ক্রিকেট, রাজনীতি এসবের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁর অনায়াস বিচরণ। ডাক্তারির কথাটা অবশ্য না বললেও চলে। কারণ শিক্ষিত বাঙালি মাত্রই আর কিছু না জানুন ডাক্তারিটা প্রায় সবাই জানেন। যাক, গল্প বলতে এসে ভূমিকা প্রলম্বিত করে লাভ নেই। আমরা সরাসরি গল্পে চলে যাবো...

১.

গত বছর। তখন সদ্য সদ্য কোভিড থাবা বসাতে শুরু করেছে। অথচ, রোগ সম্পর্কে কিছুই প্রায় জানা নেই। চিকিৎসকরাও ভয় পাচ্ছেন। হাসপাতালে পিপিই তো দূর, মাস্ক অব্দি নেই। পিপিই চাইতে গেলে মিলছে ছেঁড়া বর্ষাতি। তাই পরেই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন চিকিৎসক বা অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা। (সুধী পাঠক, বর্ষাতি পরে আপনার বাড়িতেই ঘন্টাদুয়েক বসে থাকার কথা কল্পনা করে নিন। অবশ্যই এসি ছাড়া)। এমন এক বিকেলে হরেনবাবু বসে বসে চা খাচ্ছেন। সঙ্গে করোনাভাইরাসের আকার, আকৃতি, খাদ্যাভ্যাস, বয়ঃসন্ধি, প্রেমে পড়া তারপর ওসব ইচিং-মিচিং ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে দীর্ঘ বক্তব্য রাখছেন। হঠাৎ সামনে দিয়ে ডা. সেনের গাড়িটা ঢুকতে দেখেই হরেনবাবু বলে উঠলেন, "এই যে দেখেছেন হারামজাদাকে! শালা হাসপাতাল থেকে করোনা বয়ে এনে সারা পাড়ায় ছড়াবে। আজই আমি পাড়ায় মিটিং ডাকছি। শালাকে পাড়াছাড়া করা দরকার।"

তারপরের ঘটনা অনেকেই জানেন। দীর্ঘ অশান্তি, হুমকি, বাড়িতে ইঁট পড়ার পর বিধ্বস্ত ডা. সেন ডিউটির পরেও হাসপাতালের একফালি জায়গায় রাত কাটাতে বাধ্য হলেন। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ডা. সেন আবার পাড়ায় ঢুকতে পেলেন বটে, ততদিনে তাঁর মনে ভেঙে গেছে; এই এদের জন্যই রাত জাগা, পিপিই পরে সেদ্ধ হওয়া!

২.

দিন যায়। বাজারে মাস্কের আকাল। ছোট চেম্বারগুলোতে দু'ফুট দূরত্বে রোগী বসানো অসম্ভব। খুপরিজীবী ডাক্তাররা চেম্বার বন্ধ করতে বাধ্য হলেন। অবশ্যই সখ করে নয়। কেননা ওখান থেকেই তাঁদের রোজগার। এতে অবশ্য হরেনবাবুর খুশি হওয়ারই কথা ছিল। সোজা হিসেব, ডাক্তার রোগী না দেখলে করোনা ছড়াবে না। এমনিতেই ওসব অ্যাজিথ্রাল, অগমেন্টিন আর ক্যালপল হরেনবাবু নিজেই কিনে খান। ডাক্তারি আর কী এমন কঠিন কাজ? রোগী ভালো হয় ভগবানের দয়ায় আর মারা যায় চিকিৎসকের গাফিলতিতে। কিন্তু কী আশ্চর্য! হরেনবাবু এতেও খুশি হলেন না। চায়ের দোকান আবার তাঁর গলার আওয়াজে গমগম করতে লাগল- "হারামিগুলো সারা বছর পয়সা লুটবে। এখন সব ভয়ে লুকিয়েছে দেখুন! শুধু ক্যাল চাই বুঝলেন, টিপ করে কানের গোড়ায়..."

৩.

তখন বাজার কাঁপাচ্ছে আয়ুর্বেদিক ক্কাথ আর আর্সেনিকাম অ্যালবাম। সকালে বাবা লোকনাথের চরণামৃত, বিকেলে ক্কাথ আর রাতে আর্সেনিকাম অ্যালবাম। রাজনৈতিক নেতানেত্রীরাও জোর সওয়াল করছেন। হরেনবাবুও বাড়িশুদ্ধ সবাইকে দু'ফোঁটা খাইয়েই মাস্ক খুলে ঘুরে বেড়ানো শুরু করলেন। চায়ে দু চুমুক দিয়েই বলতে শুরু করলেন, "ব্রহ্মাস্ত্র খেয়ে নিয়েছি। আর করোনা আমার কী করে? বলেছিলাম না, ওসব অ্যালোপ্যাথি মানেই শুধু টাকা খেঁচার কল। হোমিওপ্যাথির মতো যুগান্তকারী আবিষ্কারকেও এরা কোনঠাসা করে রেখেছে। সব বহুজাতিক সংস্থার চক্রান্ত। যাক গে, আর্সেনিকাম অ্যালবাম এসে গেছে! এবার দ্যাখ কেমন লাগে!"

কে যেন মিনমিন করে বলার চেষ্টা করলেন, "কিন্তু দাদা, বিজ্ঞান বলে- অ্যাভোগাড্রো নাম্বার অনুযায়ী আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০ সি-তে মূল রাসায়নিকের একটি অণুও নেই। তাহলে কাজ কে করবে? তাছাড়া হোমিওপ্যাথির কার্যপ্রণালী বা কার্যকারিতা সম্পর্কে আজ অব্দি কোনও বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ নেই। উন্নত দেশগুলোর অনেক জায়গাতেই নিষিদ্ধ। শুধু মানুষের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাই সম্বল। তার ভিত্তিতে..."

তেড়ে উঠলেন হরেনবাবু, "তুইও আজকাল ওষুধ কোম্পানির দালালি শুরু করলি নাকি? দুদিনের ছোঁড়া..."

চুপ করে গেলেন ভদ্রলোক।

৪.

দিন গেল। মাস গেল। আর্সেনিকাম অ্যালবাম, জড়িবুটি ক্কাথ কোথায় লুকিয়ে গেল কে জানে! এদিকে হাসপাতালে হাসপাতালে করোনা রোগীতে ছয়লাপ। আর্সেনিকাম অ্যালবামের সম্মানহানিতে হরেনবাবু কিছুদিন মিইয়ে ছিলেন। তারপর আবার জেগে উঠলেন, "শালা এতগুলো ডাক্তার করছেটা কী? নামের পাশে এত বড় বড় ল্যাজ। একটা সামান্য ভ্যাক্সিন বানাতে পারছে না?" চায়ের আসরেও সবাই সায় দিলেন- "তাই তো... সামান্য একটা ভ্যাক্সিন আসতেই এত দেরি?"

সময় থেমে থাকে না। লকডাউন, পরিযায়ী শ্রমিক, ট্রেন বন্ধ ইত্যাদি সব ব্যাপারেই হরেনবাবু বক্তব্য রাখেন। অগ্নিগর্ভ সেসব বক্তব্যের চোটে গোপালদা'র চায়ের দোকানের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। শেষমেশ গোপালদা বুদ্ধি করে সসপ্যানে চা, চিনি, দুধ সব দিয়ে হরেনবাবুকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করেন । হরেনবাবু বলতে শুরু করেন, "ওসব মাস্ক-ফাস্ক সব চক্রান্ত। এরা সব পাবলিককে ভয় দেখিয়ে কোনও গোপন ফন্দি আঁটছে। বুঝি না নাকি? সব ভ্যাক্সিনের দালাল। আরে ভাই, মাস্ক পরলেই কার্বন-ডাই-অক্সাইড জমে মাথায় উঠে যাচ্ছে। মাস্কে ভাইরাস আটকাবে! ছোঃ! বা**** ডাক্তারের কথায় আমি ইয়ে, মানে ইয়ে। আমি শালা আর কোনোদিন মাস্ক পরবো না। পাবলিককে গান্ডু পেয়েছে নাকি?" বক্তব্যের তেজে আর উত্তাপে চা এমনিই ফুটে যায়। আগুন লাগে না। গোপালদা'র গ্যাসের খরচ কমে।

৫.

ততদিনে কেস খানিক কমেছে। এখন আর হরেনবাবু একা নন। তাঁর অনেক অনুগামী হয়েছে। তাঁরা কেউই আর মাস্ক পরছেন না। রাজনৈতিক সভা, খেলা, মেলা, ধর্মীয় জমায়েত কোথাও মাস্ক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে ভ্যাক্সিনও এসে গেছে। হরেনবাবু আবার চাঁছাছোলা ভাষায় বক্তব্য রাখলেন, "এত তাড়াতাড়ি ভ্যাক্সিন বানানো যায় নাকি? সব মুরগী বানাচ্ছে আমাদের। ওসব শালা আমি কিছুতেই নেবো না। ডাক্তার গান্ডুগুলো ভয় বেচে খায়। গিনিপিগ হ'লে ওরাই হোক।"

৬.

দ্বিতীয় তরঙ্গ শুরু হ'ল। আবার কেস বাড়তে শুরু করলো। এবং হঠাৎ করেই তুঙ্গে উঠে এলো। ডাক্তাররা তো বটেই রাজনৈতিক নেতানেত্রী কিংবা বুদ্ধিজীবীরাও ভ্যাক্সিনের পক্ষে সওয়াল করলেন। ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষও ভ্যাক্সিনের লাইনে ভিড় জমাতে শুরু করলেন। ভ্যাক্সিনের আকাল দেখা দিল। হরেনবাবু যথারীতি থেমে নেই- "দেখলি! ডাক্তার পিশাচগুলোর কান্ড দেখলি? সব আগে আগে ফাঁকতালে ভ্যাক্সিন নিয়ে নিয়েছে। এবার আমরা কোথায় পাবো? পাবলিকের জীবনের মূল্য নেই? মালগুলোকে একবার হাতের কাছে পেলে..."

এদিকে অর্থপিশাচ ডাক্তাররা ফোনে, হোয়াটসঅ্যাপে, মেসেঞ্জারে বহু রোগীকে টেলিকন্সালটেশন দিতে শুরু করলেন। যদিও তাঁরা জানেন, এভাবে দূর থেকে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া সবসময় সম্ভব নয় কিন্তু এই দুঃসময়ে সাধারণ মানুষের কাছে এইটুকু পাশে থাকাও অনেক। হরেনবাবু চোখ পাকিয়ে বলতে শুরু করেছিলেন, "নিশ্চয়ই মোটা টাকার বিনিময়ে..." কিন্তু যখন শুনলেন এর সবটাই সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রম তখন তিনি হিসেব না মেলাতে পেরে কিছুটা থমকে গেলেন। কে আবার বললো, "প্যানডেমিকের দিনে অনেক পরিষেবার দাম বেড়েছে কিন্তু কোনও ডাক্তারের ভিজিট বাড়ে নি।" ততক্ষণে হরেনবাবু ঠিক সামলে নিয়েছেন, "বাড়ায় নি মানেটা কী? এসব ছক বুঝলি? পেশেন্ট ধরার ছক। ফ্রি অ্যাপ দেখিস নি? প্রথম ক'দিন ফ্রি দেয়। তারপর ঠিক সুযোগ বুঝে..."

যদিও হরেনবাবু বুঝতে পারেন, আজকাল তাঁর কথায় তার তত হাততালি পড়ছে না। সমস্বরে 'ঠিক বলেছেন দাদা' কিংবা 'কী দিলেন গুরু' এসব আওয়াজগুলোও বেশ কমছে।

৭.

শেষ ঘটনা দু'সপ্তাহ আগের। তিনদিন টানা জ্বরের পর তীব্র শ্বাসকষ্ট। টেস্ট করতেই জানা গেল হরেনবাবু কোভিড পজিটিভ! যখন হাসপাতালে আনা হয় হরেনবাবুর জ্ঞান নেই। মরণ-বাঁচন সমস্যা। টানা তিনদিন আইসিইউতে চিকিৎসার পর হরেনবাবু খানিক স্থিতিশীল হলেন। চোখ খুলেই দেখলেন, তিনি অচেনা কোনও জায়গায়। চারদিকে পিঁক পিঁক করে কীসব বাজছে। একগাদা স্যালাইন, নল, ছুঁচ আরও কত হিজিবিজি! কয়েকজন সারা গায়ে সাদা পোশাক পরা ভূতের মতো লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছে! হরেনবাবু বুঝলেন, তিনি হাসপাতালে। তৎক্ষনাৎ মনস্থির করে নিলেন। চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। এ সবই নিশ্চয়ই চক্রান্ত! তিনি হারামি ডাক্তারদের আসল রূপ ধরে ফেলেছিলেন বলে তাঁকে মেরে ফেলার চক্রান্ত করা হচ্ছে। কোনোমতে এখান থেকে বেরোতে পারলেই এসব চক্রান্তের খবর সবাইকে জানাতে হবে...

© Soumyakanti Panda

26/04/2021

১.
কেউ কেউ স্বভাবজনিত কারণে নীচে ছেঁড়েন, কেউ কেউ পৌরুষজনিত কারণে ওপরে গজান। খুব রেয়ার কিছু লোকজন একই সঙ্গে কাজের দিক থেকে নীচে ছেঁড়েন এবং খামতি ঢাকতে ওপরের দিকে পৌরুষ গজান...

প্রায় একখানা গোটা বছর পাওয়া গেছিল করোনার বিরুদ্ধে অসম্ভব লড়াইয়ের রসদ জোগাড়ের জন্য। কিন্তু যেহেতু আমরা নেতা বুঝলেও রাজনীতি, প্যানিক বুঝলেও বিজ্ঞান এবং আইপিএলের ফুলফর্ম বুঝলেও বেসিক দাবিদাওয়ার বানান বুঝি না তাই হাহাকারের মাশরুম ক্লাউড এই মুহূর্তে আমাদের স্ট্রেচারে পড়ে থাকা মৃতদেহ দেখে হাসছে। আপনার দুর্জয় সাহস আর ফেসবুকীয় বক্তব্য আসলে নিরীহ চা-কাকুর বিরুদ্ধে খিল্লি আর একলা বিলেত ফেরত কিশোরের বিরুদ্ধে মবলিঞ্চিংয়ের অসীম বীরত্বেই আটকে থাকে। সরকার আর মোদী-শা'র বিরুদ্ধে একটা সামান্য বক্তব্য রাখতে গেলেই যেহেতু জানেন পেছনে আড়াই ফুট লম্বা আছোলা ঢুকে যাবে তাই সেসব কথা পড়ে থাকে গলির কোণেই, আর আপনার মৃত কবিতার ওপর বিজেপির বিজ্ঞাপনের অ্যাড আসে পনেরো সেকেন্ডের!

২.
"এটা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নয়, এটা সুনামি"। আজ্ঞে প্যানিক আমি ছড়াচ্ছি না, বলেছেন স্বয়ং দিল্লি হাইকোর্ট। ব্যাপারটা শুধু মোট দৈনিক সংক্রমণের নয়, ভয় সংক্রমণের উর্ধ্বমুখী হার (প্রায় ৩০%, অর্থাৎ এই মুহূর্তে প্রতি তিনজনের টেস্ট হলে একজন পজিটিভ আসছেন), অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সীদের মধ্যে বেশি সংক্রমণ, সংক্রমণের severity এবং অতি অবশ্যই ভ্যাকসিন কভারেজের!

এদেশে আমি আপনি তো মানুষ নই, শুধুই একজন শুয়োরের বাচ্চা ভোটার। তাই বিজেপি (এবং তৃণমূলও) এই ভয়ঙ্কর দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে আমাদের সামনে নির্লজ্জ নির্বাচনী গাজর ঝোলায় "ক্ষমতায় এলে বিনেপয়সায় ভ্যাকসিন দেব"! আমরা কেউ একবারও জিজ্ঞেস করি না এঁদের যে মোট ১২১টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় কর্মীদের টাকা কেটে অথবা জনকল্যাণ তহবিল থেকে (দুয়ে মিলিয়ে আড়াই হাজার কোটির ওপরে) অথবা লক্ষ মানুষের প্রত্যক্ষ দানের মাধ্যমে যে টাকা জমা পড়েছিল পিএম কেয়ার্সের ফান্ডে সেই টাকাগুলো তাহলে কোথায় গেল? কত বড় নির্লজ্জ এবং অক্ষম হলে একটি দেশের সরকার একটি জাতীয় (স্বাস্থ্য) বিপর্যয়ের মধ্যে তার নাগরিকের জন্য ন্যূনতম ভ্যাকসিনেশনের দায়িত্বটুকু থেকে হাত ঝেড়ে বলতে পারে "আমার সরকারি হাসপাতালে ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত সাপ্লাই নেই তবু আমি এই মুহূর্তে খোলা মার্কেটে ভ্যাকসিন ছাড়ছি এবং সংস্থাগুলিকে তাদের দাম নির্ধারণের ফ্রিহ্যান্ড দিচ্ছি"! এদেশের এই মুহূর্তে ভ্যাকসিন উৎপাদন এবং ডিস্ট্রিবিউশনের হার অনুযায়ী ৬০% ভ্যাকসিন কভারেজ পেতে (WHO এর মতে হার্ড ইমিউনিটির জন্য ন্যূনতম কভারেজ) আমাদের অপেক্ষা করতে হত মার্চ ২০২২ পর্যন্ত! এর মধ্যে সরকার জানিয়ে দিয়েছে ১৮-৪৫ এর ভ্যাকসিনেশন হবে শুধুমাত্র কোউইন অ্যাপে প্রিরেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে, 'মূলত' বেসরকারি উদ্যোগেই। কোভিশিল্ডের দু'টি ডোজ নিতে দাম পড়বে ১২০০, কোভ্যাক্সিনের ২৪০০! মানুষের হাতে কাজ নেই, বেকারত্ব সর্বোচ্চ, হেঁশেলে আগুন, সবার ঘরে তো আর পার্টিফান্ড থেকে জনগণের মারা টাকা আসে না। এদেশের বিপুল জনগণের কতজন এই টাকাটা ভ্যাকসিনের জন্য খরচা করার বিলাসিতা বা সামর্থ্য রাখেন? ফলে আপাতত হার্ড ইমিউনিটির ভাই হয়েছে আর বেড এবং অক্সিজেনের ভাইপো, 'বাঙ্গাল' দখলের স্বপ্নই এদেশের ইতিহাস এবং বর্তমান জুড়ে আমার ও আমার বাবার এক ও একমাত্র সত্যি।

আমাদেরই টাকা নিজেদের পেছনে গুঁজে সরকার রান্নার গ্যাস থেকে ভর্তুকি তুলবে, পেট্রোল একশো ছোঁবে, কাঁচা বাজারে মূল্যবৃদ্ধি হবে লাগামছাড়া এবং তারপরে বাকি টাকায় এমপি কিনে এবং পশ্চিমবঙ্গ জয়ের কান্ডারী হেভিওয়েটদের জন্য শুধু দুশো কোটি হোটেলভাড়া দেওয়ার পরেও মাস-ভ্যাকসিনেশনের দায়িত্বটুকুও নেওয়া যাবে না! আপনি এ নিয়ে সামান্য গলা তুলুন, সে গলায় পা দিয়ে দেঁতো হাসি হেসে কোনও এক শুয়োরের বাচ্চা পাশ থেকে ঠিক বলে উঠবে "কুছ ভি করলো ভোসডিকে, আয়েগা তো মোদি হি"

৩.
সেই, আয়েগা তো মোদি হি, এছাড়া এ মায়াজীবনে আর আছেটাই বা কী। মানুষের কান্না, হাহাকার আর চিতার আগুনের দৃশ্য সবকিছুর মধ্যেও টিভিতে খায় ভালো। এবং খায় মোদির আসানসোল জনসভা আর তার গর্বোদ্ধত উচ্চারণ, মাস্কহীন অমিত শা'র হাজার হাজার লোকসহ রোড শো!

কারণ অ্যাঙ্কর থেকে শুরু করে মোদি-শা জানে এদেশের মানুষের প্রশ্ন করার মন আর আঙুল তোলার ধক, দুটোই দীর্ঘদিনের চেষ্টায় ভেঙে ফেলা গেছে। এদের সমস্ত সাহস ধাবিত হয় 'অন্য'কে মবলিঞ্চ করার প্রতি, এদের সমস্ত পড়াশুনোর শুরু ও শেষ হোয়াটস্যাপ ফরোয়ার্ডে, এদেশের রাজনীতির বেসিক স্ট্যান্ডার্ড দিলীপ ঘোষে আর চিকিৎসাবিজ্ঞানের আপার লিমিট ডঃ হর্ষবর্ধনেই আটকে থাকে। এদের সমস্ত ক্রুদ্ধ বক্তব্য ধাবিত হয় শুধু এবং শুধুমাত্র মাস্কহীন, সচেতনতাহীন জনগণের বিরুদ্ধেই। হ্যাঁ, জনসচেতনতা বাড়ান বস, রাগ দেখান, কিন্তু আজকের এই কোল্যাপ্সের সমস্ত দায় শুধুই 'মাস্কহীন চেতনাহীন জনগণের' এই ধান্দাবাজিটা সরিয়ে রেখে সরকারকেও বলুন এই ধ্বংসের প্রাপ্য দায়টুকু তাকে নিতে। সেটুকু ধক যেহেতু আপনার নেই, কোনোকালে ছিলও না, তাই সৎ এবং নির্ভীক টিভির পর্দায় চিতাদৃশ্যের পাশেই শেষ পর্যন্ত ফুটে ওঠে কোলাপ্স করেছে নাকি 'সিস্টেম'!

এদের গালে একখানা বিরাশি সিক্কা হাঁকিয়ে কেউ বলে না যে এই সিস্টেমটা আসলে কেন্দ্র সরকার! যে একটি বছর সময় পেয়েও চরম দায়িত্ববোধহীন হয়ে, বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকদের সমস্ত সাবধানবাণীকে জাস্ট প্রয়াগরাজে ভাসিয়ে দিয়ে পেটি পলিটিক্সের চাষ করে গেছে। আর আজ যখন গোটা চিকিৎসাব্যবস্থা আক্ষরিক অর্থেই ভেঙে পড়েছে, খুব অন্যরকম কিছু না ঘটলে সামনের দিন কয়েকের মধ্যে পাল্লা দিয়ে ভাঙবে বাকি পিলারগুলোও, তখনও জনসভা আর রোড শোর গর্ব নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে শেয়ার করবেন ডঃ হর্ষবর্ধন। আজ্ঞে চাপ নেবেন না, আপনি কিন্তু ট্যুইটারে কোভিড নিয়ে সরকারের কোনও সমালোচনা করতে পারবেন না, অলরেডি অফিসিয়াল নিষেধাজ্ঞা বেরিয়ে গেছে। যোগীজি বলে দিয়েছেন 'অক্সিজেন নেই বেড নেই' টাইপের 'গুজব' ছড়ালেই NSA এর আওতায় দখল করা হবে সম্পত্তি! আর আমি শালা ক্লান্ত চারদেওয়ালের ভেতর প্রাণপণে ডিউটি থেকে ফেরা প্রিয়জনকে বাঁচাচ্ছি অবশ্যম্ভাবী মেন্টাল ব্রেকডাউনের হাত থেকে!

৪.
এই দেশটা একদিনে তৈরি হয়নি বস, তাই এই অবস্থাটা একদিনে কাটবেও না। কেউ জনস্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি এতদিন, বেড না পেলে জিজ্ঞেস করেননি সরকার কী করছে, প্রশ্ন তুলেছেন এদেশে থাকতে যদি এতই সমস্যা পাকিস্তান যেতে অসুবিধে কোথায়, হাত তুলেছেন সামনে পড়ে থাকা একক ডাক্তারের ওপর! তাই আজ যখন পাকিস্তানের মানুষ আপনার স্বাস্থ্যব্যবস্থার কলোসিয়ামের পাশে অক্সিজেন নিয়ে দাঁড়াতে চায় আর আপনি তার পাশেই ট্যুইটারে ট্রেন্ড করেন হ্যাপি বার্থডে সচিন আর ভারত কা বীরপুত্র মোদি, তখন আপনি ভেতরে জানেন সম্ভ্রম থেকে শুরু করে যুক্তি, বোধ থেকে শুরু করে প্রায়োরিটির প্রতিটি খেলায় আপনি হেরে ভুত হয়ে গেছেন! আপনার শুধু পুরোনোর গল্প আর ঐতিহ্যের গর্ব আছে কারণ আপনার কাছে বর্তমানের উত্তর অথবা ভবিষ্যতের রূপরেখার কোনোটাই নেই। তাই আপনি রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহের পাশাপাশিই বায়োবাবলের ওপাশে থাকা সান্ধ্য আইপিএলই ডিজার্ভ করেন। আপনার রাজনীতিহীনতার ওপর, প্রশ্নহীনতার ওপর, ভয়ের ওপর দিয়ে রোড শো করে যায় নির্লজ্জ রাজনীতি ও সংলগ্ন মৃত্যুমিছিল।

পাল্টা সাহসটাহসের কথা বলতে আর আলোর কথা শোনাতে পারলাম না বলে দুঃখিত। খ্যাতির চাষ অথবা নিউ এজ গুরুর জীবনবাণীর হোয়াটস্যাপ ফরোয়ার্ড কোনোটাই করি না। আমার কাছে এই মুহূর্তের ব্যক্তিগত ও সামগ্রিক হতাশাটুকুই বাস্তব, চোখের সামনে স্যাচুরেশন চল্লিশের নীচে নেমে গিয়ে বিনা অক্সিজেনে স্ট্রেচারে পড়ে থেকে কোল্যাপ্স করে যাওয়ার অসহায়তাটুকুই তীব্রতম সত্যি, ঘুম না আসা রাতের পাশে জমে ওঠা দুশ্চিন্তার ছাইটুকুই অণুজীবন।

কেউ কেউ যুগপৎ নীচে ছেঁড়েন এবং ওপরে গজান। বিনম্রতার পাঠ নেওয়া ভদ্রলোকেরা সকালে উঠে তার দিকে তাকিয়ে দেখেন উঠোন জুড়ে পড়ে আছে শিউলি ফুল আর দেওয়াল জুড়ে জেগে আছেন রবিঠাকুর। যাদের শরীরে হিথ লেজারের রক্ত বয় শুধু তারাই দেখতে পায় সাধুর আস্তিনের নীচে লুকিয়ে রাখা আছে হাজার কঙ্কাল, আর টিভিকমোডে লাইভ শো হচ্ছে মৃতদেহ জড়িয়ে থাকা মানুষের চিৎকারের।

আমার মৃত্যুর খবরের সামনে বিজেপির বিজ্ঞাপনের অ্যাড এলে স্কিপ করবেন না, ওটুকু বিনোদন আমার এবং আপনার মূল্যহীন জীবনে অবশ্যম্ভাবী প্রাপ্য ছিল...

________________________
সৌজন্য- অনীক চক্রবর্ত্তী দা

Address

102/2/B Exhibition Bagan Road , Gorabazar
Berhampore
742101

Telephone

+919635359992

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Dr Rameez Reza posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Share on Facebook Share on Twitter Share on LinkedIn
Share on Pinterest Share on Reddit Share via Email
Share on WhatsApp Share on Instagram Share on Telegram

Category