21/09/2025
🩺 হাঁটু ব্যথা মানেই বয়স? একজন চিকিৎসক হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা বলছে—এই ধারণাটি যতটা প্রচলিত, ততটাই বিভ্রান্তিকর।
প্রতিদিন চেম্বারে আমি এমন রোগীদের দেখি, যাঁদের বয়স ৩০ থেকে ৪০-এর মধ্যে।
তাঁরা আসেন দ্বিধা নিয়ে, প্রায়শই দেরিতে।
প্রথম কথাটাই হয়—“Doctor, আমার তো এখনো এত বয়স হয়নি, তবু হাঁটুটা এমন ব্যথা করছে কেন?”
এই প্রশ্নের পেছনে লুকিয়ে আছে একটা সামাজিক বিশ্বাস—যে হাঁটু ব্যথা শুধুমাত্র বার্ধক্যের লক্ষণ।
কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে বললে, এই ধারণাটি অসম্পূর্ণ।
হাঁটু ব্যথা বয়সের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে, কিন্তু সেটি একমাত্র কারণ নয়।
বর্তমান জীবনযাত্রা, কর্মপদ্ধতি, খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক সচেতনতার অভাব—এই সমস্ত উপাদান হাঁটু ব্যথার প্রকৃত কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আমি একজন অস্থি চিকিৎসক হিসেবে জানি, হাঁটু ব্যথার ক্লিনিক্যাল প্রোফাইল আজ অনেক বেশি জটিল ও বহুমাত্রিক।
আগে যেখানে হাঁটু ব্যথাকে শুধুমাত্র বার্ধক্যের একটি স্বাভাবিক উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করা হতো, আজকের দিনে আমরা জানি—এই ব্যথার পেছনে থাকতে পারে বহু কারণ, যেগুলো বয়সের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়।
🔹 Sedentary lifestyle—দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ফলে joint stiffness এবং muscular imbalance দেখা যায়।
🔹 Obesity—অতিরিক্ত ওজন হাঁটুর উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, cartilage ক্ষয় ত্বরান্বিত করে।
🔹 Vitamin D deficiency—হাড় দুর্বল হয়ে যায়, ফলে সামান্য strain-এও ব্যথা শুরু হয়।
🔹 Postural errors—ভুল ভঙ্গিমায় বসা বা হাঁটা হাঁটুর alignment নষ্ট করে।
🔹 Unresolved injuries—পুরনো চোট যদি সঠিকভাবে নিরাময় না হয়, তা chronic pain-এ পরিণত হতে পারে।
সম্প্রতি আমার কাছে এক রোগী এসেছিলেন—৩৫ বছর বয়স, IT professional।
সিঁড়ি উঠতে পারতেন না, হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে খুব বেশিক্ষণ, সাথে কোমরেও যন্ত্রণা।
Diagnosis: Vitamin D deficiency, poor posture, borderline obesity সাথে আরো কিছু মেডিকেল কন্ডিশন।
৪ মাসের চিকিৎসা ও lifestyle correction-এর মাধ্যমে তিনি আবার স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে সক্ষম হন, আরো অনেকটা বাকি, কিন্তু ওনার এই ভয় আর ইনিশিয়াল ব্যথা কাটাতে সক্ষম হয়েছি। সাথে যে ভুল ধারণা উনি মনের মধ্যে রেখেছিলেন সেটাও চলে গেছে।
এই অভিজ্ঞতা আমাকে বারবার মনে করিয়ে দেয়—চিকিৎসা মানে শুধু ওষুধ নয়, সচেতনতা ও সময়োচিত পদক্ষেপ।
রোগের চিকিৎসা তখনই সম্ভব যখন রোগী নিজের শরীরকে বোঝেন, নিজের ব্যথাকে গুরুত্ব দেন, এবং চিকিৎসকের পরামর্শকে বিশ্বাস করেন।
আর চিকিৎসক শুধু prescription দেন না, রোগীর ভয়, দ্বিধা, এবং misinformation-এরও চিকিৎসা করেন। তাই বলছি—যদি হাঁটু ব্যথা থাকে, বয়সের দোহাই দিয়ে তা উপেক্ষা করবেন না।
Early diagnosis এবং personalised treatment plan—এই দু’টি উপাদানই সুস্থতার চাবিকাঠি।
আপনি কি এতদিন এই myth-এ বিশ্বাস করতেন?
এই পোস্টটি শেয়ার করুন, যাতে আরও মানুষ সচেতন হন। স্বাস্থ্য সচেতনতা ছড়িয়ে দিন—কারণ প্রতিটি পদক্ষেপই সুস্থ জীবনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ। চিকিৎসা শুরু হয় সচেতনতা দিয়ে।
আর সচেতনতা শুরু হয় প্রশ্ন করার সাহস দিয়ে।
—Dr. Parasambit Mukherjee
Orthopaedic Surgeon
Khosbagan, Burdwan