29/11/2025
বায়োপসি রিপোর্ট হাতে পেলেন ক্যান্সার?? এখন কী করবেন?
জেনে নিন প্রখ্যাত মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট, ডাঃ রাজীব ভট্টাচার্য্যের কাছ থেকে.
“আপনার ক্যান্সার ধরা পড়েছে”—এই কথাটা শোনার মুহূর্তে মনে হয় পৃথিবী থমকে গেল। বুকের ভেতর চাপা ভয়, অসহায়তা, চোখে অন্ধকার—সব একসঙ্গে নেমে আসে। খুব স্বাভাবিক। কারণ ক্যান্সার শব্দটার সাথেই আমাদের মনে এক অদৃশ্য আতঙ্ক জড়িয়ে আছে।
কিন্তু সত্যিটা হলো—ক্যান্সার মানেই শেষ নয়। বরং আধুনিক চিকিৎসার যুগে এটা অনেক সময়ই একটি চিকিৎসাযোগ্য, নিয়ন্ত্রিত, এমনকি সম্পূর্ণ সেরে ওঠার মতো রোগ।
অনেকেই বলেন—বায়োপসি রিপোর্ট হাতে পাওয়ার মুহূর্তটাই সবচেয়ে দুশ্চিন্তার। রিপোর্ট খুলে দেখলেই মাথার ভেতর হাজারটা প্রশ্ন ঘুরতে থাকে—“এখন কী? কার কাছে যাব? কোন পরীক্ষা লাগবে? অপারেশন কি দরকার?”
এ রকম ভয় খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু একটু ধীরে, একটু ঠান্ডা মাথায় এগোলে পরের পথটা অনেক সহজ হয়ে যায়।
নীচে খুব সহজ ভাষায় বলা হলো—বায়োপসি রিপোর্ট পাওয়ার পর কী করবেন।
১. নিজের থেকে রিপোর্ট ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবেন না
রিপোর্টে অনেক জটিল শব্দ থাকে—carcinoma, grade, receptor, margin, infiltration ইত্যাদি। এগুলোর মানে জানলে রোগ নির্ণয় হয় না, আর ভুল বোঝার সম্ভাবনা থাকে।
রিপোর্ট দেখে মনে আতঙ্ক বাড়ানোর দরকার নেই। এটা একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারই ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
২. দ্রুত একজন অনকোলজিস্টের কাছে যান
বায়োপসি রিপোর্ট যদি ক্যান্সার নির্দেশ করে, তাহলে প্রথম কাজ—একজন মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট বা সার্জিক্যাল অনকোলজিস্টের কাছে যাওয়া।
যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের কাছে পৌঁছবেন, তত তাড়াতাড়ি সঠিক স্টেজিং ও চিকিৎসা শুরু হবে।
৩. স্টেজিং টেস্টগুলো সম্পূর্ণ করুন
বায়োপসি শুধু বলে—রোগটা কী।
কিন্তু রোগটা কতদূর ছড়িয়েছে সেটা জানার জন্য করতে হয়— • CT scan,• PET-CT,• MRI,• রক্ত পরীক্ষা, এগুলো রোগের “স্টেজ” নির্ধারণ করে। স্টেজ না জানা পর্যন্ত চিকিৎসা শুরু করা উচিত নয়।
৪. টিউমার বোর্ডে মূল্যায়ন খুব গুরুত্বপূর্ণ
টিউমার বোর্ড মানে একদল বিশেষজ্ঞ—মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট, সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট, রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট, প্যাথোলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট—মিলে বসে সিদ্ধান্ত নেয় কোন চিকিৎসা পথ সবচেয়ে ভালো।চিকিৎসার প্রথম দিনেই বহু ভুল এভাবেই ধরা পড়ে।
যে হাসপাতালে ভালো টিউমার বোর্ড আছে, সেখানে চিকিৎসা নিলে রোগীর লাভ অনেক বেশি।
৫. চিকিৎসার পরিকল্পনা তৈরি করুন
স্টেজিংয়ের পর ডাক্তার ঠিক করবেন— • আগে অপারেশন হবে,• নাকি আগে কেমো/ইমিউনোথেরাপিl• রেডিয়েশন কি দরকার?• টার্গেটেড থেরাপি/ADC লাগবে কি না - প্রতিটি রোগীর চিকিৎসা আলাদা—একজনের চিকিৎসা আরেকজনের সঙ্গে মিলবে না।
৬. দ্বিতীয় মতামত চাইলে নিন
বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে দ্বিতীয় মতামত নেওয়া ভুল নয়।
কিন্তু চিকিৎসা শুরু করতে দেরি করবেন না—দ্বিতীয় মতামত শোনার পর দ্রুত সিদ্ধান্ত নিন।
৭. গুগলে না ঘেঁটে ডাক্তারকে প্রশ্ন করুন
অনেকেই গুগল সার্চ করে ভয় পেয়ে যান।
মনে রাখবেন—ইন্টারনেট সাধারণ তথ্য দেয়, আপনার ব্যক্তিগত রোগের বাস্তব চিত্র নয়।
সব প্রশ্ন ডাক্তারকে বলুন। সত্যি, পরিষ্কার, বিজ্ঞানসম্মত উত্তর পাবেন।
শেষ কথা
বায়োপসি রিপোর্ট মানেই ভয় নয়—এটা একটা শুরু।
যেমন রোগ নির্ণয় হয়েছে, তেমনই পরিষ্কার চিকিৎসার পথও তৈরি হবে।
সঠিক চিকিৎসক, সময়মতো পরীক্ষা, টিউমার বোর্ডের মতামত—এসব মিললেই রোগী সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা পান।
সবচেয়ে বড় কথা—
রোগী কখনই একা নন।
পরিবার, চিকিৎসক, নার্স, কাউন্সিলর, বন্ধু—সবার সম্মিলিত ভালোবাসা আর সমর্থন ক্যান্সারের যুদ্ধে দারুণ শক্তি দেয়। একজনের ওপর একজনের ভরসা এই যাত্রাকে অনেক সহজ করে।
তাই ক্যান্সার ধরা পড়লে প্রথমেই মনে রাখুন—
বায়োপসি রিপোর্ট কোনো সমাপ্তি নয়।
এটা একটা চ্যালেঞ্জ, যার মোকাবিলা করা যায়।
আজকের বিজ্ঞান আর চিকিৎসা প্রতিদিনই নতুন নতুন দরজা খুলছে।
আশা রাখুন।
ঠিক সময়ে চিকিৎসা নিন।
আর বিশ্বাস রাখুন—ক্যান্সারকে হারানো যায়।