07/10/2025
এবার পূজোর সময় কোলকাতার বাইরে যাওয়ার কোন পরিকল্পনা ছিল না । তাই যখন আমার এক কাকু বললেন গৌরহাটি রামকৃষ্ণ মঠে চলে আসতে আমি রাজি হয়ে গেলাম । কাকু ও কাকিমা দুদিন আগে থেকেই সেখানে ছিলেন । দশমীর দিন সকালে সাড়ে আটটা নাগাদ বেড়িয়ে পড়লাম । ভারী বৃষ্টির একটা পূর্বাভাস ছিল । মেঘলা আকাশ , মাঝে মাঝে বৃষ্টি , বেশ ভালোই লাগছিল ।
দ্বিতীয় হুগলি সেতু পার হওয়ার সময় মেঘের ঘনঘটা দেখলাম । চেনা পেট্রোল পাম্পে তেল ভরে রওনা দিলাম ডানকুনির উদ্দেশ্যে । ডানকুনি পার হয়ে কিছু দুর যাওয়ায় পর বাঁদিকে বারুইপাড়ার রাস্তা ধরলাম । এই রাস্তা ধরার উদ্দেশ্য ডানকুনি , মশাট এর ভিড় এড়ানো । কিন্ত্ত এই রাস্তায় এসে বারুইপারার রেলগেটে আটকে গেলাম । তার সাথে প্রচণ্ড বৃষ্টি । রেলগেট খুলতেই রাওনা দিলাম ।
এই রাস্তা আহাল্লাবাই রোডের গিয়ে পড়ল । যা কিনা আরামবাগ যাওয়ার সোজা রাস্তা । কিছুদূর যাওয়ার পর মুন্ডেশ্বরী নদী পড়ল । এখানে একদম বৃষ্টি ছিল না । নদী জলে টইটম্বুর । আরো কিছুটা এগিয়ে পরশুরা পার করে চাপাডাঙ্গা । এখান থেকে আমরা বাঁদিকে গেলাম । সোজা আরামবাগ । কিছুটা এগিয়ে আমরা বন্দরের রাস্তায় পড়লাম । আর পাঁচ ছয় কিলোমিটার যেতেই পৌঁছে গেলাম গৌড়হাটি রামকৃষ্ণ মঠে । বাড়ি থেকে একশো আট কিলোমিটার রাস্তা । পৌঁছলাম পৌনে এগারোটা নাগাদ ।
প্রথম দর্শনেই এই ছোট মঠকে ভালবেসে ফেললাম । ঢোকার রাস্তার দুপারে হলুদ এলামুন্ডা ফুলের সারি । তার পর প্রশস্ত মাঠ ও তার পর রামকৃষ্ণ মন্দির । মন্দিরের বাঁদিকে পুকুর । ডানদিকে মঠের কার্যালয় , সাধু আবাস , ফুলের বাগান । পিছনে খাবার জায়গা । বাঁদিকে পুকুরের পারে অবৈতনিক জুনিয়র স্কুল , দাতব্য চিকিসালয় এবং অতিথিশালা ।
এই অতিথিশালায় আমাদের থাকার ব্যবস্থা । বড় ঘর । অনায়াসে ছয় জন থাকতে পারে । পাখা আছে । শীততাপনিয়ন্ত্রিত নয় কিন্ত্ত । স্নানাগার সাধারণ কিন্ত্ত পরিষ্কার । আমি যেহেতু রামকৃষ্ণ মিশনে পড়েছি আমার কাছে এই ব্যবস্থা যথেষ্ট । আমাদের সময় মিশনে পাখাও ছিল না ।
দুপুর বারোটায় দুপুরের খাবার অর্থাৎ প্রসাদ । তাই হাত মুখ ধুয়ে খাবার ঘরের দিকে গেলাম । সাধারণ বেঞ্চ আর বসার জায়গা । এক বেঞ্চে তিন জন বসতে পারে । অনেক বছর পর কোন রামকৃষ্ণ মঠ মিশনে এলাম । তাই কিছুটা আবেগপ্রবণ । মন্ত্র পড়ে খাওয়া শুরু । বৃহস্পতিবার নিরামিষ । ডাল, ভাত , কাচুমাখা , পাঁচমিশালি তরকারি , টক দই , বোদে , ঠাকুরের ফল প্রসাদ । খুবই তৃপ্তি করে প্রসাদ গ্রহণ করলাম । থালা বাটি রাখার জায়গায় যে যার মত রেখে দিল । হাত ধোয়ার পরিষ্কার জায়গা । বাইরে তখন জোরে বৃষ্টি পড়ছে । একটু দাড়িয়ে গেলাম ।
দুপুরে একটু বিশ্রাম নিলাম । সামনের রাস্তায় পায়চারি করলাম । হালকা বৃষ্টি ছিল । চারটে নাগাদ চা পানের সময় । পাঁচটা নাগাদ আমরা গৌড়হাটী বাজারে গেলাম । কেক , বিস্কুট , মিষ্টি কেনা হল। আর এক রাউন্ড চা ।
ছয়টার সময় রামকৃষ্ণ মন্দিরে সান্ধ্য আরতির জন্য এলাম । অনেক দিন পর খন্ডন ভব বন্ধন গানের সাথে সুর মেলালাম । আরো গান গাওয়া হলো । মনে একটা প্রশান্তি ভাব অনুভূত হল । আমি আবেগে ভাসছিলাম । অনেক দিন পর তো । পুরোনো স্মৃতি ।
কিছুক্ষণ গল্প করলাম । নয়টায় রাতের খাবার । ডাল , ভাত , পটলের ও কুদলির তরকারি । আর জিলিপি ।
খাওয়া শেষে মঠের মধ্যে একটু পায়চারি । দশটা নাগাদ ঘুমিয়ে পড়লাম ।
রাতে ভাল বৃষ্টি হয়েছে । সকালে উঠে স্নান সেরে নিলাম । সাতটায় প্রাতরাশ । মুড়ি , তারকা , বোদে , চা , বিস্কুট । মন্দ নয় । বেড়িয়ে দেখি স্কুলে বাচ্চারা চলে এসেছে । ক্লাস হচ্ছে । সাড়ে নয়টা অবধি । চিকিৎসালয় আজ বন্ধ । হয়ত পরে খুলবে । নয়টা নাগাদ আমরা রামকৃষ্ণদেবকে প্রণাম জানিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম । নিয়ে এলাম এক অপার সুখস্মৃতি ।