Dr Pulak Kanti Kar

Dr Pulak Kanti Kar Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Dr Pulak Kanti Kar, Doctor, Calcutta Bara Bazar.

02/05/2025

Angul chhunye bose thakar ra। আঙুল ছুঁয়ে বসে থাকার রাত। Original Bengali Song by Pulak Kanti Kar Voice, Lyrics & Composition: Pulak Kanti Kar Recording, Mi...

10/11/2024

কোথায় আছে নীল পাখি। Kothay achhe neel pakhi। Original Bengali Song by Pulak Kanti Kar Voice, Lyrics & Composition: Pulak Kanti Kar Recording, Mix Master: P...

রবিবারের গল্প- পুলককান্তি কর চিত্র- চন্দ্রিমা ঘোষ 👇
10/11/2024

রবিবারের গল্প- পুলককান্তি কর
চিত্র- চন্দ্রিমা ঘোষ
👇

A website about literature and web magazine.

রবিবারের গল্প- পুলককান্তি কর চিত্র- শুভম দাস। 🍂
03/11/2024

রবিবারের গল্প- পুলককান্তি কর
চিত্র- শুভম দাস।
🍂

A website about literature and web magazine.

আজ পঁচিশে বৈশাখ। সুতরাং রবীন্দ্রনাথ। তবে কবিতায়।
08/05/2024

আজ পঁচিশে বৈশাখ। সুতরাং রবীন্দ্রনাথ। তবে কবিতায়।

Ke jeno ese | কে যেন এসে। ২৫ শে বৈশাখ। কবিতা পাঠ। By Pulak Kanti Kar।Voicg: Pulak Kanti Kar Voice and lyrics Pulak Kanti KarRecording, Mix Master: Pulak Ka...

শুভ নববর্ষ সবাইকে। সারা জীবন সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। এই পৃথিবীও ভালো ও সুস্থ থাকুক। শান্তি থাকুক সর্বত্র ।
14/04/2024

শুভ নববর্ষ সবাইকে। সারা জীবন সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। এই পৃথিবীও ভালো ও সুস্থ থাকুক। শান্তি থাকুক সর্বত্র ।

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে (রবি ঠাকুরের গান) | Real Essence of Sakatore oi by Pulak kanti KarVoice: Pulak Kanti Kar Lyrics & Composition: Rabindra Nath TagoreRe...

Original Hindi song, for you...
08/03/2024

Original Hindi song, for you...

Adhe Ansu Gire Hindi Song Pulak Kanti Kar Voice, Lyrics & Composition: Pulak Kanti Kar Recording, Mix Master: Pulak Kanti KarArrangement: Rahul ...

15/02/2024

এবার একটি গল্প

সাঁঝের তারা
পুলককান্তি কর

-- তবে এইটা কি তোমার ফাইনাল ডিসিশান, রুনু?
-- হ্যাঁ।
-- কিন্তু আমার অপরাধ? আমাকে কি তুমি পছন্দ করো না?
চুপ করে রইল রুনু। অকে নিরুত্তর দেখে চয়ন আবার জিজ্ঞাসা করল, ‘তবে কি তুমি বিয়েটাই করতে চাও না?’
-- বিয়ে করব না কেন ? পছন্দসই পাত্র পেলে নিশ্চয়ই করব।
-- তোমার পছন্দের ক্রাইটেরিয়াটা একটু শুনি?
-- ছেলেকে অনাথ হতে হবে। আমার মতো ব্যাকগ্রাউন্ড হলেও অবশ্য চলবে।
-- কিন্তু কোনও পরিবার যদি উদার হয়, তোমাকে সাগ্রহে মানিয়ে নিতে চায়, তাতে তো তোমার আপত্তি থাকার কারণ থাকতে পারে না।
-- চয়নদা, উদারতা হল শিক্ষিত বা বিচক্ষণ মানুষের শালীনতার একটা মুখোস। কোনও ক্রাইসিস এলে বা কোনও দুর্বল মুহূর্ত পেলে এই মুখোসটা সরে যায় আর সংস্কারগুলো ঠিক বেরিয়ে পড়ে। হাজার বছর ধরে যা রক্তে মিশে গেছে, তা কী একদিনে যায়?
-- কিন্তু আমি তো জেনেশুনে, বিচার বিবেচনা করেই তোমাকে প্রস্তাব দিয়েছি।
-- এটা আপনার মহত্ব। যারা আমার ইতিহাস জানে বলে আমায় অন্যভাবে ব্যবহার করতে চেয়েছে, আপনি তেমন নন। আপনি বিয়ে করে আমায় স্ত্রীর মর্যাদা দিতে চেয়েছেন-- এইজন্য আমি নিশ্চয়ই কৃতজ্ঞ। কিন্তু ভেবে দেখুন, এখানে আপনার আমার প্রতি দয়া বা মোহ কাজ করেছে, বিচার-বিবেচনা নয়।
-- একথা বলছ কেন রুনু?
-- আজ আপনার বাবা-মা আমাকে মেনে নিতে চেয়েছেন শুধু তাঁরা আপনাকে হারাতে চান না বলে। আপনি ভালো চাকরি করেন, ওঁরা না মানলে আপনি হয়তো বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন, সেই ভয় কি ওঁদের নেই ?
-- তুমি কি বলতে চাও পৃথিবীতে ভালো মানুষ নেই? কথা কেড়ে নিয়ে বলল চয়ন।
-- থাকবে না কেন? কিন্তু বলুন তো, পৃথিবীতে কোন বাবা-মা স্বেচ্ছায় চায় তাদের ছেলে, বউ এর জন্য সব আত্মীয় স্বজনদের কাছে ছোট হয়ে যাক, নিজের অফিসের লোকজনদের কাছে বউ নিয়ে যেতে লজ্জা পাক?
-- এতে ছোট হওয়া বা লজ্জা পাওয়ার প্রশ্ন উঠছে কেন রুনু? তাঁদের ছেলে তো ছোট হয়ে যাওয়ার মতো কোনও কাজ করছে না!
-- নিশ্চয়ই করছে৷ সমাজ যে মেয়েকে উঁচু জায়গা দেয়নি, তাকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া তো কেউ মেনে নেবে না।
-- তুমি নিজেকে কেন তোমার মায়ের পরিচয় দিয়ে দেখতে চাও রুনু? তোমার মায়ের কৃতকর্মের দায় কি তোমার?
-- ওই মায়ের পেটেই যখন জন্মেছি, দায় তো নিতেই হবে চয়নদা।
-- তবে তোমার এত লড়াই, এত সংগ্রাম, সবই তবে বৃথা?
-- আইনি লড়াই দিয়ে হয়তো অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়, সংসারে প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায় না। তাছাড়া এতদিন যা করেছি, তা নিজের স্বার্থে করেছি, অন্যায়ের প্রতিবাদ হিসাবে করেছি। কিন্তু আমার জন্য আপনার জীবন নষ্ট হয়ে যাক, এ আমি কিছুতেই হতে দিতে পারি না।
-- জীবন নষ্ট হওয়ার কথা বলছ কেন? তোমায় পেলে আমার জীবন সম্পূর্ণ হবে। কোনও মোহ বা দয়া নয় রুনু, আমি সত্যিই তোমাকে শ্রদ্ধা করি৷ ভালোবাসি
-- ভাবুন তো, আমাদের ছেলেমেয়ে হলে যদি এসব কথা জানাজানি হয়ে যায়? আমার মতো যদি তাদেরও স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেয়, তখন এই ভালোবাসা থাকবে তো? তখন আপনার বাবা-মা এসে দাঁড়াবেন আপনার পাশে?
-- এসব কথা উঠছে কেন? আর যদি সত্যি সেরকম কিছু হয়, আমি বাবা-মাকেও ত্যাগ করতে দ্বিধা বোধ করব না।
-- আজ আমার জন্য বাবা-মাকে ছাড়তে চাইছেন, এরপর তো অন্য কারোর জন্য আমাকেও ছেড়ে যেতে পারেন! মুচকি হাসল রুনু।
-- ছিঃ, তুমি আমাকে এই চোখে দেখ ? অভিমান ঝরে পড়ল চয়নের গলায়।
-- ঠিক আছে। আর রাগ করতে হবে না আপনাকে। একটু মজা করলাম।
-- এর মধ্যেও তোমার মজা আসছে? আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি রুনু, সুখে-দুঃখে কোনও দিন তোমাকে ছেড়ে যাব না আমি।
-- চয়নদা, আজ আপনার এমনটা মনে হচ্ছে। যখন দেখবেন বয়স হচ্ছে, কোনও কারণে আমার সাথে আপনার বনছে না, তখন কিন্তু আফসোস করবেন, অভিসম্পাত দেবেন নিজেকে। সেইদিনটা কিন্তু আমি সইতে পারব না।
-- কেন মিছিমিছি ভবিষ্যতের অহেতুক চিন্তা করে নিজেকে বঞ্চিত করতে চাইছ রুনু? আমাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করলেই কি তুমি সুখী হবে? তোমার ছেলেমেয়েদের স্কুলে তখন কোনও সমস্যা হবে না?
চুপ করে রইল রুনু। খানিকক্ষণ বাদে বলল, ‘সুলেখা এসে গেছে৷ গাড়ি থামান।‘
-- আরও একবার কি ভালো করে ভেবে দেখবে রুনু?
-- ভাবা আমার হয়ে গেছে চয়নদা। আপনি দয়া করে আমাকে ভুলে যান৷
চয়ন আজ আর ওকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য জেদাজেদি করল না। নতুন করে প্রত্যাখ্যাত হতে আর ইচ্ছে করল না তার। বাড়ির দিকে গাড়ি ঘুরিয়ে নিল সে৷



সন্ধেবেলায় অন্যমনস্কভাবে চা খেতে খেতে রুনুর কথাই ভাবছিল চয়ন৷। রুনু “সংহিতা” নামের একটি এন.জি.ওতে কাজ করে৷ রেড লাইট এরিয়ায় যে সব নাবালিকাদের বেচে দেয় দালালেরা, “সংহিতা” সেইসব মেয়েদের নিয়েই কাজ করে৷ তাদের রিহ্যাবিলিটেশানের সাথে সাথে একটা স্কুলও চালায় তারা৷ রুনু ওই স্কুলে পড়ানোর পাশাপাশি শনি-রবিবার ওখানে গিয়ে মেয়েদের সাথে সময় কাটায়, তাদের সাহস দেয়। অনেক পেশার মানুষ যুক্ত আছেন এই স্বেচ্ছসেবী সংগঠনটিতে। চয়নও আসে এখানে প্রতি রবিবার সকালবেলায়। ওকে চুপচাপ দেখে ওর মা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী রে, ওকে বলেছিলি কথাটা?’
-- হ্যাঁ।
-- কী বলল ?
-- না বলে দিল।
-- কেন ?
-- জানি না। বোধহয় আমাকে পছন্দ নয়।
-- না, না। তা আবার হয় নাকি ?
-- কেন, তোমার ছেলেকে সবার পছন্দ হবে, তার কি কোনও মানে আছে?
-- না, তা নয়। আমার মনে হয় অন্য কোনও কারণ আছে৷ তোর মুখ থেকে যা শুনি তাতে মনে হয় ও তোকে পছন্দ করে।
-- আমারও তো তাই মনে হত।
-- আচ্ছা, ওর মায়ের সাথে একবার কথা বলব?
-- কী বলবে?
-- এই – মেয়ের বিয়েটিয়ে নিয়ে কিছু ভাবছেন কি না !
-- আমার কাছে ওর মায়ের ফোন নাম্বার নেই।
-- তাহলে কীভাবে বলব ? আমি কিন্তু ওসব পাড়ায় যেতে পারব না।
-- ওসব পাড়া মানে? রুনু যবে থেকে একটু আধটু রোজগার করতে পেরেছে, ওর মাকে আর ওসব কাজ করতে দেয়নি। নিয়ে এসে নিজের কাছে রেখেছে।
-- তাহলে ওর বাড়ি নিয়ে চল।
-- বাড়িটা ঠিক আমিও জানি না। তবে সুলেখায় নেমে রিক্সা করে যায় দেখি।
-- ওদের কি ভাড়াবাড়ি?
-- হ্যাঁ। বেশি টাকা তো আর মাইনে পায় না।
-- এস.এস.সিটা তো দিতে পারে! বললি তো বি.এ পাশ করেছে৷
-- রাজি করানো যায়নি৷ বললেই বলে ওকে নাকি নেবে না।
-- নেবে না কেন ?
-- ওই, বাবার নাম জিজ্ঞাসা করলে ও যখন মায়ের নাম বলবে, তখন নাকি আর সিলেক্ট করবে না। শিক্ষিকাদের ইমেজ ভালো না হলে কি অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাবে? তাছাড়া “সংহিতা”র প্রতি ওর একটা অন্য দুর্বলতাও আছে। ও এটা ছাড়তে চায় না৷
-- কেন? দুর্বলতা কেন ?
-- আসলে ওর মা তো স্বেচ্ছায় এই লাইনে আসেননি৷। ওরা খুব গরিব ছিল। কলকাতায় বাবুর বাড়িতে কাজে লাগানোর নাম করে ওঁর স্বামী এসে বেচে দিয়ে গিয়েছিল সোনাগাছিতে। রুনু হওয়ার পর ওর মা চাইতেন মেয়ে যেন কোনওভাবে এই পেশায় না আসে। ওঁদের ছেলেমেয়েদের পড়ার জন্য যে স্কুল আছে, প্রথমে সেখানেই ভর্তি করেছিলেন মেয়েকে। ও একটু বড় হতেই যখন বুঝলেন এই পরিবেশে মেয়ের লেখাপড়া হবে না, তখন খোঁজ করলেন কোনও বোর্ডিং স্কুলের। সমাজের উঁচু স্তরের বহু মানুষ আসত ওঁর কাছে। তাদের কাউকে একজনকে ধরে একটা নামী স্কুলে ভর্তি করে দিলেন মেয়েকে। কিন্তু সত্য গোপন রইল না৷ অভিভাবকেরা ডেপুটেশন দিল, এই মেয়ে স্কুলে পড়লে তারা নাকি তাদের মেয়েকে ওখানে পড়াবে না৷ অগত্যা হেড মিস্ট্রেস ওকে বার করে দিয়েছিলেন স্কুল থেকে।
-- তবে ওর লেখাপড়া হল কী করে?
-- এইজন্যই তো ওর প্রতি শ্রদ্ধা হয় মা। ওইটুকু মেয়ে তখন ক্লাশ নাইনে পড়ে৷ চিঠি লিখল মহিলা কমিশনে, মানবাধিকারে। শেষ পর্যন্ত হেড মিস্ট্রেস ওর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য হলেন৷ তবে রুনু ওই স্কুলে আর পড়েনি। ও বলল, যেখানে অন্যায়ের কাছে প্রতিষ্ঠান মাথা নোয়ায়, সেখানে সে পড়বে না৷ তারপর কোনওভাবে যোগাযোগ হল ‘সংহিতা'র সাথে৷। ওখানেই ও টুয়েলভ পর্যন্ত পড়েছে। তারপর টিউশান আর ওখানেই কিছু কাজটাজ করে ও যে টাকা পেত, তাতে করে গড়িয়ার দিকে একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে সে তার মা'কে নিয়ে আসে।
-- বাবার নাম জিজ্ঞাসা করলে ও মায়ের নাম বলে কেন? মিছিমিছি মানুষের কৌতূহল বাড়ানো!
-- ও মনে করে, যে জীবনে বাবার কোনও ভূমিকাই নেই, সেখানে নিছক ফর্ম ফিলাপের জন্য বাবার নাম বয়ে বেড়াবার কী প্রয়োজন?
-- সংসারে থাকতে হলে অনেক কিছুর সাথে আপোষ করতে পারাও এক ধরনের শিক্ষা।
-- এখানে ওর বক্তব্যটা কৌশলগত নয় মা, নীতিগত।
-- আচ্ছা, রুনুর মা যখন কলকাতায় আসেন, রুনু কি তখন পেটে ?
-- তা জানি না।
-- একটু জিজ্ঞাসা করে দেখিস তো।
-- কেন? এসব জানার কী প্রয়োজন?
-- না, তাহলে ওর বংশ পরিচয়টা অন্তত জানা যেত।
-- ছিঃ মা! যে মানুষ নিজের বিয়ে করে স্ত্রীকে বেচে দেয়, সে কি একজন অচেনা লালসা কাতর মানুষের থেকে তোমার কাছে বেশি আকাঙ্ক্ষিত? বেশি মর্যাদার?
সংস্কার কি এভাবেই মাথা চাড়া দেয়? রুনু কি একথাই বোঝাতে চেয়েছিল চয়নকে? মনে মনে লজ্জা পেল সে।



অনেক দিন আর দেখা হয় না রুনুর সাথে। ইদানীং রোববার আর “সংহিতা'য় আসছে না সে। বোধহয়, ইচ্ছে করেই চয়নকে এড়িয়ে যেতে চাইছে ও। প্রথম মাসখানেক খানিকটা অভিমানেই ফোন করার চেষ্টাও করেনি চয়ন। কিন্তু ইদানীং ওকে অনেক দিন না দেখার কষ্ট এমন মাথা চাড়া দিয়েছে তার, আর অভিমান আঁকড়ে বসে থাকতে পারল না সে। বহুবার ফোন করার চেষ্টা করল ওর মোবাইলে, কিন্তু সব সময়েই ‘সুইচ অফ’। রুনু কী তবে নাম্বারটা বদলে ফেলেছে? অবশেষে ‘সংহিতা’ থেকে ওর সাথে যোগাযোগ করার একটা নাম্বার পেল সে। ডায়াল করতে ওপারে এক পুরুষ কণ্ঠ।
-- আচ্ছা রুনুকে কি একটু পাওয়া যাবে ?
-- আপনি কে বলছেন ?
-- আমার নাম চয়ন। চয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়
-- উনি তো এই মুহূর্তে এখানে নেই। কী দরকার বলুন। বলে দেব।
-- নেই মানে? উনি কি কলকাতার বাইরে গেছেন নাকি?
-- আরে না, না৷ আসলে আমি এখন দোকানে আছি তো। ও বাড়িতে আছে। আমি বাড়ি ফিরেই ওকে বলে দেব।
-- কিছু যদি মনে না করেন, আপনি কে বলছেন একটু বলবেন দয়া করে ?
-- আমার নাম সন্দীপ। আমি রুনুর হাজব্যান্ড।
মাথায় যেন বাজ পড়ল চয়নের। কোনও রকমে নিজেকে সামলে বলল, ‘সে কী ! রুনুর বিয়ে হয়ে গেছে? কবে হল?’
-- এই মাস খানেক হবে৷
-- কই আমাদের তো কিছু বলেনি!
-- আসলে হঠাৎ করে হয়েছে তো। রেজিস্ট্রি ম্যারেজ। কাউকেই নেমন্তন্ন করা হয়নি৷ সেজন্যই বোধহয় আপনারা জানেন না। কিন্তু আপনার কথা তো আমি রুনুর মুখে কখনও শুনিনি!
-- সংহিতা’য় আমি ওর সাথে কাজ করি।
-- ঠিক আছে, আমি ওকে আপনার কথা বলব। আপনি যদি সকাল ন’টা নাগাদ ফোন করেন, তবে ওর সাথে কথা হতে পারবে।
-- রাতে ফোন করলে হয় না? আসলে সকালে অফিস যাওয়ার তাড়া থাকে তো!
-- আমার বাড়ি ফিরতে তো রাত একটা-দেড়টা হয়!
-- এত রাত পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে?
-- হ্যাঁ। খদ্দের থাকে।
-- আপনার দোকানটা কোথায়? যাতায়াতের পথে তবে আপনার সাথে দেখাও হতে পারে কোনও দিন৷
-- তা কখনও হবে না দাদা। ভদ্রলোকেরা সচরাচর এসব পাড়ায় আসে না।
-- তাও কোথায় শুনি?
-- সোনাগাছি। এখানে দীপুর দোকান বললেই দেখিয়ে দেবে সবাই।
-- দেখুন, অহেতুক কৌতুহল। তবু যদি কিছু মনে না করেন -- আপনাদের কি প্রেমের বিয়ে?
-- আরে না, না।
-- তবে এত তাড়াতাড়ি যোগাযোগ?
-- আমি ওকে ছোটবেলা থেকেই চিনতাম। বেলামাসির মেয়ে তো! আমার মা মাঝে মাঝেই মাসির কাছে যেত। হাল্কা যোগাযোগ ছিলই। এবার যখন বেলামাসি প্রস্তাব দিলেন, আমিও রাজি হয়ে গেলাম।
কোনও রকমে ফোনটা রেখে একটা চেয়ারে বসে পড়ল চয়ন। কান মাথা ঝাঁ ঝা করতে লাগল তার৷। কেন সে এত জেদাজেদি করতে গেল রুনুকে ! নাহলে হয়তো এমন হঠকারি সিদ্ধান্ত নিতে হত না তাকে। এখন রুনুকে ছাড়া কী করে দিন কাটাবে সে ? বুকের মধ্যে কেমন যেন হাহাকার করে উঠল তার।

12/02/2024

একদিন কেউ এসে জেনেছিল নাম
আজ তার স্মৃতি নেই
বকুলের ছায়া মেখে
স্থানু হয়ে যায় রোদ
উঁকি দেয় বেহুলা ভাসান

© পুলক কান্তি কর

নতুন একটি গান আপনাদের জন্য।
05/02/2024

নতুন একটি গান আপনাদের জন্য।

এই হাতখানি তোমার hatkhani tomar Bengali Song Pulak Kanti Kar Voice, Lyrics & Composition: Pulak Kanti Kar Recording, Mix Master: Pulak Kanti...

03/02/2024

আজকে আবার অনেক পথের দূর
চলা মানেই অসংখ্য ভাঙচুর

© পুলককান্তি কর

01/02/2024

প্রৌঢ়বেলা
পুলককান্তি কর

শেষ পেশেন্টটা দেখে উঠতে উঠতে তিনটে বেজে গেল গিরীশ ব্যানার্জীর। পাড়ায় অবশ্য গিরীশ ডাক্তার নামেই পরিচিতি তাঁর। বাড়ির লাগোয়াই চেম্বার। সকাল সন্ধে দুবেলাই সাতটা থেকে শুরুটা যদিও নির্দিষ্ট, শেষ হওয়াটা রোগীদের হাতে। রবিবার শুধু সকালেই রোগী দেখেন। দূর দূরান্ত থেকে রোগীরা আসে, তাই বেলা চারটের আগে ভাত খাওয়া হয়ে ওঠে না তাঁর।
অনেকক্ষণ থেকেই পেটের উপরের দিকটায় চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছিলেন তিনি৷ গ্যাসট্রাইটিসটা বোধহয় এবার ধরেই গেল। দুটো বিস্কিট মুখে দেবেন কি না ভাবছিলেন; বগাদার তাড়ায় তোয়ালে পাজামা নিয়ে ঢুকলেন চানঘরে। তড়িঘড়ি স্নান শেষ করে গা মুছতে মুছতেই হাঁক পাড়লেন, বগাদা, টেবিলে খাবার দাও।
-- চান করতে করতেই খাবি নাকি ? আগে তো বেরো। আমার সব রেডি আছে।

বগাদার এই এক দোষ। টেবিলে বসলে তবেই খাবার গরম করবে৷ এই খিদের মুখে মানুষের তর সয়? বললেও শোনে না। একটু বিরক্তি নিয়েই বাইরে এসে গিরীশ দেখলেন, আজ যেন সূর্য পশ্চিম দিকে উঠেছে। খাবারদাবার টেবিলেই সাজানো। পাশে দাঁড়িয়ে গজগজ করছে বগাদা। চেয়ার টেনে বসতে না বসতেই বলল, এত রোগী যখন, মাঝখানে উঠে এসে তো একটু খেয়ে যেতে পারিস।
-- চানটান না করে খেতে ইচ্ছে করে না বুঝলে।
-- তা চান করেই খাবি। না টা করেছে কে ?
-- রোগীরা বসে থাকবে যে !
-- থাকলে থাকবে! ডাক্তার বলে কি আর মানুষ না? যারা বাকি থাকবে তাদের বিকেলে দেখবি।
-- কত দূর দূর থেকে তারা আসে বলতো। সেই নামখানা, হিঞ্জলগঞ্জ, সাহেবখালি থেকে। বেশি বিকেল হলে ফেরার নৌকা পাবে না যে !
-- আর তুই যে মাঝে মাঝেই পেটের ব্যথা বলিস, তার কী হবে?
-- ও কিছু হবে না।
-- হ্যা, তুই তো সবজান্তা! ডাক্তার কিনা! আমি মুখ্যুসুখ্যু মানুষ। তবে বিকেল তিনটে চারটে পর্যন্ত আর আমি হাঁড়ি আগলাতে পারব না। তুই অন্য ব্যবস্থ করিস৷ বগাদা শাসিয়ে গেল।

বগাদা এই বাড়িতে অন্তত পঞ্চাশ বছর ধরে আছে৷ গিরীশের বাবার আমল থেকে। পুরো নাম সবাই ভুলে গেছে। বগলাচরণটরণ ছিল বোধহয়। সেখান থেকেই শর্টকার্ট হয়ে বগা। পাড়ার ছেলে-ছোকরা থেকে বাজার-হাটের দোকানদার, সবার কাছেই সে বগাদা। গিরীশের থেকে অন্তত বছর দশেকের বড়। সুতরাং শাসনের অধিকার তার আছে৷
-- হ্যাঁগো বগাদা, চিংড়ি দিয়ে এত ভালো কচুরশাক রান্না তুমি শিখলে কবে গো?
-- কেন আমার রান্নাবান্নায় তোর আজকাল অরুচি ধরেছে নাকি?
-- আরে না, না। তা নয়। আসলে কচু, লতিতে তোমার খুব ভক্তি কিনা!
-- ওটা ওপরের থেকে এসেছে। বগাদা নৈর্ব্যক্তিক ভঙ্গিতে বলল।
-- তাহলে বোঝো, লক্ষ্মীও তোমার চেয়ে কত ভালো রাঁধে!
-- না, না। এটা ওসব লক্ষ্মীফক্ষ্মীর কাজ নয়। বৌদি রেঁধেছে।
-- তুমি কী করে জানলে ?
-- ওই সকালবেলা ওপরে গিয়েছিলাম। তুই যে সেন্টটা বৌদিকে দিতে বলে গেছিলি, সেটা নিয়ে। গিয়ে দেখলাম বৌদিই রান্না করছে৷

গিরীশের মনে পড়ল, দিন চারেক আগে এক ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ একটা লেডিজ পারফিউম গিফট করেছিল। লাভেণ্ডারের গন্ধ। নমিতার এই গন্ধটা খুব প্রিয় ছিল। ওদের বিয়ের তত্ত্ব কেনাকাটার সময় নমিতা পাউডার, পারফিউম, সাবান -- সব ক’টাই কিনেছিল লাভেণ্ডারের গন্ধের। আজকাল ওষুধ কোম্পানিগুলোও হয়েছে সেইরকম। এদের স্ট্র্যাটেজিই হল ডাক্তারের বদলে তার পরিবারকে খুশি করো। বউএর জন্য কাপ-ডিশ দাও। কুকিং এপ্লায়েন্সেস দাও। বাচ্চাদের খেলনা দাও। দোলের সময় রঙ-পিচকারি দাও। পরিবার খুশ তো ডাক্তারও খুশ। যেন এরা খুশি থাকলেই ডাক্তার মনের আনন্দে ওই কোম্পানির ওষুধগুলোই কেবল লিখবে। হঠাৎ একটু সিরিয়াস গলায় গিরীশ বলল, কিন্তু আজ রোববারে চিংড়ি কেন? তুই আজ উপরের জন্য বাজার করে দিসনি?
-- করে দিয়েছি তো! তবে বৌদি আজ কয়েক মাস যাবৎ মাংস খাচ্ছে না।
-- কেন ?
-- আজকাল নাকি আর ভালো লাগে না। তাছাড়া কিছুদিন নাকি অর্শের সমস্যাটা আবার বেড়েছে।
-- কই, এতদিন আমায় কিছু বলোনি তো?
-- জানতে চাইলেই বলতাম।

গিরীশ এই বাঁকা কথার পাশ দিয়েই গেলেন না। বরং চিন্তান্বিত হয়ে বললেন, ‘তা মাছটাছ ঠিক মত খায় তো? ওটা কিন্তু নিয়ম করে এনে দিও। দুধ সহ্য হয় না৷ মাছ, মাংস সব বন্ধ হয়ে গেলে বাতে ধরবে যে!’
-- বাতও তো ধরেছে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে ক’দিন, দেখতে পাস না?

চুপ করে রইল গিরীশ। সত্যি তো, নমিতাকে অনেকদিন চোখেই দেখেনি সে। হাতমুখ ধুয়ে এবার সে একটা সিগারেট ধরাল। বগাকে বিশটা টাকা দিয়ে বলল, খাওয়াদাওয়া হলে চারটে পান নিয়ে এসো। বৌদির খয়ের ছাড়া মিঠাপাতা আলাদা কাগজে মুড়ে এনো। গতবারের মত আমার জর্দা দেওয়া পানটা ভুল করে খাইও না যেন !



পানটা মুখে পুরে খাটে খানেকক্ষণ অলস ভাবে সুয়ে রইলেন নমিতা। মাথার চুলে দু-একটা রুপোলি রেখা উঁকি দিলেও চামড়া এখনো টানটান। হাতে একটা পত্রিকা উল্টাতে উল্টাতে আওয়াজ পেলেন, লক্ষ্মীর বাসন মাজা শেষ হল। এইরে! এইবার তেতো মত কী একটা গুলি গেলাতে আসবে সে৷ বলে নাকি এটা খেলে খাবার সব হজম হয়ে যাবে, গ্যাস-অম্বলও নাকি আর হবে না। নিজে ডাক্তার হলেও তাঁর চিকিৎসার ভারটা লক্ষ্মীই জোর করে নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছে। নানান টোটকা-টুটকি জানা আছে তার। নমিতা বাধা দেন না। লক্ষ্মীকে দেখতে পেয়ে বললেন, হ্যাঁ রে, তেতোটা গেলাবার পরে পানটা দিতে পারতিস না? দিলি তো পানের বারোটা বাজিয়ে !
-- ও ঠিক আছে। আমার পানটা খেয়ো গিয়ে না হয়।
-- কেন, তুই খাবি না?
-- না গো। আমার দাঁতের গোড়াটা কাল থেকেই ফুলেছে।
-- কোনও ওষুধ খাসনি?
-- সকাল থেকে পেয়ারা পাতা চিবুচ্ছি তো!
-- ওতে হবে, নাকি একটা ওষুধ দেব?
-- ও তুমি চিন্তা কোরো না বৌদি। ব্যথা না কমলে আমি নীচে গিয়ে দাদার থেকে ওষুধ নিয়ে আসবো।
-- কেন, আমার ওষুধে বুঝি তোর ভরসা নেই ?
-- তুমি তো মেয়েছেলেদের ডাক্তার ! তোমার থেকে দাঁতের ওষুধ নেব কেন?
-- তোদের দাদা বুঝি দাঁতের ডাক্তার?
-- না গো বৌদি, অতশত জানিনে। তবে আমাদের গাঁয়ের সব লোকেরা বলাবলি করে গিরীশ ডাক্তার সাক্ষাৎ ধন্বন্তরী। সব রোগেরই ওষুধ জানে সে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন নমিতা। সব বন্ধুবান্ধবের মধ্যে ডাক্তারিতে সত্যিকারের চৌখস ছিল গিরীশ। বিশেষ করে সার্জারিতে। ইন্টার্নশিপ করার সময়েই সিনিয়র ডাক্তারদের পটিয়েপাটিয়ে পেট খুলে ফেলতে পারত সে। বন্ধুরা বলত সপ্তপদীর কৃষ্ণেন্দু। এমন স্কলার ছেলে, অথচ কোনও ভাবেই এম.ডি, এম.এস এর পরীক্ষায় বসানো গেল না তাকে। বললেই বলত, কেন, পোস্ট-গ্র‍্যাজুয়েশন করলে কি ডাক্তারের আলাদা দুটো হাত-পা গজায় ? ভীষণ গোঁয়ার-গোবিন্দ! অজান্তেই ভ্রূ কুঁচকে গেল নমিতার।
-- বৌদি, তোমার ফোন। লক্ষ্মী বলল।
-- কোত্থেকে ?
-- হাসপাতালের। গৌরী সিস্টারের গলা মনে হল।
-- কী বলল, যেতে হবে?
-- হ্যাঁ, খুব জরুরি।
নমিতা হাসপাতালের কাছেই থাকেন বলে বাইরের ডাক্তারেরা রবিবারের “অন কল” ওঁর ঘাড়ে ফেলে দিয়ে যে যার বাড়ি চলে যান। নমিতাও আপত্তি করেন না। তাঁর কাছে রবিবার যা, সোমবারও তাই। প্রাইভেট প্রাকটিশ তিনি ছেড়ে দিয়েছেন প্রায় বছর পনেরো। মহিলা গাইনোকোলজিস্টের চাহিদা এই দেশে সব সময়েই। তবু আজকাল এই পেশা তাঁকে আর টানে না৷ অথচ একসময় তাঁরও কত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল। বিয়ের পর চাকরি সামলে, রাত জেগে পড়াশুনো করে তিনি এম.ডি তে চান্স পেয়েছেন, পাশও করেছেন৷ গিরীশ তখন চাকরি করতেন আসানসোলের কাছে, এক কলিয়ারিতে। নমিতার পোষ্টিং ছিল অনেক দূরে। কোচবিহারের এক মফস্বল হাসপাতালে। মাসে হয়তো একদিন দেখা হত তখন৷ কলকাতায় এম.ডি পড়তে এসে যদিও কিছুটা সময় পেয়েছিল তাঁদের দাম্পত্য। সপ্তাহে দু-তিনবার আসানসোলে আসতেন নমিতা। গিরীশের সেখানে মস্ত একটা কোয়ার্টার ছিল। অবশ্য এত পেশেন্ট আর নাইটকল অ্যাটেণ্ড করতে হত তাঁকে যে দু'দণ্ড কথা বলার ফুরসত হত না কোনও কোনও বার।
দ্রুত শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে করতে আনমনে নমিতার চোখ গেল টেবিলে রাখা পারফিউমটার দিকে। ল্যাভেণ্ডার! আঁচলের ফাঁকে আলতো করে একটু স্প্রে করলেন তিনি৷ চেনা গন্ধ। আগের মত কি? কী জানি!
হাসপাতাল স্কুটিতে মিনিট তিনেকের পথ৷ তাঁকে দেখেই গৌরী সিস্টার দৌড়ে এলেন। ম্যাডাম পেশেন্ট ও. টি তে আছে৷
-- কী হয়েছে ?
-- মিসক্যারেজ। ভীষণ ব্লিডিং হচ্ছে।
-- কোন পেশেন্ট?
-- ওই যে মেয়েটি আপনাকে দেখায়। সেবন্তী চট্টরাজ।
-- আবার মিসক্যারেজ হয়েছে? এবার নিয়ে বোধহয় চারবার হল। একটু বিষণ্ণ দেখাল তাঁকে। বললেন, আ্যানাস্থেসিস্টকে খবর দেওয়া হয়েছে ?
-- উনি ছুটিতে আছেন। তবে ডাক্তার ঘোষ ইমার্জেন্সিতে ছিলেন। উনি বললেন ও. টি করতে হবে। দরকার হলে ওঁকে ডাকতে।
নমিতা দ্রুত ও. টি তে গিয়ে পোষাক বদলে নিলেন। মিনিট পনেরোর কাজ। তবু এসব আর একটুও ভালো লাগে না তাঁর। বড় ক্লান্ত লাগে। মেয়েটি একটি কলসেন্টারে কাজ করে৷ স্বামী বেসরকারি চাকুরে। ভালো রোজগার। নমিতা বহুবার বলেছেন প্রেগনেন্সি এলেই বিশ্রামে থাকতে। এই সময় বেশি পরিশ্রম, রাত জাগা ঠিক নয়। কিন্তু সবাই কেরিয়ার নিয়ে ব্যস্ত। দ্রুত প্রেসক্রিপশন লিখে বাইরে বেরিয়ে এলেন তিনি। দেখলেন, মেয়েটির স্বামী উদভ্রান্তের মত দাঁড়িয়ে। তাঁরই জন্য অপেক্ষা করছে৷ ‘’- এই যে মিস্টার চট্টরাজ, পেশেন্ট ঠিক আছে৷ ওষুধপত্র সব লিখে দিয়েছি, কয়েকদিন একটু রেস্ট নিতে বলবেন।‘’
-- কিন্তু ও তো বেশি দিন ছুটি পাবে না।
-- মানে, শরীরের থেকেও কি চাকরিটা বেশি জরুরি?
-- সেটা তো আমিও বলি। কিন্তু শুনলে তো!
-- শুনুন, এবার যখন প্ল্যান করবেন, ইউরিন পজিটিভ হলেই হাসপাতালে এনে ভর্তি করে দেবেন। ন'মাস এখানেই রাখব। দেখি কী করে এবার নষ্ট হয়! যেন অচেনা কোনও শত্রুর দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন তিনি৷
-- ম্যাডাম, সেবন্তীর চাকরি করার কোনও দরকারই নেই। তবু আজকাল নারী স্বাধীনতা-ফাধীনতার ব্যাপার আছে কিনা! বেশি বলতে গেলে অশান্তি। বেশ ক্লিষ্ট শোনাল ভদ্রলোকের গলা।
-- শুনুন, আজ বয়স আছে, উনি বুঝছেন না। যখন বুঝবেন, তখন কিন্তু অনেক দেরি হয়ে যাবে। গলায় উষ্মা ছড়িয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালেন নমিতা। মাথাটা বেশ ধরে গেছে বহুক্ষণ। ঘরে ঢুকেই লক্ষ্মীকে বললেন, দ্যাখ তো দাদার ফ্রিজে সোডা আছে কি না?
-- কেন, এখন আবার ওসব ছাইপাঁশ গিলতে বসবে বুঝি ?
-- বড্ড মাথা ধরেছে রে!
-- তা মাথা ধরেছে তো একটু চা করে দিই না! চা খেয়ে বরং একটু শুয়ে পড়ো, আমি মাথায় অমৃতাঞ্জন মালিশ করে দিই।
-- তুই বরং নীচে দ্যাখ গে দাদা চা খাবে কি না। বগাদা আজ বিকেলে কোথায় যাবে বলছিল। জলদি জলদি যা, সোডাটা নিয়ে আয়।
লক্ষ্মী গজগজ করতে করতে নীচে গেল। দেখল দাদা ঘুমোচ্ছে। ডাকবে কি ডাকবে না ভাবতে ভাবতে ফ্রিজ খুলে সোডা নিল। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে যাবে, এমন সময় দাদা ডাকল, কী রে লক্ষ্মী, কী ব্যাপার?
-- বৌদি একটু সোডা চাইল।
-- তা আমাকেও একটু দিয়ে যা।
-- কেন, তোমারও মাথা ধরেছে নাকি?
-- তাতে তোর কী দরকার? ধমকে উঠলেন গিরীশ। নে, একটা গ্লাস আর বরফ বের করে রেখে যা এখানে। আর শোন, উপরে গিয়ে কিছু বলিস না যেন!
-- জিগ্যেস করলে কী বলব?
-- বলবি, জানি না।
-- তোমার জন্য মিছে কথা বলব কেন?
-- “জানি না” আবার মিছে কথা হল কবে? তুই জানিস আমি সোডা দিয়ে কী করব?
-- সে আবার জানি না !
-- যা, বেরো এখান থেকে। তোর যা ইচ্ছা হয়, বল গিয়ে। বলেই হুইস্কির বোতলটা কাবার্ড থেকে বের করে আনলেন গিরীশ। ওঁর এক বন্ধু লন্ডনে থাকেন৷ মাস খানেক আগে এখানে বেড়াতে এসে দিয়ে গেছেন ক্রেট খানেক। ব্গাদাকে দিয়ে খান কয়েক বোতল তখনই উপরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। নমিতা নিশ্চয়ই সেগুলো দিয়েই চালাচ্ছে। কে জানে! হাঙ্কা করে রবীন্দ্রসঙ্গীত চালিয়ে দিলেন গিরীশ।



মাঝ রাত্তিরে ঘুম ভেঙে গেল বগার। ওঘরে যেন কেমন একটা ছটফটানির শব্দ। আলোটা জ্বালিয়ে সে দেখল, খাটের ওপর কেমন যেন আছাড় খেয়ে খেয়ে পড়ছেন গিরীশ। মাঝে মাঝে পেটে বালিশ চাপা দিয়ে স্থির হয়ে বসছেন কিছুক্ষণ।
-- কী রে বুড়ো, কী হয়েছে ?
-- পেটটা বড় ব্যথা করছে বগাদা।
-- ওষুধ খেয়েছিস ?
-- খেলাম কয়েকটা। তবে তাতে কমছে না৷ মনে হচ্ছে ইঞ্জেকশন লাগবে। তুমি বরং একবার ডাক্তার সরকারকে কল দাও।
-- তার চেয়ে একবার বৌদিকে ডাকি না ?
-না, না। ও ঘুমোক। তুমি ডাক্তার সরকারকে ফোন কর।
মিনিট পাঁচেক চেষ্টা করল বগা। রিং হচ্ছে, কেউ তুলছে না। অধীর হয়ে বলল, কেউ তুলছে না যে, নেই নাকি ?
-- তাহলে একবার ডাক্তার চৌধুরীকে দেখো।
বগা আর কালক্ষেপ না করে উপরে চলল নমিতাকে ডাকতে।
-- বৌদি। ও বৌদি ! লক্ষ্মী, ও লক্ষ্মী !
-- কী হয়েছে বগাদা? নমিতা ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।
-- এই দ্যাখো না, বুড়ো কেমন পেটের ব্যথায় ছটফট করছে৷
-- ওষুধপত্র খেয়েছে কিছু?
-- বলছে তো খেয়েছে। সরকার ডাক্তারকে ফোন করতে বলল। তা করলাম, কিন্তু কেউ ধরল না।
-- আচ্ছা চল তো দেখি। নীচে এসে নমিতা দেখলেন, চারদিকে বমি। খাটের ঠিক মাঝখানটায় গিরীশ বসে। মাঝে মাঝেই কাতরাচ্ছেন। বললেন, অনেক দিনই তো পেটে ব্যথা শুনি, আল্ট্রা-সোনোগ্রাফি করেছ?
-- না৷
-- না কেন?
-- প্রয়োজন মনে করিনি তাই!
-- আবার ঘাড় ত্যাড়ামি? এরপরও বসে বসে মদ গেলো, লজ্জা করে না?
-- সে তো তুমিও সাঁটো। তোমায় আমি বলি কিছু?
-- কোন মুখে বলবে শুনি? তার জন্যে কি তোমায় জ্বালিয়েছি কোনওদিন, নাকি পেট ব্যথায় কুঁই কুঁই করেছি?
-- ওহ, আমি তোমায় জ্বালাচ্ছি? ঠিক ঠিক। সুখনিদ্রা ভাঙাতে হল তোমার! বগাদা যাও, ডাক্তার দিদিমণিকে ওপরে দিয়ে এসো। কত ফিস্‌, জিগ্যেস করে দিয়ে দাও।
-- বলি, আমি বিদায় নিলে এই রাত্রে তোমায় দেখবে কে ? বগাদা? কল তো দিয়েছিলে ডাক্তারকে! এসেছে?
-- মরে যাই, কষ্ট পাই তাও ভালো। তোমার হাতে ট্রিটমেন্ট নেবো না আমি।
-- আদা পচলে ঝাঁজ যায় না দেখছি!
-- শোনো নমি, আমার এখন আর ঝগড়া করার প্রবৃত্তি হচ্ছে না। তুমি দয়া করে ওপরে যাও। আমার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে৷

নমিতা নিজের ব্যবহারে লজ্জা পেলেন। অনেক দিন পরে গিরীশের মুখে নিজের নামটা শুনে কেমন যেন শূন্যতা গ্রাস করতে লাগল তাঁকে। নিজেকে স্থির করে শান্ত গলায় বললেন, তোমার কাছে ইঞ্জেকশন আছে, নাকি ওপর থেকে আনাবো?
-- তোমার হাতে ইঞ্জেকশন নেবো না আমি। মিউমিউ করে উঠলেন গিরীশ।
-- লক্ষ্মী, যা তো, ওপর থেকে আমার ওষুধের বাক্সটা নিয়ে আয়।

ব্যথা আর ঘুমের ইঞ্জেকশন রেডি করে নমিতা এসে দাঁড়ালেন গিরীশের খাটের পাশে। তাঁকে দেখেই ছেলেমানুষের মত খাটের এপাশ থেকে ওপাশে নাগালের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করে যেতে লাগলেন গিরীশ।
-- বগাদা, তুমি শক্ত করে পা দুটো ধরো, লক্ষ্মী তুই হাত দুটো চেপে ধর দেখি!
মৃদু প্রতিরোধ ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে এল। আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়লেন গিরীশ। নমিতা দেখলেন, সেই একই রকম ছেলেমানুষ, গোঁয়ার অথচ বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার যুবক শুয়ে আছে খাটে। শুধু ঝাঁকড়া চুল তার কোনও স্মৃতি রাখেনি আশেপাশে। এই ফ্রেমটুকু ধরে রাখার মত কোনও ওষুধ যদি জানা থাকত তাঁর!

Address

Calcutta Bara Bazar

Telephone

+917980758080

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Dr Pulak Kanti Kar posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Practice

Send a message to Dr Pulak Kanti Kar:

Share

Share on Facebook Share on Twitter Share on LinkedIn
Share on Pinterest Share on Reddit Share via Email
Share on WhatsApp Share on Instagram Share on Telegram

Category