04/04/2022
আমার #টেলিফোনে_চিকিৎসা_নয় পোস্টে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছিলেন..
১.
আগেকার ডাক্তার নাড়ি টিপেই সব বলে দিতেন, এখন ডাক্তাররা কমিশনের লোভে ফালতু টেস্ট করতে দেন।
২.
ডাক্তারের ভিজিট বেশি
৩.
ডাক্তার ফোন নম্বর দেন না। ফোনে কিছু বলতে চান না।
*********
সেই প্রসঙ্গে..
সবার প্রশ্নের উত্তর একসাথে দিই..প্রত্যেকটা শব্দ ধরে উত্তর দেবো
১.
'আগের দিন' মানে কতদিন আগে? কোন সাল থেকে এই অধঃপতন শুরু? বাঙালির এই অতীতবিলাস সর্বজনবিদিত। আগেকার দিন মানে যদি স্বাধীনতার সময় ধরি, তখন দেশের গড় আয়ু ছিল ৩২ বছর। গ্রাম-শহর মারী আর মড়কে উজাড় হয়ে যেতো। প্রসূতি মৃত্যু, নবজাতক মৃত্যু, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, টিকাকরণ, পুরিয়া আর জড়িবুটি রাজত্ব.. ইত্যাদি সবেতেই উন্নতি হয়েছে নিন্দুকেও স্বীকার করবেন। দেশের গড় আয়ু দ্বিগুণ।
২.
আগেকার ডাক্তারদের সাথে তুলনাটা হাস্যকর। তাঁরা তাঁদের সময়ের সীমিত সুযোগে নিশ্চয়ই নিজেদের মতো করে চেষ্টা করেছেন কিন্তু এটা স্বীকার করতে কোনও দ্বিধা নেই কিছু সমালোচনা সত্ত্বেও আজকের পরীক্ষানিরীক্ষা নির্ভর 'এভিডেন্স বেজড মেডিসিন' ওই নাড়ি টেপা ডাক্তারির চেয়ে অনেক বেশি আধুনিক, নিখুঁত ও কার্যকরী।
৩.
সমাজ একটি পচনশীল আমের ঝুড়ি। পচা আমের কেউ শিক্ষক, কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ পুলিশ, কেউ আইনজীবী, কেউ চাকুরিজীবী। কাজেই বেছে বেছে 'ডাক্তার' নামক পচা আমগুলির দিকে আঙুল তোলা মানায় না। পুরো সমাজ যেখানে পচছে সেখানে ডাক্তারদেরও একটা অংশ পচেছে। এটা অস্বীকার করার কোনও ইচ্ছে আমার নেই।
৪.
আপনার পাড়ায় রতন দা যে চিকেন ১০০ টাকায় দেন ওটাই কে.এফ.সি ৫০০ টাকায় দেয়। আপনার পছন্দ না হলে এড়িয়ে যান না.. গ্রাহক না থাকলে কে.এফ.সি-র ব্যবসা এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। বিনে পয়সায় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিন।
৫.
টেস্ট করা অনেক সময়েই ডাক্তারের নিজের পশ্চাৎদেশ সুরক্ষিত করার জন্য। আদালত ডাক্তারের চোখের দেখা আর নাড়ি টেপা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে দেওয়া চিকিৎসা বোঝে না। আদালত প্রমাণ বোঝে। খাতা-কলম বোঝে।
৬.
ফোন নম্বর দেওয়া কিংবা ফোনে পরামর্শ দেওয়া ডাক্তারের অবশ্যপালনীয় কর্তব্য নয়। বাধ্যবাধকতাও নয়। বরং, এটা আইনত নিষিদ্ধ। যে ডাক্তার ফোনে পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি নিজের 'পশ্চাৎদেশের পরলোকগমন'-এর ঝুঁকি নিয়েই বাড়তিটুকু দিচ্ছেন। এটা উচিতও নয়, স্বাভাবিকও নয়।
৭.
নাড়ি টেপা ডাক্তার এখনও পাওয়া যায়। আপনি সেসব পুরিয়া বা জড়িবুটিওয়ালার কাছেই নিজের স্বাস্থ্যের দায়িত্ব সঁপে দিন না..
৮.
আপনার ভাষায় সেই 'আগেকার ডাক্তার' সব আধুনিক চিকিৎসা করার সুযোগ পেয়েও নাড়ি টিপে চিকিৎসা করতেন এমন নয়। তাঁরা সেই সুযোগ পান নি। বিজ্ঞান এগোচ্ছে। আপনার হাতে ক্যালকুলেটর থাকলে আপনি পাঁচ সংখ্যার গুণ করতে যাবেন না। তাতে সময়ও নষ্ট আর ভুলেরও সম্ভাবনা বেশি। আর ডাক্তারিতে 'ভুল' মানে..
৯.
আগেকার খুব প্রবাদপ্রতিম ডাক্তারও টাইম-মেশিনে আজকের দিনে চলে এলে তাঁকেও আধুনিক ডাক্তারির অনেকটাই নতুন করে শিখতে হবে। ডাক্তারি দ্রুত পরিবর্তনশীল বিজ্ঞান। এটা গুরুদেবের বাণী নয়। কাজেই আজকের চিকিৎসা ৫০ বছর বাদে আমূল বদলে যাবে এটাই স্বাভাবিক।
১০.
'সেবা' একটি কুৎসিত প্রথা। 'সেবা' দিয়ে কোনোদিন সমাজের প্রকৃত উন্নতি হয়নি। 'সেবা' ঘায়ের কারণ না খুঁজে ঘায়ে খানিক মলম লাগিয়ে দেয়। তাতে যারা ঘা করে তাদের নোংরামি ঢাকা পড়ে যায়। জনগণের স্বাস্থ্যের দায়িত্ব ডাক্তারের ব্যক্তিগত দায় নয়। সভ্য দেশে জনগণের স্বাস্থ্যের দায়িত্ব সরকারের। আধুনিক চিকিৎসা ব্যয়বহুল কিন্তু সেই ব্যয় বহন করার কথা সরকারের। দেশে জিডিপির মাত্র এক শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে খরচ হয়। প্রশ্নটা সেখানে তুলুন। এক টাকা ভিজিট নেওয়া ডাক্তার নিশ্চয়ই ব্যক্তিগত স্তরে মহানুভব কিন্তু শুনতে খারাপ লাগলেও ঘটনা হচ্ছে, এই বিক্ষিপ্ত মহানুভবতা সরকারকে 'সবার জন্য স্বাস্থ্য'র দায়িত্ব নিতে বাধ্য করা থেকে অব্যাহতি দেয়। আর আপনার মতো লোকজন ভাবতে আরম্ভ করেন ডাক্তারের বুঝি এক টাকাতেই চিকিৎসা করা উচিত।
১১.
শেষে আইনের কথা বলি, কনজিউমার প্রোটেকশন অ্যাক্ট অনুযায়ী আপনার স্বাস্থ্য একটি পণ্য। আইন বলছে, আমি নয়। হয় আইনের বিরোধিতা করুন নতুবা পণ্যায়িত স্বাস্থ্যের ধারণা মেনে নিন। সি.পি.এ মানি আবার চিকিৎসাকে 'সেবা' মানি.. এটা দ্বিচারিতা। স্বাস্থ্য 'সেবা' নয়, পরিষেবা।-collected