25/11/2025
খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা Dr Indranil Saha r wall থেকে share করলাম
আপনার প্রথম সন্তান অটিস্টিক। আপনি কী দ্বিতীয় সন্তানের কথা ভাবছেন?
আমরা জানি অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার একটি স্নায়ু বিকাশ জনিত সমস্যা। বাবা মায়ের জিন ও পরিবেশ দুটোই এর ওপর প্রভাব ফেলে। স্ট্যাটিসটিক্স বলছে ভারতবর্ষে এখন অটিজম প্রভাবিত বাচ্চা ১০০ জনের মধ্যে একজন থেকে ৬৮ জনের মধ্যে একজন হতে পারে এবং ভারতবর্ষে প্রায় ১ কোটি ৮০ হাজার লোকে অটিজম স্পেক্ট্রাম এর মধ্যে পড়েন।
যদি কোন দম্পতির একটি বাচ্চা অটিজম প্রভাবিত হয় তখন ইচ্ছা থাকলেও তারা দ্বিতীয় সন্তান নিতে ভয় পান। তাদের মনে নানা প্রশ্ন আসে, সবচেয়ে প্রথম প্রশ্নটা হল পরের বাচ্চার অটিজম হওয়ার সম্ভাবনা কতখানি? যদি প্রথম বাচ্চা অটিজম প্রভাবিত হয় দ্বিতীয় বাচ্চার অটিজম হবার সম্ভাবনা প্রায় ১০ থেকে ২০%। কিছু রিসার্চ বলছে প্রথম সন্তান যদি মেয়ে হয় এবং তার যদি অটিজম থাকে তাহলে দ্বিতীয় সন্তানের অটিজম হবার সম্ভাবনা আরেকটু বেশি।যদি বাবা-মা কারোর মধ্যে অটিজম ট্রেট থাকে তাহলেও এই সম্ভবনা বাড়বে। ২০২১ এ কার্টিন ইউনিভার্সিটি থেকে বেরোনো একটি রিসার্চ পেপার দেখিয়েছে প্রথম বাচ্চা অটিস্টিক হলে, দুটো সন্তানের জন্মের মধ্যে যদি ব্যবধান আড়াই থেকে তিন বছর থাকে তাহলে অটিজমের সম্ভাবনা কম যদি এই ব্যবধান এক বছরের কম বা ৫ বছরের বেশি হয় তাহলে সম্ভাবনা বাড়তে পারে।
বাবার বয়স যদি ৪০ এর উপরে হয় তাহলে শুক্রাণুর মধ্যে কিছু জেনেটিক পরিবর্তন হয় যা অটিজম হবার সম্ভাবনা বাড়ায়। মায়ের বয়স ৩৫ এর উপরে হলে সন্তানের অটিজম সম্ভাবনা সামান্য বাড়তে পারে। কিছু রিসার্চ বলছে প্রেগনেন্সির সময় মায়ের যদি ডায়াবেটিস , ব্লাড প্রেসার বাড়ে, ওজন বেশি থাকে, থাইরয়েডের সমস্যা থাকে অথবা প্রেগনেন্সির সময় মায়ের রুবেলা সাইটোমেগালো ভাইরাস বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ইনফেকশন হয় তাহলে বাচ্চার অটিজম হবার সম্ভাবনা থাকতে পারে। বাচ্চার যদি ৩৭ সপ্তাহের আগে জন্ম হয় ওজন আড়াই কেজির কমে হয় অথবা জন্মের পরে অক্সিজেন ের অভাব ঘটে তাহলে অটিজমের সম্ভাবনা বাড়ে। কিন্তু নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসার আগে এই বিষয়গুলো নিয়ে আরো রিসার্চ দরকার। তাই হবু বাবা-মা অযথা ভয় পাবেন না।
কিছু ভুল ধারণা অনেকের মধ্যে আছে যেমন ছোটবেলায় বাচ্চা ভ্যাকসিন নিলে অথবা বাবা-মা বাচ্চার যত্ন ঠিকঠাক না নিলে বাচ্চার অটিজম হয়, এটা ঠিক নয়।
প্রেগনেন্সি নেওয়ার আগে আপনার গাইনোকলজিস্ট এর সাথে কনসাল্ট করুন এবং তিনি যদি বলেন একজন জেনেটিক কাউন্সিলরের পরামর্শ নিন। বাবা মায়ের ফ্যামিলি হিস্ট্রি এবং অন্যান্য হিস্ট্রি নিয়ে তারা জেনেটিক টেস্টিং রিকমেন্ড করতে পারে যেমন chromosomal microarray,fragile X syndrome , whole exam sequencing বা autism panel testing।
প্রেগনেন্সির সময় আল্ট্রাসাউন্ড বা কোন রক্ত পরীক্ষা করে ধরা যায় না বাচ্চা অটিজম হতে পারে কিনা।
প্রেগনেন্সির প্ল্যান করলে আপনার ওজন জন্য বেশি না থাকে, ফলিক এসিড এবং ভিটামিন ডি খান। অনেক হবু মাযের দ্বিতীয় প্রেগনেন্সির সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়ে যায় এবং বয়স বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে বয়স সংক্রান্ত যদি কোন কম্প্লিকেশন থাকে যেমন ডায়াবেটিস,ব্লাড প্রেসার সেগুলো কন্ট্রোলে রাখতে হবে। মায়ের বয়স বাড়লে মিসক্যারেজের চান্স বাড়ে অথবা সময়ের আগে বাচ্চা হওয়া, সিজারিয়ান সেকশন হওয়া সেগুলোকে মাথায় রাখতে হবে।
দ্বিতীয় বাচ্চা নেবার আগে আপনাকে ভাবতে হবে যে আপনারা শারীরিক মানসিক এবং আর্থিকভাবে দ্বিতীয় বাচ্চা নিতে প্রস্তুত কিনা। প্রথম সন্তানের যত্ন এবং তার পরিচর্যা কিভাবে করবেন এ বিষয়ে প্ল্যান করে নিন। অনেক বাবা মা এই ভেবে দ্বিতীয় সন্তান নেন যে তারা যখন থাকবেন না তখন এই দ্বিতীয় সন্তান প্রথম সন্তানটিকে দেখবে। এতে অনেক সময় একটা নিশ্চিন্ত বোধ কাজ করে আবার অনেক সময় একটা অপরাধ বোধেরও জন্ম নেয় যে দ্বিতীয় বাচ্চাকে সারা জীবনের জন্য একটা দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া দেখা গেছে যাদের প্রথম সন্তান অটিস্টিক সেই বাবা মায়ের মধ্যে স্ট্রেস অ্যাংজাইটি এবং ডিপ্রেশনে বেশি এবং অটিস্টিক সন্তানকে নিয়ে দাম্পত্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যদি আপনাদের কোন রকম মানসিক সমস্যা দেখা দেয় তাহলে দ্বিতীয় সন্তান নেবার আগে সাইকোলজিকাল কাউন্সিলিং বা কোন সাইকিয়াট্রিস্টের সাথে দেখা করতে পারেন। যারা আপনার মত এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গেছেন বা যাচ্ছেন যদি তাদের সাথে কথা বলেন অনেক সময় দেখা যায় অনেক সমস্যার সমাধান আপনারা পেয়ে যাবেন এবং অনেক জোর পাবেন যে আপনারা একা নয়।
আমরা যদি সবাই সবার পাশে থাকি তাহলে আমরা এবং আমাদের বাচ্চারা এক সুন্দর পৃথিবীতে বাস করব